আজ- ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শনিবার  সকাল ৬:৪৭

বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথের জন্মজয়ন্তী আজ

 

দৃষ্টি ডেস্ক:

বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বাঙালির বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে যার কবিতা ও গান প্রেরণা হয়ে অনুপ্রাণিত করেছে বাঙালি জাতিকে। ’৬০-এর দশকে পাকিস্তানি স্বৈরশাসক আইয়ুব ও মোনায়েম খান তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে রবীন্দ্রসঙ্গীত নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল কিন্তু বাঙালি তার বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে রবীন্দ্রসঙ্গীতের উৎসব জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালন করে। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সেই উত্তাল দিনগুলোতেও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা ও গান বাঙালি জাতিকে অনুপ্রাণিত ও বেগবান করে যার জন্য স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে বার বার প্রচারিত হতো যে গান সেটা হচ্ছে ‘বিশ্বকবির সোনার বাংলা/নজরুলের বাংলাদেশ/জীবনানন্দের রূপসী বাংলা/রূপের যে তার নেই কো শেষ/ বাংলাদেশ।’
আজ বুধবার(৮ মে) পঁচিশে বৈশাখ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৮তম জন্মজয়ন্তী। দিবসটি উপযাপনের লক্ষ্যে সারা দেশে বিভিন্ন সরকারি- বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সংস্থার পক্ষ থেকে দিনব্যাপী ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম দিকপাল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৬১ সালের ৭ মে (বাংলা-পঁচিশে বৈশাখ-১২৬৮) ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। মাতা সারদা সুন্দরী দেবী। রবীন্দ্রনাথের পূর্বপুরুষরা খুলনা জেলার রূপসা উপজেলার পিঠাভোগে বাস করতেন। বিশ্বকবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের অধিকারী বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দীর্ঘ রোগভোগের পর বাংলা ১৩৪৮ সালের বাইশে শ্রাবণ (ইংরেজি ৭ আগস্ট, ১৯৪১) কলকাতায় পৈতৃক বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন।
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের শ্রেষ্ঠতম মানুষ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম কলকাতার জোড়াসাঁকোতে হলেও তার কবিতা, গান আর সৃষ্টিশীলতার চারণভূমি এই বাংলাদেশের মাটি। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ও আমার দেশের মাটি/তোমার পরে ঠেকাই মাথা’ কিংবা ‘আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে কখন আপনি/তুমি ওই অপরূপ রূপে বাহির হলে জননী’র মতো বিখ্যাত গানগুলো বাংলাদেশের শিলাইদহ, শাহজাদপুর ও পতিসরে বসেই লেখা। ‘সোনার তরী’ ‘বলাকা’সহ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত সব কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলোও এই বাংলাদেশের মাটিতে বসেই লিখেছিলেন কবি কখনো ঘুরে বেড়িয়েছেন তার ‘পদ্মা’ বোটে ভেসে ভেসে বাংলার নদ-নদীতে সৃষ্টিশীলতার আনন্দে-যে আনন্দে কবি লিখেছেন-‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে/ বিরাজ সত্য-সুন্দর।’
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, ভাষাবিদ, চিত্রশিল্পী-গল্পকার। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’য় তার প্রথম লেখা কবিতা ‘অভিলাষ’ প্রকাশিত হয়। অসাধারণ সৃষ্টিশীল লেখক ও সাহিত্যিক হিসেবে সমসাময়িক বিশ্বে তিনি খ্যাতিলাভ করেন। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তার সাহিত্যকর্ম অনূদিত ও পাঠ্যসূচিতে সংযোজিত হয়েছে। ১৮৭৮ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘কবিকাহিনী’ প্রকাশিত হয়। এ সময় থেকেই কবির বিভিন্ন ঘরানার লেখা দেশ-বিদেশে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ পেতে থাকে। লেখালেখির পাশাপাশি তিনি ১৯০১ সালে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মাচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে কবিগুরু সেখানেই বসবাস শুরু করেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য ‘শ্রীনিকেতন’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৯১ সাল থেকে পিতার আদেশে কুষ্টিয়ার শিলাইদহ, পাবনা, নাটোর এবং উরিষ্যায় জমিদারিগুলো তদারকি শুরু করেন কবি। শিলাইদহে তিনি দীর্ঘদিন অতিবাহিত করেন। এখানে জমিদার বাড়িতে তিনি অসংখ্য কবিতা ও গান রচনা করেন। ১৯০১ সালে শিলাইদহ থেকে সপরিবারে কবি বোলপুরে শান্তিনিকেতনে চলে যান। কবি বিশ্বভ্রমণ করেন বারো বার। ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত পাঁচটি মহাদেশের ত্রিশটিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন।
কবির ওপর প্রকাশিত বিভিন্ন গ্রন্থ থেকে জানা যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মূলত কবি। তার মৌলিক কাব্যগ্রন্থ ২৫টি। তবে বাঙালি সমাজে তার জনপ্রিয়তা সঙ্গীতেও রয়েছে। তিনি দুই হাজার গান রচনা করেন। অধিকাংশ গানে সুরারোপ করেন। তার সমগ্র গান ‘গীতবিতান’ গ্রন্থে রয়েছে। কবির লেখা ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটি বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত। ভারতের জাতীয় সঙ্গীতটিও কবির লেখা। জীবিতকালে তার প্রকাশিত মৌলিক কবিতাগ্রন্থ হচ্ছে ৫২টি, উপন্যাস ১৩, ছোটগল্প’র বই ৯৫টি, প্রবন্ধ ও গদ্যগ্রন্থ ৩৬টি, নাটকের বই ৩৮টি। কবির মৃত্যুর পর ৩৬ খণ্ডে ‘রবীন্দ্র রচনাবলী’ প্রকাশ পায়। এ ছাড়া ১৯ খণ্ডে রয়েছে ‘রবীন্দ্র চিঠিপত্র।’ ১৯২৮ থেকে ১৯৩৯ পর্যন্ত কবির আঁঁকা চিত্রকর্ম’র সংখ্যা আড়াই হাজারেরও বেশি। এর মধ্যে ১৫৭৪টি চিত্রকর্ম শান্তিনিকেতনের রবীন্দ্রভবনে সংরক্ষিত আছে। কবির প্রথম চিত্র প্রদর্শনী দক্ষিণ ফ্রান্সের শিল্পীদের উদ্যোগে ১৯২৬ সালে প্যারিসের পিগাল আর্ট গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত হয়।
সব কিছু ছাপিয়ে কবিগুরু শিরোপায় ভূষিত হয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার কবিতা আর গানে গানে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে আলোকিত ও প্রাণময় করে। ১৯১৩ সালে ‘গীতাঞ্জলী’ কাব্যগ্রন্থের জন্য সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে প্রথম বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বাঙালি কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্তি সে সময় বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে বিশ্বসাহিত্যের দরবারে ব্যাপকভাবে পরিচিত ও আলোচিত করে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘গীতাঞ্জলী’ অনুবাদ করে ‘সংগস অব অফারিং’ নামে প্রকাশিত ইংরেজি গ্রন্থের ভূমিকা লিখেন বিখ্যাত ইংরেজ কবি ডাব্লু বি ইয়েটস। আমেরিকা, ইংল্যান্ড, রাশিয়া, চীন, ইতালি, জার্মানি, জাপানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমন্ত্রণ পেয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সফরে গিয়ে সংবর্ধিত হন-যাতে বিশ্ব দরবারে আরো সুপ্রতিষ্ঠিত হয় বাংলা ভাষা ও সাহিত্য।
বাংলা ও বাঙালির প্রাণের কবি এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদের অনুপ্রেরণার কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার অমর সৃষ্টি-‘আমার সোনার বাংলা/আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটি লিখেছিলেন ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের পর বাংলাদেশের শিলাইদহে বসেই-যা ১৯৭১-এর ৩ মার্চ স্বাধীনতার ইস্তেহারে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং ১৯৭১-এর ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিবেশন করা হয়। ১৯৭২ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমার সোনার বাংলা’ গানের প্রথম দশ লাইনকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে ঘোষণা করে। ভারতের জাতীয় সঙ্গীত ‘জনগণমন অধিনায়ক জয় হে/ ভারত ভাগ্যবিধাতা’ গানটিও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ব্রিটিশ-ভারত সরকার নাইট উপাধিতে ভ‚ষিত করেছিল বিশ্বসাহিত্যে তার অসামান্য অবদানের জন্য কিন্তু জালিয়ানওয়ালাবাগ ব্রিটিশ জেনারেল ডায়ারের নির্মম গুলি বর্ষণে অগণিত মানুষের নির্মম হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে রবীন্দ্রনাথ সেই উপাধি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় ‘মানবিক বিশ্ব বিনির্মাণে রবীন্দ্রনাথ’ শীর্ষক কবিগুরুর ওপর আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়া বাংলা একাডেমীতে আজ বিকালে এক আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে একক বক্তৃতা, রবীন্দ্র পুরস্কার প্রদান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno