আজ- ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শুক্রবার  সকাল ১১:৫১

আজ পবিত্র আশুরা ॥ মর্মন্তুদ কারবালা দিবস

 

দৃষ্টি নিউজ:


আজ রোববার, মহররমের দশ তারিখ, পবিত্র আশুরা। পৃথিবী সৃষ্টির সূচনা হতে এ যাবৎ অসংখ্য বিস্ময়কর ঘটনার দিন। ইতিহাসে বিশাল জায়গা অধিকার করে আছে পবিত্র আশুরা। এই দিন ইসলামের ইতিহাসে অসামান্য তাৎপর্যে উজ্জ্বল। ইবাদত-বন্দেগীর জন্যও এ দিবস অতুলনীয়।
সবকিছু ছাপিয়ে কারবালার মর্মন্তুদ সকরুণ শোকগাঁথা এ দিবসকে গভীর কালো রেখায় উৎকীর্ণ করে রেখেছে। ৬১ হিজরি সালের এই দিনে হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা ইয়াজিদের সৈন্যদের হাতে কারবালার ময়দানে শহীদ হন। পবিত্র আশুরা তাই মুসলিম উম্মাহর জন্য এক তাৎপর্যময় ও শোকাবহ দিন। দিনটি মুসলমানদের কাছে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠারও দিন। এ দিনটি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে খুবই প্রিয়। তাই তিনি এ দিনে রোজা পালনের সওয়াব প্রদান করে থাকেন বহুগুণ। বিগত বছরের গুনাহ এর কাফফারা হিসেবে মহররমের দুটি রোজা রাখা মুসলমানদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।
আশুরা কেবল কারবালার শোকাবহ স্মৃতিতেই ভাস্বর নয়। ইতিহাসের আরো অনেক ঘটনার সাক্ষ্য বহন করছে। মহান আল্লাহ তায়ালা এ দিনেই আরশ, কুরছি, লওহ, কলম আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন এবং এ দিনেই আদমকে (আ.) সৃষ্টি করে তাকে বেহেশতে স্থান দিয়েছেন। পরবর্তীতে শয়তানের প্ররোচনায় ভুলের কারণে এ দিনেই তাঁকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। হযরত নূহ (আ.) সাড়ে নয়শত বছর ধরে তাওহীদের বাণী প্রচারের পর যখন সে যুগের মানুষ আল্লাহর বিধি-নিষেধ পালনে অস্বীকৃতি জানায়, তখন নেমে আসে আল্লাহর গজব। ফলে হযরত নূহ (আ.) এর সম্প্রদায় ধ্বংস হয়েছে। শুধু রক্ষা পেয়েছে তাওহীদে বিশ্বাসী নূহ (আ.) এর অনুসারীবৃন্দ। পবিত্র আশুরার দিনে মহাপ্লাবনের সময় হযরত নূহ (আ.) এর নৌকা তার অনুসারীদের নিয়ে জুদি পাহাড়ের পাদদেশে এসে থেমেছিল। আজো তার কিছু নিদর্শন সেখানে পাওয়া যায়। পবিত্র আশুরার দিনেই হযরত ইব্রাহীম (আ.) শত বিধি-নিষেধের মধ্য দিয়ে জন্মগ্রহণ করেছেন। পরবর্তীতে তিনি নমরুদের অগ্নিকুণ্ড থেকে উদ্ধার লাভ করেন এবং নিজের প্রাণাধিক প্রিয় পুত্র হযরত ইসমাইলকে (আ.) আল্লাহর নামে কোরবানি দিতে উদ্যত হলে খলিলুল্লাহ বা আল্লাহর বন্ধু হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছিলেন পবিত্র আশুরার দিনে।
এদিনেই হযরত আইউব (আ.) কঠিন রোগ থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন, হযরত ঈসা (আ.) জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং কাফেরদের ষড়যন্ত্রের শিকার হলে আল্লাহ তাকে চতুর্থ আসমানে উঠিয়ে নেন। এদিনেই হযরত দাউদ (আ.) আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমা লাভ করেছিলেন, হযরত সোলায়মান (আ.) তাঁর হারানো রাজত্ব পুনরুদ্ধারে সক্ষম হয়েছিলেন, হযরত ইউনুস (আ.) মাছের পেট থেকে মুক্তি লাভ করেছিলেন, হযরত ইয়াকুব (আ.) তাঁর হারানো পুত্র হযরত ইউসূফকে (আ.) চল্লিশ বছর পর ফিরে পেয়েছিলেন। পবিত্র আশুরার দিনে ফেরাউনের স্ত্রী বিবি আছিয়া শিশু মুসাকে গ্রহণ করেছিলেন। আবার স্বীয় কওমের লোকজনসহ হযরত মূসা (আ.) নীল নদ অতিক্রম করে ফেরাউনের জুলুম থেকে মুক্তি লাভ করেন। পক্ষান্তরে ফেরাউন সদলবলে নীল নদে ডুবে মারা যায়। পবিত্র আশুরা সমগ্র জগৎ সৃষ্টির দিন হিসেবে যেমন স্বীকৃত, তেমনি এদিন কেয়ামত অনুষ্ঠিত হয়ে জগৎ ধ্বংস প্রাপ্ত হবে।
পবিত্র আশুরার দিন মুসলিম জাহানের জন্য যে কারণে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, সেটা হলো, এদিনে স্বৈরাচারী ইয়াজিদ বাহিনী হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) কে একজন ব্যতীত সপরিবারে কারবালার মরু প্রান্তরে নির্মমভাবে হত্যা করে। হযরত ইমাম হোসাইন ক্ষমতার জন্য ইয়াজিদের বিরুদ্ধে লড়াই করেননি। বরং তিনি লড়াই করেছিলেন ইয়াজিদের ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে। সত্যের পতাকা সমুন্নত রাখার জন্য তিনি সপরিবারে জীবন দিয়ে স্মরণীয় হয়ে আছেন।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno