আজ- ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শনিবার  সন্ধ্যা ৬:১০

টাঙ্গাইল পৌরসভায় অটোরিকশার লাইসেন্স ফি লাখ টাকা!

 

দৃষ্টি নিউজ:

টাঙ্গাইল পৌরসভায় ১০ হাজার ৫০০টাকা অটোরিকশার লাইসেন্স ফি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে লাখ টাকা আদায় করা হচ্ছে। ফলে সিন্ডিকেট কোটি কোটি টাকার ‘অর্থবাণিজ্য’ করে অবৈধ অটোরিকশাকে বৈধতা দিচ্ছে।

পৌরসভার নির্ধারিত ফি ১০ হাজার ৫০০ টাকা হলেও প্রতিটি অটোরিকশার প্লেট দিতে ৮০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে এক লাখ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে। এতে আগের চেয়ে আরো এক হাজার অটোরিকশা বেড়ে শহরের যানজটের সৃষ্টি করছে।

জানা যায়, টাঙ্গাইল শহরে দিন দিন ব্যাটারি চালিত অটোরিকশার সংখ্যা বাড়ছে। টাঙ্গাইল পৌর এলাকা অতিরিক্ত অটোরিকশার চাপে যানজটের শহরে পরিণত হয়েছে। এছাড়া ইজিবাইকের বেপরোয়া চলাচল ও চালকের অদক্ষতার কারণে দুর্ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক হয়ে দাঁরিয়েছে।

যানজটের চরম ভোগান্তি ও দুর্ভোগ থেকে শহরবাসীকে রেহাই দিতে ২০১৮ সালের এপ্রিল মাস থেকে তিন হাজার অটোরিকশাকে দুই শিফটে ভাগ করে দেওয়া হয়। এক হাজার পাঁচশ অটোরিকশাকে লাল ও অপর এক হাজার পাঁচশ অটোরিকশাকে হলুদ রঙে চিহ্নিত করে দেওয়া হয়।

সকাল ৬ টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত এক রঙের অটোরিকশা চলবে এবং দুপুর ২ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত অপর অটোরিকশাগুলো শহরের চলাচল করবে। দুই শিফট করার পরও টাঙ্গাইল শহরে অটোজট লেগেই থাকে।

করোনা ভাইরাসের কারণে টাঙ্গাইল শহরে মানুষের যাতায়াত কমে গেছে। তাই অটোরিকশার সংখ্যাও কম। এ সুযোগে টাঙ্গাইল পৌরসভা উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগসাজস করে আরো এক হাজার অবৈধ অটোরিকশাকে বৈধতা দেওয়া সিদ্ধান্ত নেয়।

কিন্তু কোন অটোরিকশা মালিক সরাসরি নম্বর প্লেট নিতে পারবে না। কাউন্সিলর বা তাদের সিন্ডিকেটের সদস্যের মাধ্যমে ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকার বিনিময়ে সেই নম্বরপ্লেট নিতে হবে। কোন অটোরিকশার মালিককে সরাসরি নম্বর প্লেট দেওয়া হয়না।

পৌরসভার একটি সূত্র জানায়, এক হাজার অটোরিকশার নম্বর প্লেট স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার মাঝে বণ্টন করে দেওয়া হয়। এর মধ্যে পৌরসভার কয়েকজন কাউন্সিলর ও একজন প্যানেল মেয়রও রয়েছেন।

ওই প্যানেল মেয়রের মাধ্যমেই বেশিরভাগ নম্বর প্লেট বিতরণ করা হয়। আবার তিনি নিজেই তার সহযোগীদের দিয়ে সেগুলো বিক্রি করে যাদের নামে বরাদ্দ তাদের কাছে টাকা পৌঁছে দেন।

টাঙ্গাইল ট্রাফিক পুলিশের একজন সার্জেণ্ট জানান, দিন দিন শহরে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা বাড়ছে। সম্প্রতি পৌর কর্তৃপক্ষ এক হাজার অটোরিকশার লাইসেন্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

সেগুলো ৮০ হাজার টাকা থেকে এক লাখ টাকায় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়েছে। এখন করোনার কারণে সেই রেজিস্ট্রশনের মূল্য ৭০ হাজারে নেমে এসেছে। এ বিষয়ে তাদের কিছুই করার নেই। তাদের দায়িত্ব শহর যানজটমুক্ত রাখা। কিছু বলতে গেলেই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জবাবদিহী করতে হয়।

কাগমারী এলাকার অটোরিকশা মালিক সুনীল বলেন, আমি প্রতিদিন ৩০টি অটোরিকশার নম্বর প্লেট ভাড়া দেই। প্রতি প্লেট প্রতিদিনের ভাড়া ৮০-১০০ টাকা। আমার নিজের নামে কিছু আর বেশ কয়েকজনের নামে নম্বর প্লেট নিয়ে এসে ভাড়া দিয়ে থাকি। বর্তমানে পৌরসভার প্লেট পাওয়া খুব দুর্লভ বিষয়। পুরাতন প্লেটের দাম এক লাখ টাকা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে টাঙ্গাইল পৌরসভার এক কর্মচারী বলেন, সরাসরি প্লেটের জন্য গেলে পৌর কর্তৃপক্ষ প্লেট দিবে না। পৌরসভার কাউন্সিলর বা পৌরকর্তৃপক্ষের কোন কর্মকর্তার মাধ্যমে প্লেট নিতে হবে। তা না হলে বছরের পর বছর ঘুরেও নম্বর প্লেট পাওয়া যাবে না। কাউন্সিলররা তাদের ভাগের প্রতি প্লেট এক লাখ টাকা থেকে শুরু করে এক লাখ ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছেন।

৩৫৪৫ নম্বর প্লেটের মালিক মিলন নামে এক ব্যক্তি জানান, তার কাছে বেশ কয়েকটি নতুন ও পুরাতন নম্বর প্লেট রয়েছে। সেগুলো তিনি ভাড়া এবং বিক্রি করেন। তবে নতুনের চেয়ে (তিন হাজারের উপরে) পুরাতন লাইসেন্সের চাহিদা বেশি। কারণ পুরাতন লাইসেন্স (এক থেকে তিন হাজারের মধ্যে সিরিয়াল) প্রতিটি ডিজিটাল প্লেট বিক্রি হচ্ছে ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকার মধ্যে।

তিনি জানান, নতুনগুলোর দাম প্রতিটি ৬০ থেকে ৭০ হাজারের মধ্যে। তুলনামূলক কম দামের এ প্লেটগুলো এখনো ডিজিটাল প্লেট হয়নি। পৌরসভার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জোগসাজসে অতিরিক্ত এক হাজার লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে। এগুলোর কোন বৈধতা নেই। শুধু স্টিকার দিয়েই চলছে এসব অবৈধ ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা।

৩৬০১ নম্বর প্লেটের মালিক আলামিন নামে এক অটোরিকশা চালক জানান, তিনি গত ছয় মাস আগে এক লাখ টাকা দিয়ে ওই নম্বর প্লেটটি কিনেছেন। তবে তাকে এখন পর্যন্ত ডিজিটাল নম্বর প্লেট দেওয়া হয়নি।

৩২৭৭ সিরায়ালের নম্বর প্লেটটিও আরেক চালক মোসলেম উদ্দিন প্রতিদিন ৬০ টাকা করে ভাড়া দিয়ে অটোরিকশা চালাচ্ছেন।

৩৮৯৫ সিরিয়ালের মালিক সোনা মিয়া জানান, তিনি ৯৫ হাজার টাকায় এটি একজন কাউন্সিলরের মাধ্যমে কিনেছেন। এখন তিনি এটি প্রতিদিন ৬০ টাকা করে ভাড়া দিচ্ছেন। তার কাছে আরো দুইটি রয়েছে। সেগুলোও মাসিক হিসেবে ভাড়া দেয়া হচ্ছে।

টাঙ্গাইল পৌরসভার সহকারী কর আদায়কারী রনজিত চন্দ্র পাল জানান, প্রতিটি অটোরিকশার লাইসেন্স নতুন নিবন্ধন করতে হলে সরকারি ফি ১০ হাজার ৫০০ টাকা এবং নবায়ন করতে ভ্যাটসহ এক হাজার ৭২৫ টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়েছে।

তবে শহরে কতগুলো অটোরিকশা রয়েছে এবং নতুন নিবন্ধনের জন্য সরকারি ফি’র অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হচ্ছে কি না- এ বিষয়ে তিনি বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno