আজ- ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বৃহস্পতিবার  বিকাল ৪:৪১

অসুস্থ হাফেজ নজরুল এক কাতে শুয়ে আছেন ১৮ বছর!

 

দৃষ্টি নিউজ:


এখনও চোখে মুখে বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন হাফেজ নজরুল ইসলাম। জীবন থেকে ৩৮ বছর পাড় করেছেন তিনি। পেছনে ফেলে আসা ৩৮ বছরের ১৮ বছরই কাটিয়েছেন এক কাতে বিছানায় শুয়ে। তিনি টাঙ্গাইল সদর উপজেলার মাহমুদ নগর ইউনিয়নের কুকুরিয়া গ্রামের মৃত মো. মরতুজ আলী সরকার ও মৃত কদভানুর ছেলে।
সরেজমিনে জানা যায়, বর্তমানে তার শরীরটা কঙ্কালের মতো। হাত পা বেঁকে গেছে। এক কাতে ১৮ বছর থাকতে থাকতে ঘাড়টা ডান দিকে আটকে গেছে। শরীরের এক অংশ উচু করে পুরো দেহটা নাড়ানো যায়। তরল বস্তু খাওয়াতে হয় পাইপ দিয়ে। হাত পায়ের হাড়ের যুক্ত স্থানগুলো বেঁকে গেছে। পুরো দেহটা শক্ত একটা বস্তুতে পরিনত হয়েছে। এভাবেই এক কাতে তিনি শুয়ে আছেন ১৮ বছর। তবে আশ্চর্য্যরে বিষয় তার স্মরণশক্তি একটুও হ্রাস পায়নি। শুয়ে সারাক্ষণ কুরআন পড়ছেন। ইশারায় নামাজও আদায় করছেন। পরিচিতদের কণ্ঠ শুনলেই বুঝতে পারেন কে এসেছেন। শরীরটা জড় বস্তুর মতো হলেও কণ্ঠটা রয়েছে ঠিক আগের মতো।
যমুনার পাড় ঘেষা হাফেজ নজরুল ইসলামের বাড়িটি। প্রমত্ত্বা যমুনার যৌবনের লালসায় জমাজমি সবই চলে নদীর পেটে, এখন নিঃস্ব। শুরু থেকেই পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা নাজ্কু ছিল। চার বছর বয়সেই বাবাকে হারিয়ে এতিম হয়ে পড়েন নজরুল ইসলাম। কৃষি কাজ করা পরিবারের একমাত্র উপার্জিত বাবাকে হারিয়ে পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা আরো দুর্বল হয়ে পড়ে। এরপরও কষ্টকে উপেক্ষা করে হেফজ বিভাগ শেষ করেন তিনি। হাফেজ হয়েই দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল ইউনিয়নের মঙ্গলহোড় জামে মসজিদে ইমামের চাকুরি নেন। দু’বছর কাটতে না কাটতেই আক্রান্ত হন অজানা রোগে, হাত পা ফুলে যায়- প্রচন্ড ব্যাথাও শুরু হয়। তখন ১৯৯৯ইং সাল। ৬০০টাকার ইমামতির চাকুরি। এতো অল্প আয়ে সংসার চালিয়ে চিকিৎসা করাতে পারেননি তিনি। দাঁড়িয়ে থাকতে না পারায় ইমামের চাকুরিটাও চলে যায়। সুষম খাবারতো দূরের কথা, স্বাভাবিক খাবার যোগাতে ব্যর্থ আর অর্থাভাবে চিকিৎসা করতে না পারায় ওই বছরই বিছানায় পড়েন তিনি। ভরসা ঝাড়-ফুক আর পানি পড়া। অবিবাহিত হওয়ায় সেবার জন্যও পরনির্ভরশীল হতে হয় তাকে। পাঁচ ভাই-বোন থাকার পরও দায়িত্ব থেকে সড়ে দাঁড়ান সবাই। দায়িত্ব না নিয়ে থাকতে পারলেন না ৭৫ বছর বয়সী মা। পরের বাড়ি বাড়ি চেয়ে-চিন্তে খাবার যোগাতে পারলেও বৃদ্ধা মায়ের পক্ষে চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি। অযতœ আর বিনা চিকিৎসায় বছর খানেকের মধ্যেই বিছানা থেকে উঠা বসা বন্ধ হয়ে যায় তার।
গত পাঁচ বছর আগে তাকে দেখাশোনা করার একমাত্র বৃদ্ধা মা চলে যান না ফেরার দেশে। এরপর থেকে অসুস্থ নজরুল ইসলাম আরো অসহায় হয়ে পড়েন। এখন তিনি গ্রামেই তার বড় বোন রাবেয়া খাতুন ও বোন জামাতা রহম আলীর তত্ত্বাবধানে রয়েছেন। রহম আলী দিন মুজুর। তিনিও দিন আনেন, দিন খান। আত্মীয়তার টানে তা থেকেই সহযোগিতা করছেন। মৃত্যু খুব সন্নিকটে ভেবে চিকিৎসার পরিবর্তে বিভিন্ন মহল থেকে ছোট ছোট দানের টাকা দিয়ে তাকে খাওয়াচ্ছেন ওই বোন।
মৃত্যুকে পাশে রেখেই হঠাৎ বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন হাফেজ নজরুল ইসলাম। ঢাকার বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (পিজি হাসপাতাল) থেকে আসা মেডিসিন ও নিউরোলজি বিশেষজ্ঞ ডা. মিজানুর রহমানের নজরে পড়েন অসুস্থ হাফেজ নজরুল ইসলাম। গত চার মাস যাবৎ তিনি চিকিৎসা করছেন হাফেজ নজরুল ইসলামের। চিকিৎসক জানিয়েছেন, বাত ব্যাথা থেকেই তার এ অবস্থা। এখন নার্ভগুলো ঠিকমতো কাজ করতে না পাড়ার কারণে বর্তমানে তার শারীর এ অবস্থায় পরিণত হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা হলেও চার মাসেই অনেকটা পরিবর্তন এসেছে নজরুলের। কিন্তু তার চিকিৎসা অনেক ব্যয়বহুল হওয়ায় মাঝে মাঝেই ওষুধ বন্ধ রাখতে হচ্ছে। যেখানে দুবেলা খাবার জোটেনা, সেখানে ওষুধ নিয়মিত করবে কিভাবে।
অসুস্থ হাফেজ নজরুল নজরুল ইসলাম বেঁচে আছেন এক বুক আশা নিয়ে। তিনি বলেন, ‘আমি সুস্থ হব। হযরত আইয়ুব (আ:) ১৮ বছর অসুস্থ থাকার পর সুস্থ হয়েছিলেন। ইনশাআল্লাহ, আল্লাহ চাইলে আমিও সুস্থ হব’। বর্তমানে যে চিকিৎসা চলছে তাতে প্রতিমাসে ওষুধ খরচ লাগে প্রায় পাঁচ হাজার টাকা। ওষুধ খেয়ে আগের তুলনায় অনেকটা ভাল। এখন ধীরে ধীরে হাত-পায়ে শক্তি ফিরছে। এর আগে বোধ শক্তিও কমে গিয়েছিল। কিন্তু টাকার অভাবে ঠিকমত ওষুধ খেতে পাড়ছিলেন না। সমাজের বিত্ত্ববানদের প্রতি তার চিকিৎসার জন্য সহযোগিতার আবেদন জানান তিনি।
এ প্রসঙ্গে চিকিৎক ডা. মিজানুর রহমান জানান, গত চার মাস যাবৎ তিনি হাফেজ নজরুল ইসলামের চিকিৎসা করছেন। দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা হলেও গত চার মাসেই তার অনেকটা পরিবর্তন এসেছে। ১৮ বছরের রোগ। শুরুতে চিকিৎসা নিলে অল্প সময়ে ভালো হত। বর্তমানে চিকিৎসায় তিনি অনেকটা ভালোর দিকে। নিয়মিত চিকিৎসা নিলে তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন বলে আশা প্রকাশ করেন চিকিৎসক।
মাহমুদ নগর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম জানান, আমি তাকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি। তিনি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। সহযোগিতার জন্য তাকে একটি প্রতিবন্ধী কার্ডের ব্যবস্থাও করে দিয়েছিলাম।
তাকে সুস্থ করার মতো অর্থনৈতিক সামর্থ নেই পরিবারের। তার নিজ গ্রাম ও চাকুরির স্থান দেলদুয়ারের মঙ্গলহোড় গ্রামের মানুষের সহযোগিতায় এতোদিন চিকিৎসা চলে আসছিল। একজনে কতোবার সাহায্য করবে? এখন চিকিৎসা বন্ধের উপক্রম। কুরআনের ত্রিশ পাড়ার একজন হাফেজকে বাঁচাতে দেশের বিত্ত্ববানদের কাছে আবেদন করেছেন অসুস্থ হাফেজ নজরুল ইসলাম ও তার পরিবার। আর্থিক সহযোগিতা করতে পারেন, ডাচ্বাংলা মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব নম্বর-(নিজ) ০১৭৬৭৬৫৫৯১৩-৭, বিকাশ নম্বর (রোগীর ভাবী)-০১৭৫৬৩৪৬০১৭। সহযোগিতার পূর্বে অসুস্থ হাফেজ নজরুল ইসলামের সাথে কথা বলে নিন -০১৭৬৭৬৫৫৯১৩ নম্বরে।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno