আজ- ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শুক্রবার  সন্ধ্যা ৭:১৪

টাঙ্গাইলের চরাঞ্চলে তামাকের বদলে ভূট্টা চাষে বাম্পার ফলনের আশা

 

দৃষ্টি নিউজ:

টাঙ্গাইলের নয়টি উপজেলার চরাঞ্চলে ভূট্টা চাষে বাম্পার ফলনের আশা করছে কৃষকরা। কৃষকরা অধীর আগ্রহে মনের খুশিতে ভূট্টার মাঠে কাজ করছে। চরাঞ্চলের যেসব এলাকা জুড়ে স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর তামাকের চাষ হতো, সেসব এলাকার অধিকাংশতেই এবার ভূট্টার চাষ করা হয়েছে। চরাঞ্চলে দিগন্ত জুরে শোভা পাচ্ছে ভূট্টার উঠতি চারা। উত্তুরে হিমেল হাওয়ায় ঝিলমিল করে দুলছে ভূট্টার সবুজপাতা।
টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের তথ্যমতে, জেলায় এবার ভূট্টা চাষের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে দুই হাজার ৮৪১ হেক্টর জমিতে এবং উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ১১ হাজার মেট্রিক টন। এর মধ্যে টাঙ্গাইল সদর উপজেলায় ১২০ হেক্টর, বাসাইলে ৯ হেক্টর, কালিহাতীতে ২২ হেক্টর, ঘাটাইলে ৮ হেক্টর, নাগরপুরে এক হাজার ৪৫০ হেক্টর, মির্জাপুরে ১২৫ হেক্টর, ভূঞাপুরে এক হাজার ৭৫ হেক্টর, দেলদুয়ারে ১৭ হেক্টর এবং গোপালপুর উপজেলায় ১৫ হেক্টর জমিতে। জেলার মধুপুর, ধনবাড়ী ও সখীপুর এ তিন উপজেলায় ভূট্টা চাষ হয়না।
সরেজমিনে দেখা যায়, ভূট্টা চাষিদের অধিকাংশই প্রান্তিক কৃষক। অন্য ফসলের তুলনায় ভূট্টা চাষ কম খরচে বেশি লাভজনক হওয়ায় ভূট্টা চাষ করছেন কৃষকরা। ভূট্টা চাষে খরচ কম ফলন বেশি। পানি সেচও তেমন বেশি দিতে হয়না। কীটনাশক ও সারের ব্যবহারও যৎসামান্য।
কৃষকরা জানায়, সহজে আবাদযোগ্য এবং অধিক লাভজনক হওয়ায় ভূট্টা চাষে তারা বেশি আগ্রহী হয়েছেন। এক বিঘা জমিতে ধান চাষ করলে ১৫ থেকে ২০ মণ ধান হয়। অপরদিকে, এক বিঘা জমিতে ভূট্টা হয় ২৮ থেকে ৩০ মন। ধান আর ভূট্টার দামেও তেমন পার্থক্য নেই। সেজন্যই গত বছরের চেয়ে এ বছর ভূূট্টা চাষ হয়েছে অনেক বেশি। জমিতে ফলনের আকৃতি ভাল হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। অন্যান্য রবি শস্যের চেয়ে ফলন বেশি হওয়ায় টাঙ্গাইল জেলায় ভূট্টা চাষে বিপ্লবের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
ভূঞাপুর উপজেলার চরাঞ্চল গাবসারা গ্রামের কৃষক মো. সাইদালী মন্ডল, চন্ডিপুর গ্রামের আব্দুল লতিফ সহ অনেকেই জানান, তারা আগে যেসব জমিতে তামাক চাষ করতেন, সেসব জমিতে এখন ভূট্টা চাষ করছেন। কোন কোন তামাক কোম্পানী তাদেরকে তামাক চাষ করার জন্য অগ্রীম টাকা দিত। কিন্তু কৃষি কর্মকর্তাদের কাউন্সিলিংয়ে তারা তামাকের চেয়ে ভূট্টা চাষকে লাভজনক ও নিরাপদ মনে করছেন। অনেকে ধান চাষের চেয়ে সহজ আবাদযোগ্য হওয়ায় অনেকে ভূট্টা চাষে ঝুঁকছেন। তারা জানান, গত বছরের চেয়ে বেশি জমিতে ভূট্টা চাষ করেছেন। এ বছর বিঘা প্রতি ৩০ মণের বেশি ফলন পাওয়ার আশা করছেন তারা।
কৃষকরা আলো জানান, বাঁচতে হলে ভূট্টা চাষ করতে হবে। কারণ অন্য ফসলের চেয়ে ভূট্টা চাষ লাভজনক। আর কৃষি অফিস থেকে ভূট্টা চাষের জন্য সময়মত বীজ, সার ও কীটনাশকও দেওয়া হয়। ভূট্টার আখ গোখাদ্য আর ডাটা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হওয়ায় মহানন্দে তারা ভূট্টা চাষ করছেন।
ভূঞাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জিয়াউর রহমান জানান, এ বছর এক হাজার ৭৫ হেক্টর জমিতে ভূট্টা চাষের লক্ষমাত্রা ধরা হয়। লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে এক হাজার ২৪৮ হেক্টর জমিতে ভূট্টা চাষ করেছেন কৃষকরা। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করছেন। চরাঞ্চলের তামাক চাষের জমিকে কৃষকরা ভূট্টা চাষের জন্য বেছে নিয়েছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের(খামারবাড়ি) উপ-পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক জানান, তামাক চাষ ক্ষতিকারক এটা অধিকাংশ কৃষক বুঝতে পেরেছে। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়মিত কাউন্সিলিং ও নহরদারি থাকায় এটা সম্ভব হয়েছে। অন্য বছরের চেয়ে বেশি জমিতে ভূট্টা চাষ হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে জেলায় এবার ভূট্টা চাষে বিপ্লব সাধিত হবে।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno