আজ- ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শুক্রবার  রাত ২:৪১

প্রকৌশলী দম্পতির বিরুদ্ধে দগ্ধ শিশু গৃহ পরিচারিকার চিকিৎসার দায়িত্ব না নেয়ার অভিযোগ

 

দৃষ্টি নিউজ:

টাঙ্গাইলের থানাপাড়ার প্রকৌশলী দম্পতির বিরুদ্ধে অগ্নিদ্গ্ধ শিশু গৃহপরিচারিকার চিকিৎসার দায়িত্ব না নেয়ার অভিযোগ ওরঠছে। মিনা (১২) নামে ওই শিশু গৃহ পরিচারিকার চিকিৎসা না করিয়ে নাগরপুর উপজেলার নন্দপাড়া গ্রামে তার গরিব বাবার বাড়ি রেখে কৌশলে পালিয়ে এসেছেন প্রকৌশলী দম্পতি। শিশুটি টাঙ্গাইল শহরের পৌর এলাকার থানা পাড়ায় বসবাসরত প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলামের বাসায় গৃহ পরিচারিকার কাজ করত। প্রকৌশলীর পরিবার শিশু মিনাকে তাদের সন্তানদের দেখভাল করার কথা বলে নিয়ে আসেন, কিন্তু তা না করিয়ে শিশুটিকে দিয়ে বাসার সকল কাজ করাতেন।
জানা যায়, প্রকৌশলী দম্পতির জন্য গ্যাসের চুলায় চা বানাতে গিয়ে শিশুটি আগুনে দগ্ধ হয়। দগ্ধ শিশু মিনাকে চিকিৎসা না করিয়ে নাগরপুর নন্দপাড়া গ্রামে তার গরিব বাবার বাড়ি রেখে প্রকৌশলী দম্পতি পালিয়ে যায়। এর পর থেকে মিনার বাবা কাজী আব্দুল হক তার মেয়েকে নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।
এদিকে, শিশুটির অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় স্থানান্তর করেন। কিন্তু অর্থিক অস্বচ্ছলতার জন্য শিশু গরিব বাবার বাড়িতে শুয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।
স্থানীয়রা জানায়, ২০১৮ সালের ১২ ডিসেম্বর টাঙ্গাইল সদর থানা পাড়ায় প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলামের বাসায় গ্যাসের চুলায় চা বানাতে গিয়ে আগুনে দগ্ধ হয় শিশুটি। পরে প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম গৃহ পরিচারিকা শিশু মিনাকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। মিনার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় স্থানান্তর করেন। কিন্তু প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম ও তার স্ত্রী আগুনে দগ্ধ মিনাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় না নিয়ে তার অসহায় দিনমজুর বাবার বাড়ি নাগরপুর উপজেলা নন্দপাড়া গ্রামে রেখে আসেন।
অগ্নিদগ্ধ মিনার বাবা কাজী আব্দুল হক অভিযোগ করেন, আমি দিন মজুরের কাজ করে পরিবার-পরিজন নিয়ে ভালোই চলছিলাম। আমার সংসারের অভাবের দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে আমাদের পাশের সলিল গ্রামের সাধু মিয়া আমার মেয়েকে ‘তার আত্নীয় প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলামের বাসায় গৃহ পরিচারিকার (ছেলে-মেয়ে) দেখভাল করার কাজ নিয়ে দেয়। কিন্তু ওই পরিবার আমার নাবালিকা মেয়েকে দিয়ে রান্না-বান্নার কাজ করান। এক পর্যায় সংবাদ পাই আমার মেয়ে মিনা হঠাৎ অসুস্থ্য হয়েছে। পরে আমি এবং আমার স্ত্রী মেয়ে মিনাকে দেখতে টাঙ্গাইলের থানাপাড়ার প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলামের বাসায় যাই। বাসায় গিয়ে জানতে পারি আমার মেয়ে মিনা অগ্নিদগ্ধ হয়েছে তাকে (মিনাকে) টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতালে গিয়ে দেখি আমার মেয়ে মিনা সজ্ঞাহীন অবস্থায় পড়ে আছে। সেখানে কয়েক দিন চিকিৎসার পর কর্তৃব্যরত চিকিৎসক মিনাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় স্থানান্তর করেন। পরে প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম কৌশলে মিনাকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ করে আমার বাড়িতে রেখে যান। এর পর থেকে ওই প্রকৌশলীর পরিবার আমার মেয়ের কোন প্রকার খোঁজখবর নিচ্ছেন না।
তিনি আরো বলেন, প্রথমে আমার সহায়সম্বল বিক্রি ও ধার-দেনা করে আমি মিনার চিকিৎসা করালেও বর্তমানে আমার মেয়েকে ইউপি চেয়ারম্যান মো. তোফায়েল মোল্লার সাহায্যে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্নইউনিটের ৩নং বেডে ভর্তি করা হয়েছে।
সহবতপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. তোফায়েল মোল্লা জানান, নন্দপাড়া গ্রামের কাজী আব্দুল হকের মেয়ে মিনাকে টাঙ্গাইল থানা পাড়া এক প্রকৌশলীর বাসায় কাজ করতে দেয়। ওই বাসায় কাজের কোন এক সময় মিনা গ্যাসের চুলায় অগ্নিদগ্ধ হয়। প্রকৌশলী দম্পত্তি অগ্নিদগ্ধ মিনাকে প্রথমে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করান। পরে মিনার অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মিনার উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় রেফার্ড করলে প্রকৌশলী দম্পত্তি মিনাকে সেখান থেকে রিলিজ করিয়ে মিনার দিনমজুর বাবার কাছে রেখে চলে যায়। এ সংবাদ পেয়ে আমি আব্দুল হকের বাড়ি গিয়ে অগ্নিদগ্ধ মিনার খোঁজখবর নেই এবং প্রকৌশলী মো. শফিকুলের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি মিনার চিকিৎসা করানোর ব্যবস্থার কথা স্বীকার করলেও বর্তমানে তিনি কোন সহযোগিতা করছেন না। পরে অগ্নিদগ্ধ মিনার শারীরিক অবস্থা দেখে তার সুচিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের বার্নইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রকৌশল মো.শফিকুল ইসলামের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, নাগরপুর উপজেলার আব্দুল হকের মেয়ে মিনা আমার বাসায় গ্যাসের চুলায় অগ্নিদগ্ধ হলে তার সকল প্রকার চিকিৎসার ব্যবস্থা করে আসছেন বলে দাবি করেন।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno