আজ- ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বৃহস্পতিবার  সন্ধ্যা ৭:৩৭

ছাত্রলীগের বিলাসী বাজেটে ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ে তোলপাড়!

 

দৃষ্টি নিউজ:


টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনের ব্যয়ে ছাত্রলীগের প্রায় কোটি টাকার বিলাসী বাজেট উপস্থাপনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ছাত্রলীগের উপস্থাপন করা বাজেটের বিপরীতে কোন টাকাই বরাদ্দ দেয়নি। বরং ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার মধ্যে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করার উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বাগাড়ম্বর বাজেট উপস্থাপন করায় ওই প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপযাপনে ছাত্রলীগকে কোন দায়িত্বও দেয়া হচ্ছেনা।
জানাগেছে, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী আড়ম্বরভাবে উদযাপনের জন্য গত ২২ সেপ্টেম্বর গোপনে ভাইস চ্যান্সেলর ও প্রক্টরের কাছে ৬৮লাখ ৭৬হাজার টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান। প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন কমিটি গঠন ব্যতীত, শিক্ষার্থীদের মতামত ও পরামর্শ গ্রহণ ছাড়াই গোপনে এত বিশাল অংকের বাজেট কেন উপস্থাপন করে ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ এ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব আর রহস্যের বেড়াজালে ক্যাম্পাসে তোলপাড় শুরু হয়। শিক্ষার্থীদের মনেও নানা প্রশ্নের উদ্রেক হয়। ‘ছাত্রলীগের দাবিকৃত বাজেট বরাদ্দ ব্যতীত ও তত্ত্বাবধান ছাড়া প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন হচ্ছে কিনা?’ এমন প্রশ্নেও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিচলিত হয়ে পড়ে। তবে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপনের নামে উপস্থাপনকৃত ওই বাজেটের অধিকাংশ টাকা আত্মসাতের অপচেষ্টায় ওই বিলাসী বাজেট দিয়েছে ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ এমন গুঞ্জন, আলোচনা আর সমালোচনায়ও সরগরম হয়ে ওঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।
ছাত্রলীগের উপস্থাপিত বাজেটের কাগজ দেখার পর ফুড টেকনোলজি অ্যান্ড নিউট্রিশনাল সায়েন্স বিভাগের পারভেজ মোশারফ জানান, এ বাজেটে দাবিকৃত টাকার পরিমাণ দেখে তারা সত্যিই অবাক হয়েছেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী, ছাত্রলীগকেও ভালবাসেন।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনে উপস্থাপিত বাজেটে রয়েছে, কনসার্ট ও স্টেজ বাবদ ৩৮ লাখ, আল্পনা বাবদ ৬লাখ, আলোক সজ্জা ও সৌন্দর্য্যবর্ধণে দুই লাখ টাকা, ১০০ পাউন্ডের কেকের দাম ধরা হয়েছে ২৫ হাজার টাকা, আনন্দ র‌্যালি ও পুষ্পস্তবক অর্পণে-ব্যান্ড পার্টি বাবদ ১০ হাজার টাকা, টমটম ঘোড়ার গাড়ি বাবদ ২০ হাজার টাকা, বুবুজেলা(এক ধরণের বাঁশি) বাবদ ১০ হাজার টাকা ও হাতের ব্যাচ বাবদ এক হাজার টাকা, দুই হাজার শিক্ষার্থীর টি-শার্ট জনপ্রতি ৩০০ করে ৬লাখ টাকা, ক্যাপ দুই হাজার শিক্ষার্থীর জন্য জনপ্রতি ৭০টাকা দরে এক লাখ ৪০হাজার টাকা, আলোকসজ্জা ৫টি হল, অ্যাকাডেমিক ভবন, গুরুত্বপূর্ণ স্থান সমূহ, ফানুষ ও আতশবাজির জন্য ৫লাখ, ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য্য বর্ধনে পুকুর, নৌকা, গাছ, ৩০টি ডাস্টবিন ও ৩০টি ফেস্টুন বাবদ ৭ লাখ, আবাসিক হল সমূহের ফিস্ট মিল বাবদ মাথাপিছু ৩০০ করে, বঙ্গবন্ধু ও ক্যাম্পাসের উপর আলোকচিত্র প্রর্দশনীতে ৩০০টি ছবি প্রদর্শন ও ফ্রেম বাবদ দুই লাখ ৫০হাজার টাকা, আলপনা ১ম গেট থেকে জিয়া হল পর্যন্ত ৬ লাখ, আলোচনা সভায় ব্যানার ও ক্রেস্ট বাবদ ৭০ হাজার, কনসার্ট- জেম্স ও স্টেজ সাউন্ড সিস্টেমে ২০লাখ এবং কণ্ঠশিল্পী সালমা, লিজা ও সাউন্ড সিস্টেমে ৮ লাখ, স্টেজ সাজানো বাবদ ১০ লাখ, ভলেন্টিয়ার খরচ এক লাখসহ অন্যান্য খরচ ৫০ হাজার টাকা।
মাভাবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব তালুকদার জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে কোন বাজেট দেয়া হয়নি। তবে যে বাজেটটির কথা প্রকাশ পেয়েছে, সেটি ছিল সাধারণ শিক্ষার্থীদের। শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের দাবি অনুসারে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষকে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে কোন চাপ দেয়া হয়নি। এসময় তিনি বলেন, শুনেছি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ১০-১২ লাখ টাকার মধ্যে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করবে। এখানে আমাদের কোন দায়িত্বও নাই, দায়ও নাই। তবে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী সফলভাবে সম্পন্ন করতে আমাদের পক্ষ থেকে যাবতীয় সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে বাজেট জমা দেয়ার কথা স্বীকার করে প্রক্টর ড. মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ যে অযৌক্তিক বাজেট দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে তা দেয়া সম্ভব নয়। তাই ছাত্রলীগের দেয়া অযৌক্তিক বাজেটটি কর্তৃপক্ষ অনুমোদন দেয়নি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট তৈরি হয়ে গেছে। ইতোপূর্বে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। এখন ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে, দ্রব্যমূল্য বেড়েছে। তার সাথে সঙ্গতি রেখে এবার সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকার মধ্যে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno