আজ- ১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বৃহস্পতিবার  সকাল ৯:৫৬

টাঙ্গাইলে সস্তা সবজি কচু চাষে ঝুঁকছে কৃষকরা

 

বুলবুল মল্লিক:


টাঙ্গাইলে সবার কাছে অতি পরিচিত সস্তা দামের সবজি কচু চাষ দিন দিন বাড়ছে। কচুতে রোগ বালাই কম ও কীটনাশক ছাড়াই আবাদ করা যায়। অন্যান্য ফসলের চেয়ে আবাদে খরচ কম ও ততটা পঁচনশীল নয়। তাই কৃষিতে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকরা কচু চাষের প্রতি ঝুঁকছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানাগেছে, টাঙ্গাইলের সদর উপজেলার চরাঞ্চল, ঘাটাইল, দেলদুয়ার, নাগরপুর ও সখিপুর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি কচু চাষ হয়। এ বছর জেলায় মোট ৭৫৭ হেক্টর জমিতে ১৬ হাজার ৬৯০ মে.টন কচু উৎপাদিত হয়েছে। কচু এমন একটি সবজি যার আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত খাওয়া যায় অথচ দামে খুবই সস্তা। লতি, ডাটা ও কচি পাতা সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কাছে সুষম পুষ্টিকর সবজি হিসেবে পরিচিত কচু পুষ্টিগুণে ভরপুর।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, কচু ‘অৎধপবধব’ গোত্রভুক্ত এক ধরনের কন্দ জাতীয় উদ্ভিদ। কচু মানুষের চাষকৃত প্রাচীন উদ্ভিদগুলোর মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সব এলাকায় কম বেশি কচু পাওয়া যায়। স্থলভূমি ও জলভূমি উভয় স্থানে কচু জন্মাতে পারে। তবে স্থলভাগে জন্মানো কচুর সংখ্যাই বেশি। রাস্তার পাশে, বাড়ির আনাচে- কানাচে, বিভিন্ন পতিত জমিতে অনাদরে-অবহেলায় অনেক সময় কচু জন্মাতে দেখা যায়। কচু বহু জাতের হয়ে থাকে। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কচু দাষের ইতিহাস খুব অল্প দিনের। প্রায় তিন দশক ধরে টাঙ্গাইলে বাণিজ্যিকভাবে কচু চাষ হচ্ছে।
কচু নানা প্রকার হয়ে থাকে। যেমন- বন কচু, বিষ কচু, কাঁটা কচু, মুখী কচু, শোলা কচু, ওল কচু, মান কচু বা ফ্যান কচু, মোকাদ্দম কচু, সাল কচু, দুধ কচু, ঘেঁটু কচু, রক্ত কচু, পঞ্চমুখী বা থামা কচু, মৌলবী কচু, গাঢ় কচু ও ছাতি কচু ইত্যাদি। বনে জঙ্গলে যেসব কচু নিজে থেকে জন্মায় সেগুলোকে সাধারণত ‘বুনো কচু’ বলা হয়। এ ধরনের কচুর অনেকগুলো জাত খাবারের উপযোগী নয়। বিভিন্ন জাতের কচু অঞ্চলভেদে ভিন্ন ভিন্ন নামেও পরিচিত। তবে কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে মুখীকচু, পানিকচু, বারি পানিকচু-১, বারি পানিকচু-২, বারি পানিকচু-৩, বারি পানিকচু-৪, বারি পানিকচু-৫ ও পঞ্চমুখী কচু নামীয় কচুর বাণিজ্যিক চাষের বর্ণনা পাওয়া যায়।
কৃষি বিভাগ জানায়, এছাড়া স্থানীয়ভাবে কিছু জাতের কচু জন্মায়- যা অঞ্চল ভেদে স্বল্প পরিমানে চাষ হয়। এদের মধ্যে মানকচু বা ফ্যানকচু বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। মুখীকচুর বিলাসী ও বারীমুখীকচু-২ নামে দুইটি জাত রয়েছে। এই কচু প্রতি বিঘায় ৬০-৭০ কেজি বীজ রোপন করতে হয় এবং প্রতি বিঘায় ১২৫ থেকে ১৫০ মন পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। পানিকচুর জাত বারী পানিকচু-১ বা লতিরাজ নামে অপর একটি জাত আছে। এই লতিরাজ প্রতি বিঘায় ৯০ থেকে ৯৫ মন লতি ও ৬০ থেকে ৭০ মন কচু উৎপাদিত হয়। বারী পানিকচু-২ প্রতি বিঘায় ৯০ থেকে ১০৫ মন কচু ও ৩৫ থেকে ৪০ মন লতি উৎপাদিত হয়। বারি পানিকচু-৩ প্রতি বিঘায় ১২৫ থেকে ১৬০ মন কচু ও ২৫ থেকে ৩০ মন লতি উৎপাদিত হয়। বারি পানিকচু-৪ প্রতি বিঘায় ১২৫ থেকে ১৫০ মন কা- ও ২০ থেকে ৩০ মন লতি উৎপাদিত হয়। বারি পানিকচু-৫ প্রতি বিঘায় ১২৫ থেকে ১৫০ মন কচু ও ২০ থেকে ৩০ মন লতি উৎপাদিত হয়।
কৃষি বিভাগের সূত্রমতে, এ বছর জেলায় উৎপাদিত কচুর মধ্যে ১৯৩ হেক্টর জমিতে দুই হাজার ২৪৫ মে.টন পানিকচু, ৫০৫ হেক্টর জমিতে ১৩ হাজার ২২২ মে.টন পঞ্চমুখী কচু ও ৫৯ হেক্টর জমিতে এক হাজার ২২৩ মে.টন মুখী কচু উৎপাদিত হয়েছে। সূত্র জানায়, পানিকচুর হেক্টর প্রতি উৎপাদন ১১.৬৩ মে.টন, পঞ্চমুখীকচুর হেক্টর প্রতি উৎপাদন ২৬.১৮ মে.টন ও মুখীকচুর হেক্টর প্রতি উৎপাদন ২০.৮২ মে.টন।
মধুপুরের কচু চাষী রমেন্দ্র বর্মন, শাজাহান মিয়া, ঘাটাইলের সাজ্জাদ হোসেন সজিব, সখিপুরের লাল মিয়া, আব্দুর রহমান, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার চরাঞ্চল চৌবাড়িয়ার আব্দুল মান্নান, হীরাগোটার আব্দুল মজিদ, কাশীনগরের সোহেল মিয়া, দেলদুয়ার উপজেলার রহিম বক্স, সমির হোসেন সহ অনেকেই জানান, ধান বা অন্য ফসল চাষের চেয়ে লাভজনক হওয়ায় তারা কচু আবাদে আগ্রহী হয়ে ওঠছেন। কচুর বাজার মূল্যও ভাল। খোলা বাজারে পানিকচু ২০-২৫ টাকা কেজি, পঞ্চমুখী কচু ৩০-৩৫ টাকা ও মুখীকচু ২৫-৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কচু চাষে তাদের বিঘা প্রতি উৎপাদন খরচ হয় ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা। এ বছর কচুর ফলন ভাল হওয়ায় প্রতি হেক্টরে এক থেকে দেড় লাখ টাকা নীট মুনাফা অর্জিত হবে বলে মনে করেন তারা।
জেলা কৃষিসম্প্রসারণ কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক জানান, জেলায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কচুর চাষ প্রতি বছর বাড়ছে। কচু চাষে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়না, সাথী ফসল বা সবজি হিসেবেও চাষ করা যায়, খরচ কম, সস্তা হলেও সহজে বিক্রি করা যায়, লাভও হয় ভালো। তাই কৃষকরা কচু চাষের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠছে। এছাড়া কচু শাকে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন এ,বি,সি, ক্যালসিয়াম ও লৌহ রয়েছে। ভিটামিন এ জাতীয় খাদ্য রাতকানা প্রতিরোধ করে আর ভিটামিন সি শরীরের ক্ষত সারাতে সাহায্য করে। কচু দামে বেশ সস্তা হওয়ায় দরিদ্র পরিবারের গর্ভবতী মহিলারা ভিটামিন ও আয়রনের চাহিদা পূরণের জন্য অনেক সময় বেশি বেশি কচু খেয়ে থাকেন। জ্বর বিনাশে রান্না করা দুধ কচু অত্যন্ত কার্যকরী ওষুধি।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno