আজ- ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বুধবার  সকাল ৯:৩৫

অশীতিপর আব্দুস ছালাম কবে বয়স্ক ভাতা পাবেন?

 

দৃষ্টি নিউজ:


অভাবের তাড়নায় টাঙ্গাইল শহরের পুরাতন আদালত রোডে সপ্তায় দুইদিন সুলভমূল্যে ডিম বিক্রি করে স্থানীয়দের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন অশীতিপর বৃদ্ধ আব্দুস ছালাম। বাজার দরের চেয়ে কিছুটা কমদামে ডিম বিক্রি করেন তিনি। ডিম বিক্রি করে যে কয় টাকা মুনাফা হয় তা দিয়েই স্ত্রীকে নিয়ে দিব্যি চলে যায় সংসার। দাম কমের জন্য পুরাতন আদালত রোডে আব্দুস ছালাম একজন সুপরিচিত ডিম বিক্রেতা।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, ডিম বিক্রেতা আব্দুস ছালাম টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার ৭নং আলোকদিয়া ইউনিয়নের সিংরামবাড়ি গ্রামের মরহুম রুস্তম আলীর ছেলে। এক সময় জমিজমা ভালোই ছিল। তিনটি ছেলের পড়ালেখা করাতে বিক্রি করেছেন প্রায় সব জমিই। ছেলেরাও বড় হয়ে সংসারী হয়েছে, একজন তো বিদেশে চাকুরি করে; কিন্তু বৃদ্ধ বাবা-মাকে ফেলে দিয়েছে। দেখা-শোনা তো পরের বিষয় খোঁজ-খবর পর্যন্ত রাখে না। জীবিকার প্রয়োজনে বাধ্য হয়ে ডিম বিক্রির ব্যবসায় যোগ দেন তিনি। সপ্তাহে দুই দিন ডিম বিক্রি করে যা আয় হয় তা দিয়ে স্বামী-স্ত্রীর সংসার ভালোই চলে। আব্দুস ছালাম সপ্তাহের পাঁচদিন নিজের এলাকা মধুপুরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে পাইকারি দরে হাঁস-মুরগির ডিম কিনেন আর সেই ডিম সপ্তায় দুই দিন টাঙ্গাইল শহরের পুরাতন আদালত রোডে বিক্রি করেন। বাজার দরের চেয়ে প্রতি হালিতে(চারটি) ১-২টাকা কমদামে বিক্রি করায় তাঁর ডিমের চাহিদাও ব্যাপক। স্থানীয় ক্রেতারা বলতে গেলে বৃদ্ধ আব্দুস ছালাম কবে ডিম নিয়ে আসবেন সে অপেক্ষায় থাকেন।
ভোটার তালিকানুযায়ী ৮০ বছরের বৃদ্ধ আব্দুস ছালাম আক্ষেপ করে জানান, ছেলেরা বিয়ে করে সংসারী হওয়ায় তাদের নিজেদেরই অনেক সমস্যা বেড়েছে। এরমধ্যে তাঁদের স্বামী-স্ত্রীর বোঝা কী করে বইবে! জীবিকা নির্বাহের জন্য তিনি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বর সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের বার বার ধর্ণা দিয়েও একটি বয়স্কভাতার কার্ড পাননি। কার্ড পেতে ‘ঘুষ’ লাগে, কিন্তু বৃদ্ধ মানুষ এই শেষ বয়সে ঘুষ দিয়ে ‘পাপ’ করতে চান না। তাই অল্পপুঁজিতে ডিম কিনে বিক্রি করার ব্যবসায় নেমে পড়েন। প্রথমে তিনি মধুপুরের গ্রামে গ্রামে ঘুরে বাড়ির গৃহিনীদের কাছ থেকে ডিম কিনে মধুপুর বাসস্ট্যান্ডে বিক্রি করতেন। তাতে তেমন লাভ হতো না। এরইমধ্যে জনৈক ব্যক্তির মুখে শুনতে পান মধুপুরের চেয়ে টাঙ্গাইল শহরে ডিমের দাম হালিতে ৩-৪টাকা বেশি। তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নেন মধুপুর থেকে ডিম কিনে টাঙ্গাইল শহরে বিক্রি করবেন। সেই থেকে শুরু, চলছে এখনও!
তিনি আরো জানান, টাঙ্গাইল শহরে হাঁস-মুরগির(দেশি) ডিমের বাজার মূল্যের চেয়ে তিনি হালিতে ১-২ টাকা কম দাম নেন- এটা ব্যবসা বাড়ানোর জন্য নয়, দেশপ্রেম থেকে। তিনি মনে করেন, এক হালি(চারটি) ডিমে ১-২টাকা মুনাফা করা যুক্তিযুক্ত বেশি হলে পাপ হবে।
তপ্ত রোদ, ঝড়-বৃষ্টি কিংবা যত প্রতিকূল আবহাওয়াই থাকুকনা কেন আব্দুস ছালামকে দমাতে পারেনা। সপ্তায় দুইদিন আদালত রোডে তিনি ডিমের দোকান খুলবেনই।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno