আজ- ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বুধবার  সকাল ১১:২৬

টাঙ্গাইলে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী ‘জামাইমেলা’ সম্পন্ন

 

দৃষ্টি নিউজ:

টাঙ্গাইলে তিনদিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী ‘জামাই মেলা’র শনিবার আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি হয়েছে। তবে এ মেলা অনানুষ্ঠানিকভাবে আরো ৬-৭দিন চলবে। গত বৃহস্পতিবার(২৫ এপ্রিল) শুরু হয়ে শনিবার পর্যন্ত তিনদিন ব্যাপী এ মেলা চলে।
যুগ যুগ ধরে চলে আসা সংস্কৃতির সাথে মিশে আছে বাঙালির প্রাণ। তারই ধারাবাহিকতায় শত বছর ধরে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার রসুলপুর গ্রামে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী ‘জামাইমেলা’। এ মেলাকে কেন্দ্র করে এলাকায় উৎসবের আমেজ বিরাজ করে। মেলায় দূর- দূরান্ত থেকে জামাইয়েরা আসেন। মেলাকে সামনে রেখে ছোট ছেলে-মেয়েদের জন্য আয়োজন করা হয় নানা বিনোদন ব্যবস্থার। মেলায় থাকে ছোট-বড় প্রচুর স্টল, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, কসমেটিকস, খাবারের দোকান। ঐতিহ্যবাহী এ মেলায় ব্যবসা করতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা হুমরি খেয়ে পড়েন।
প্রতিবছর বৈশাখের ১১, ১২ ও ১৩ তারিখ(সনাতন পঞ্জিকা অনুসারে) টাঙ্গাইলের সদর উপজেলার রসুলপুর বাছিরন নেছা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এ মেলার আয়োজন করা হয়। তিনদিনে রসলপুরসহ আশেপাশের অন্তত ৩০টি গ্রামের লাখো মানুষের সমাগম ঘটে মেলায়। জামাইমেলা নামকরণ সম্পর্কে রসুলপুরের অনেকেই বলেন, এ মেলাকে কেন্দ্র করে এলাকার সব মেয়ের বর শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে আসেন, তারাই মেলার মূল আকর্ষণ এ কারণেই মেলাটি জামাইমেলা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন দোকানীরা দেদার জিনিসপত্র বিক্রি করছেন, অপরদিকে ক্রেতারা তা কিনছেন। এছাড়া মেলায় মিষ্টি জাতীয় দোকানের সংখ্যা বেশি লক্ষ করা গেছে। মেলায় বিভিন্ন রকমের জিনিসপত্র ওঠেছে। মেলায় টাঙ্গাইল জেলায় বিভিন্ন জেলার লোকজনকে দেখা যায়। বড়দের পাশাপাশি ছোট ছেলে মেয়েরা এ মেলা উপভোগ করছেন।
রসুলপুরের বাসিন্দা কথাসাহিত্যিক রাশেদ রহমান বলেন, ‘এই মেলার উৎপত্তি কবে সেটা কেউ জানে না। যুগ যুগ ধরে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এই এলাকার মানুষের কাছে ঈদ আর পূজা-পার্বনের থেকেও এই মেলা বেশি উৎসবের। মেলাটি বৈশাখী মেলা হিসেবে ব্রিটিশ আমলে শুরু হলেও এখন এটি জামাইমেলা হিসেবে পরিচিত। মেলাকে সামনে রেখে রসুলপুর ও এর আশেপাশের বিবাহিত মেয়েরা তাদের বরকে নিয়ে বাবার বাড়ি চলে আসেন। আর মেয়ের জামাইকে মেলা উপলক্ষে বরণ করে নেবার জন্য শ্বশুর-শাশুড়িরা বেশ আগে থেকেই নানা প্রস্তুতি নেন। মেলার দিন জামাইয়ের হাতে কিছু টাকা তুলে দেন শাশুড়িরা। আর সেই টাকার সাথে আরও টাকা যোগ করে জামাইরা মেলা থেকে চিড়া, মুড়ি, মুড়কি, আকড়ি, মিষ্টি, জিলাপিসহ বিভিন্ন জিনিস কিনেন।’
মেলায় আসা মো. আজিজ নামে এক বৃদ্ধ বলেন, জন্মের পর থেকেই আমি এ মেলা দেখে আসছি। এটি জামাই মেলা হিসেবে অনেক পরিচিত। শ্বশুররা এ মেলা উপলেক্ষে জামাইদেরকে টাকা দেয়, আর জামাইয়ার এর সাথে কিছু টাকা যোগ করে মেলা থেকে বিভিন্ন কিছু কিনে। আমরা একটি মেয়ে রয়েছে, তাকে বিয়ে দিয়েছি। মেয়ের জামাই দাওয়াত পেয়ে মেলা দেখতে এসেছেন।
রসুলপুর গ্রামের হামিদ মিয়া নামে এক জামাই বলেন, আমি প্রতিবছরই এই মেলায় এসেছি। মেলায় এসে আমার খুব ভালো লাগছে। শ্বশুর বাড়ির লোকজন আমাদেরকে দাওয়াত দেন। তখন আমরা আসি।
সিরাজগঞ্জ থেকে আসা মানিক মিয়া নামে এক আকড়ি ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমি এই মেলায় প্রায় ১৫ বছর ধরে আসছি। এখানে বিক্রি করে আমি লাভবান হই। এই মেলাটি জামাই মেলা হিসেবে পরিচিত। এবার প্রায় ৫০মন আকড়ি নিয়ে এসেছিলাম। বেশির ভাগই বিক্রি হয়েছে, আশা করছি লাভবান হব। গত বছর মেলায় এক লাখ টাকার মত বিক্রি হয়েছিল। আর এতে প্রায় ২৫ হাজার টাকার মত লাভবান হয়েছিলাম।’
অজিত দাস নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, আমি বিভিন্ন স্থানে মেলায় যাই। তবে বিগত ১২ বছর ধরে রসুলপুরের জামাইমেলায় আসছি। আসার সংসারের যাবতীয় খরচ এর উপর নিভর করে। মেলার কমিটির লোকজন আমাদের বিভিন্নভাবে সহযোগীতা করেছেন।
এ ব্যাপারে রসুলপুরের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নবপ্রজন্ম সাহিত্য গোষ্ঠীর সভাপতি মারুফ রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মোবাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের এই মেলা ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। এই মেলাকে কেন্দ্র করে দারুণ একটা প্রাণচাঞ্চলের সৃষ্টি হয়। আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করি। এ কাজ করে আমরা প্রচুর আনন্দ পাই।’
মেলার আহ্বায়ক ফজলুল হক বলেন, ‘আমাদের এ মেলায় প্রায় ছোট বড় মিলিয়ে তিন শতাধিক দোকান বসেছিল। এই মেলা টাঙ্গাইল জেলার মধ্য ঐতিহ্যবাহী মেলা। এই মেলায় শুরু হওয়ার আগেই গ্রামের জামাই এবং বউয়েরা আসেন। তারা বিভিন্নভাবে মেলা উপভোগ করে থাকেন। এটি জামাই মেলা হিসেবে পরিচিত। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও মেলা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ায় তিনি খুশি।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno