আজ- ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বৃহস্পতিবার  সন্ধ্যা ৭:২০

মৃৃৎশিল্পীরা পেশা পরিবর্তণের ঝুঁকিতে!

 

দৃষ্টি নিউজ:


মৃৎশিল্পীরা গভীর ভালোবাসা ও পরম মমতায় নিপুন হাতে কারুকাজের মাধ্যমে মাটি দিয়ে তৈরি করে থাকেন নানা তৈজসপত্র। তাদের জীবন-জীবিকার হাতিয়ার হচ্ছে মাটি। কিন্তু কালের বিবর্তনে তাদের ভালোবাসার জীবিকা ফিঁকে হতে শুরু করেছে। ফলে জেলার তিন হাজার ২০০ পরিবার পেশা পরিবর্তণের ঝুঁকিতে পড়েছে।
সরেজমিনে জানা যায়, যতই দিন যাচ্ছে, ততই বাড়ছে আধুনিকতা। অত্যাধুনিকতার ডামাঢোলে পাল্লা দিয়ে টিকে থাকতে না পেরে হারিয়ে যাচ্ছে মাটির তৈরি শিল্পপণ্যগুলো। এক সময় তৈজসপত্র বলতে সময় মাটির তৈরি পণ্যকেই বুঝাতো। মাটির তৈরি তৈজসপত্রের ব্যাপক ব্যবহার ছিল ঘরে ঘরে, এমনকি অভিজাত শ্রেণির বৈঠকখানায় মাটির তৈরি তৈজসপত্রের উপস্থিতি ছিল অবশ্যম্ভাবী। সেই তৈজসপত্রের স্থান দখল করে নিয়েছে অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের তৈরি তৈজসপত্র। এ সবের দাম বেশি হলেও অধিক টেকসই। তাই দাম বেশি হলেও অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের তৈরি তৈজসপত্র কিনে থাকেন সব শ্রেণির মানুষ। অ্যালুমিনিয়াম, কাঁচ, প্লাস্টিক আর মেলামাইনের ভিড়ে এখন মাটির তৈরি ওইসব জিনিসপত্রগুলো প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পাড়ছে না। সেই সাথে এই শিল্পের সাথে জড়িতের জীবন ধারণও কঠিন হয়ে পড়ছে। টাঙ্গাইলের প্রতিভাবান মৃৎ শিল্পীরা মানবেতর জীবন-যাপন করছে। ফলে কালের গর্ভে হারিয়ে যেতে বসেছে টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প।
একটি বেসরকারি হিসেব মতে, টাঙ্গাইল জেলার ১২টি উপজেলায় এক সময় ১০ সহস্রাধিক মৃৎশিল্প নির্ভর পরিবার ছিল। পেশা পরিবর্তণের কারণে কমতে কমতে সে সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র তিন হাজার ২০০ পরিবারে। এরমধ্যে ধনবাড়ী উপজেলায় ২০০ পরিবার, মধূপুর উপজেলায় ৩০০, ঘাটাইলে ২০০, গোপালপুরে ৩০০, কালিহাতীতে ৪০০, ভূঞাপুরে ২০০, টাঙ্গাইল সদর উপজেলায় ৫০০, দেলদুয়ারে ১০০, নাগরপুরে ৩০০, মির্জাপুরে ৪০০, সখীপুরে ২০০ এবং বাসাইল উপজেলায় ১০০ পরিবার অতিকষ্টে পৈত্রিক পেশা ধরে রেখেছে।
জেলার কোন কোন কুমার পাড়ায় এখনও দিনরাত একাকার করে মাটি দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে, বিভিন্ন মৃৎ-পণ্য।এই সব মৃৎ শিল্পীরা মাটি দিয়ে তৈরি করছেন পুতুল, ফুলের টব, কুয়ার স্ল্যাব বা পাত, হাঁড়ি-পাতিল সহ বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। পরে সেগুলোকে তারা শহরের দোকান এবং বাসা-বাড়িতে বিক্রি করে থাকেন। কিন্তু ভিন্ন পণ্যের আধিক্যে মৃৎ শিল্পের ব্যবহার অনেকাংশে কমে গেছে। আগে টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি বা পোড়াবাড়ীর চমচম মাটির পাত্রে বিক্রি করা হতো। বর্তমানে একমাত্র দই ছাড়া অন্যকোন মিষ্টান্ন বিক্রির ক্ষেত্রে মাটির পাত্র ব্যবহার করা হয় না। এখন সৌখিন জিনিসপত্র এবং কুয়ার পাত বা স্ল্যাব তৈরিই একমাত্র ভরসা। কিন্তু সঠিক দাম নাম পাওয়ায় কাজ করতে উৎসাহ হারাচ্ছে এ শিল্পের সুদক্ষ কারিগররা। বর্তমানে গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন উৎসব, মেলায় তৈরি খেলনা পুতুল ছাড়া অন্য কোন মৃৎ শিল্পের গ্রাহক নেই বললেই চলে। অ্যালুমিনিয়াম, প্লাস্টিক ও স্টিলের জিনিসপত্রের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে না পেরে দেশীয় এ শিল্প আজ ধংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। এ পেশায় জড়িত বিশেষ করে এটাই যাদের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন তাদের জীবন-যাপন একেবারে ওষ্ঠাগত হয়ে পড়েছে।
টাঙ্গাইল সদর থানার দাইন্যা ইউনিয়নের বাসাখানপুরের জয়ীতা পাল, কালিহাতীর তাপস পাল, গোপালপুরের স্বপন পাল সহ অনেকেই জানান, বর্তমানে অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের বাহারি পণ্যের কারণে মাটির তৈরি জিনিসপত্র চলে না। ফলে তাদের জীবন- ধারণ কষ্টকর হয়ে পড়েছে। তবুও দু’বেলা দু’মুঠো খাবারের জন্য এবং ঐতিহ্যগত কারণে তারা পৈত্রিক এ পেশাকে ধরে রেখেছেন। সরকার যদি সুদমুক্ত ঋণের ব্যবস্থা করে তা হলে বাপ-দাদার এ পেশাকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন(বিসিক) টাঙ্গাইলের সহকারী মহাব্যবস্থাপক শাহনাজ বেগম জানান, জেলায় এক সময় মৃৎশিল্পের রমরমা বাজার ছিল। এ শিল্পের সাথে জড়িত কারিগররা বাধ্য হয়ে পেশা পরিবর্তন করছেন। ভিন্ন পণ্যের আগ্রাসনে এ শিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে। আমরা বিসিক থেকে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় বিভিন্ন কারিগরী ও আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে থাকি। বাজারজাত করণে যে অসুবিধা আছে আমাদের কাছে আসলে সঠিক দিক- নির্দেশনা ও দক্ষ কারিগর তৈরি করতে বিসিক থেকে সহযোগিতা দেয়া হয়। অনেকে না জানার কারণে বিসিকে আসেন না। টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরণের সহযোগিতা দিতে বিসিক প্রস্তুত।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno