আজ- ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বৃহস্পতিবার  বিকাল ৩:৪৩

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা :: রায়কে ঘিরে চতুর্মুখী তৎপরতা বিএনপির

 

দৃষ্টি নিউজ:

দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ‘জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট’ মামলার রায়কে ঘিরে চতুর্মখী তৎপরতা শুরু করেছে বিএনপি। সাংগঠনিক, কূটনৈতিক, আইনি এবং অন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের পক্ষে আনার বিষয়ের উপর জোর দিচ্ছে দলটি। এছাড়া রাজনীতি থেকে জিয়া পরিবারকে মাইনাস করার ষড়যন্ত্র ঠেকানোকেই এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে দলটি।
বিএনপির সিনিয়র এক নেতা বলেন, রাজনীতি থেকে জিয়া পরিবারকে মাইনাস করার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। এই ষড়যন্ত্র ঠেকিয়ে দেয়াকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন তারা। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ষড়যন্ত্র রুখে দেয়ার অংশ হিসেবে দলের গঠনতন্ত্রে পরিবর্তন আনা হয়েছে।
জানা গেছে, পুরনো গঠনতন্ত্রের দুর্নীতি সংক্রান্ত ধারা ৭-এর সব উপধারা বিলুপ্ত করে নতুন করে গঠনতন্ত্র তৈরি করেছে দলটি। পরিবর্তিত এই গঠনতন্ত্র দলের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনে জমাও দেয়া হয়েছে। মূলত খালেদা জিয়ার মামলার রায়কে সামনে রেখে দ্রুত গঠনতন্ত্র সংশোধন করে ইসিতে জমা দেয়া হয়েছে। মামলার রায়ে খালেদা জিয়ার সাজা হলে দলের গঠনতন্ত্রের ধারা ৭-এর ‘ঘ’ সামনে আনা হতে পারে। ওই ধারায় কোনো দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তি বিএনপির কোনো পর্যায়ের কমিটির সদস্য পদ বা সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য বলে বিবেচিত হওয়ার কথা আছে। এই ধারা প্রয়োগ করে বিএনপিতে ভাঙন ধরানোর প্রচেষ্টা করতে পারে সরকার। এমন আশঙ্কা থেকেই এই ধারাটিকে বিলুপ্ত করেছে বিএনপি।
গঠনতন্ত্র সংশোধনের বিষয়ে জানতে চাইলে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সংগঠনের প্রয়োজনে গঠনতন্ত্র সংশোধন হতেই পারে। মাইনাস ওয়ান ফর্মুলা বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছে সরকার। রাজনীতি থেকে সরাতে চাচ্ছে বিএনপি প্রধানকে। সরকারের অপকৌশল যাতে সফল না হয় সেজন্য যা করার দরকার তা করবে বিএনপি।
এদিকে রায়ের বিষয়টি নজরে রেখে পরিস্থিতি মোকাবেলায় আইনি ও রাজনৈতিক উভয় দিকে দিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। রায়ের দিনক্ষণ নির্ধারণের পর ঢাকায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতারা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। এর মধ্যে বিএনপির কয়েকজন সিনিয়র নেতা একাধিকবার বৈঠকে বসেন। অঙ্গসংগঠনের নেতারাও পৃথকভাবে বৈঠক করেছেন। দীর্ঘমেয়াদে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হলে তার প্রস্তুতি নিয়েও কথাবার্তা বলছেন শীর্ষ নেতারা। অনেকেই গ্রেপ্তার এড়াতে নানা কৌশলও নিতে শুরু করেছেন।
বিএনপি সূত্রমতে, রায়-পরবর্তী পরিস্থিতি রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলায় ইতোমধ্যে তৃণমূলে বার্তা পাঠানো হয়েছে। কেন্দ্রীয়ভাবে গঠিত একাধিক টিম তৃণমূল সফরে স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন। রায়ের দিন দেশের সব নেতাকর্মীকে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রায় বিপক্ষে গেলে কেন্দ্র থেকে যে নির্দেশনা যাবে তা যেন একযোগে পালন করা হয় সে ব্যাপারে সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। রায়ের দিন সারা দেশে শান্তিপূর্ণ ব্যাপক গণজমায়েত বা শোডাউন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে রায়কে কেন্দ্র করে জ্বালাও-পোড়াও বা ধ্বংসাত্মক কোনো কর্মসূচিতে যাবে না দলটি। এ ইসু্যতে তৃতীয়পক্ষ যাতে ফায়দা নিতে না পারে সে ব্যাপারেও সতর্ক দলটির হাইকমান্ড। এছাড়া বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন এবং জোটের পক্ষ থেকেও রায়-পরবর্তী করণীয় নিয়ে প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। খালেদা জিয়ার সাজা হলে বিভিন্ন সংগঠন, দল এবং জোটের পক্ষ থেকে স্বেচ্ছায় কারাবরণের কর্মসূচি দেয়ার কথাও ভাবছেন।
গত রোববার(২৮ জানুয়ারি) রাতে ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এর আগে শনিবার(২৭ জানুয়ারি) স্থায়ী কমিটির নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন তিনি। এছাড়া আগামি ৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বসুন্ধরায় আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটির ‘রাজদর্শনে’ জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। সেখান থেকেই পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা হলে তার অনুপস্থিতিতে কারা দল পরিচালনা করবেন সে সিদ্ধান্তও নেয়া হয়েছে। সে ক্ষেত্রে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পরামর্শ নিয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা দল পরিচালনা করবেন। আর আন্দোলনের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে ৭ নেতাকে দায়িত্ব দেয়া হতে পারে।
এদিকে খালেদা জিয়ার মামলা নিয়ে শেষ পর্যন্ত আইনি প্রক্রিয়ায় কোনো ত্রুটি রাখতে চায়না বিএনপি। সেজন্য দলের চেয়ারপারসনের মামলার বিষয়ে দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও পরামর্শ করছে বিএনপি।
বিএনপি সূত্রমতে, খালেদা জিয়ার সাজা হলে তাৎক্ষণিকভাবে উচ্চ আদালতে জামিন চেয়ে আবেদন করা হবে। এ ব্যাপারে সব ধরনের আগাম প্রস্তুতি নেয়া থাকবে। পাশাপাশি দ্রুত সময়ের মধ্যে ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে, যাতে নিম্ন আদালতে সাজা হলেও আগামি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে আইনগত কোনো বাধা না থাকে। খালেদা জিয়ার সাজা হলে আইনজীবীদের টানা আদালত বর্জনের কর্মসূচি নিয়ে দলটির মধ্যে আলোচনা চলছে।
মামলার বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, ‘মামলার বিচার যদি আইনের স্বাভাবিক গতিতে যায়, তাতে জেল হওয়ার কারণ নেই। তবে বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে আদালতের ওপর নির্ভর করছে। খালেদা জিয়া এ মামলায় খালাস পাবেন বলে বিশ্বাস করেন তিনি।
সাজা হলে নির্বাচন করতে পারবেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে জমির উদ্দিন সরকার বলেন, এখন পর্যন্ত আইন যা আছে, তাতে আপিল করলে জামিন পাবেন এবং জামিন পেলেই নির্বাচন করতে পারবেন। আপিলটা ট্রায়াল কোর্টের কন্টিনিউশন। এটা শেষ নয়। আপিল কোর্টে যা হবে, এটাই ফাইনাল। যতক্ষণ না ফাইনাল হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত জেল হয়নি। জেল হিসেবে কাউন্ট হবে জাজমেন্টের পর।
রাজনৈতিক ও আইনি প্রক্রিয়ার পাশাপাশি খালেদা জিয়ার মামলার ব্যাপারে প্রকৃত ঘটনা আন্তর্জাতিক মহলে জানাতে চায় বিএনপি। মামলার প্রকৃত চিত্র তুলে ধরতে ঢাকায় নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করবেন দলটি নেতারা। মঙ্গলবার(৩০ জানুয়ারি) বিকাল ৪টায় চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দেশের সব কূটনীতিকের সঙ্গে বৈঠকে বসেন দলের নেতারা। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বলে জানা গেছে। এছাড়া দলের কূটনৈতিক উইংয়ের সদস্য দলের ভাইস চেয়ারম্যান এনাম আহমেদ চৌধুরী, উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান, সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, অ্যাডভোকেট ফাহিমা নাসরীন মুন্নী উপস্থিত ছিলেন। এখানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরম্নল ইসলাম আলমগীর খালেদা জিয়ার মামলা যে ভিত্তিহীন সে সম্পর্কে ব্রিফ করেন।
এদিকে কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করার জন্য বিএনপির কূটনীতিক উইংয়ের সদস্যরা এরই মধ্যে দুটি পর্যালোচনা সভা করেছেন। এ সভা থেকে তারা খালেদা জিয়ার মামলার বিষয়ে আন্তর্জাতিক মহলকে জানানোর সিদ্ধান্ত নেন। ৪৮টি দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনার এবং ২০টি বিদেশি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের চিঠি দিয়ে আমন্ত্রণ জানান তারা। এসব দেশের মধ্যে প্রভাবশালী উন্নত রাষ্ট্রের পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশ ভারতও রয়েছে। অন্যদিকে ইউএনডিপি, জাইকা, ইউএসএআইডি, এডিপি, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকসহ ২০টি বিদেশি সংস্থা এবং প্রতিষ্ঠানের প্রধানদেরও বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এছাড়া পৃথকভাবে প্রতিবেশী একটি দেশের হাইকমিশনারকে খালেদা জিয়ার মামলা এবং দলের নেতাকর্মীদের ওপর মামলা-হামলা আর নির্যাতন বিষয়ে বিস্তারিত জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।
এদিকে রায়সহ সার্বিক বিষয়ে জনমত নিজেদের পক্ষে আনতে জোটের পরিধি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। গত রোববার রাতে ২০ দলীয় জোটে বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টিকে অন্তর্ভুক্ত করে ২১ দলীয় জোটে পরিণত করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু জোটের শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে এই পার্টির বিষয়ে শরিক কয়েকটি দলের আপত্তির কারণে শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। তবে শিগগিরই এই পার্টিকে জোটের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এছাড়া অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও কথা বলে সমর্থন নিজেদের পক্ষে আনার চেষ্টা করছে বিএনপি।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno