আজ- ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ বৃহস্পতিবার  বিকাল ৪:৫৬

টাঙ্গাইল কোর্ট চত্ত্বরে নকল কাবিনের ছড়াছড়ি ॥ ৮০ হাজার টাকার কাবিন ৮ লাখ টাকা!

 

দৃষ্টি নিউজ:


টাঙ্গাইল কোর্ট চত্ত্বরে দীর্ঘদিন ধরে নকল কাবিনের ছড়াছড়ি চলছে। এক শ্রেণির দালাল কাজীদের সিল তৈরি করে কাবিননামার নকল বইয়ে দেদারছে বিয়ে রেজিস্ট্রি করছে। অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও ঘরপালানো প্রেমিক-প্রেমিকা এবং পরকীয়াদের বিয়ে করিয়ে চক্রটি হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, টাঙ্গাইল জেলা সদরের কোর্ট চত্ত্বর পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ড এলাকা। ওই ওয়ার্ডের তালিকাভুক্ত মুসলিম বিয়ে ও তালাক নিবন্ধক(কাজী) ইউসুফ আলী। তিনি ছাড়াও পৌরসভার ২, ১৬ ও ১৮নং ওয়ার্ডের কাজীরাও কোর্ট এলাকার বিয়ে ও তালাক নিবন্ধন করে থাকেন। এছাড়া কতিপয় ব্যক্তি কাজী সেজে ভূয়া কাবিননামা ও সিল-স্বাক্ষর ব্যবহার করে দেদারছে বিয়ে ও তালাক রেজিস্ট্রি করা হচ্ছে। কাজী না হয়েও বিগত ২০১৩ সাল থেকে দেদারছে বিয়ে রেজিস্ট্রি করে যাচ্ছেন টাঙ্গাইল সদর উপজেলার গালা গ্রামের আব্দুস ছাত্তার। তিনি পৌরসভার ১৬নং ওয়ার্ডের কাজীর সিল নিজ নামে তৈরি করে প্রতিনিয়ত বিয়ে রেজিস্ট্রি করছেন। অথচ জেলার কাজীদের তালিকায় ১৬নং ওয়ার্ডের কাজী হিসেবে ইউসুফ আলীর নাম রয়েছে। সরকারি বই না পাওয়ায় ভূয়া বই কিনে তিনি এ জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে বিয়ে ও তালাক রেজিস্ট্রি করছেন। সম্প্রতি ভূঞাপুর উপজেলার নিকরাইল গ্রামের নওশের আলীর ছেলে লাল মিয়ার কাবিননামায় ৮০ হাজার টাকার পরিবর্তে ৮ লাখ টাকার কাবিনের নকল প্রদান করায় জালিয়াতির বিষয়টি প্রকাশ পায়।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, কোর্ট চত্ত্বরে কাজীদের বিয়ে ও তালাক নিবন্ধনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে নকল কাবিননামায় জাল সিল-স্বাক্ষরে বিয়ে ও তালাক রেজিস্ট্রি করে আসছে। তারা একই সাথে তালাক ও বিয়ে নিবন্ধন করে থাকে। জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা অপ্রাপ্ত বয়স্কদের নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে এফিডেভিট করে প্রাপ্ত বয়স্ক তৈরি এবং ব্যাকডেটে তালাক ও বিয়ে নিবন্ধন করে আইনকে ফাঁকি দেয়ার প্রয়াস পাচ্ছেন। কোন অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও ঘরপালানো প্রেমিক-প্রেমিকা এবং পরকীয়ায় জড়িতরা কোর্ট চত্ত্বরে এলেই ওই দালালরা নানা ছলা-কলায় ভুলিয়ে হাত করে নেয়। পরে প্রয়োজন মাফিক নকল কাবিননামা, তালাকনামা এবং বয়স প্রমাণের এফিডেভিটের ঘোষণা তৈরি করে দেয়।
টাঙ্গাইল পৌরসভার ১৬নং ওয়ার্ডের বিয়ে ও তালাক নিবন্ধক(কাজী) হিসেবে নিজ নামে সিল তৈরি করে আব্দুস ছাত্তার সরকারি বই না পাওয়ায় ভূয়া বই ক্রয় করে দেদারছে বিয়ে ও তালাক রেজিস্ট্রি করছেন। এসব জালিয়াতির কাজে তার সেনাপতি হিসেবে কাজ করছেন, জালিয়াতি মামলায় অভিযুক্ত আইনজীবী সহকারী(মুহুরী) জনৈক আবুল হাসনাত রাসেল। চক্রটি তিনিই নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। এ চক্রের অন্য প্রধানরা হচ্ছেন- সাইফুল, কাওছার, হানিফ, শাহাদত, আকরাম, লতিফ, আমেনা বেগম, মুসলিম ও আবুবকর প্রমুখ। এসব ব্যক্তিরা আব্দুস ছাত্তারের কাছ থেকে কাবিন ও তালাকনামার নকল বই এনে প্রতিনিয়ত বিয়ে ও তালাক রেজিস্ট্রি করে যাচ্ছেন। ভূয়া কাজী ও তার সহযোগী চক্রের অপকর্ম জেনেও নীরব ভূমিকা পালন করছেন, জেলা রেজিস্ট্রার আব্দুস সালাম আজাদ ও প্রধান সহকারী শাকিল আহমেদ। সম্প্রতি ভূঞাপুর উপজেলার নিকরাইল গ্রামের নওশের আলীর ছেলে লাল মিয়ার সংসারে দাম্পত্য কলহ দেখা দিলে তার স্ত্রী দেনমোহরের দাবিতে আদালতে মামলা দায়ের করেন। বিয়ের সময় দেয়া কাবিননামায় ৮০ হাজার টাকা দেনমোহর উল্লেখ থাকলেও মামলায় জমা দেয়া কাবিননামার নকলে ৮ লাখ টাকা দেনমোহর উল্লেখ করা হয়। তখনই কাবিনের জাল-জালিয়াতি ধরা পড়ে। ভূয়া কাজী আব্দুস ছাত্তারের ভূয়া বিয়ে ও তালাক রেজিস্ট্রির বিষয়টি জনসম্মুখে প্রকাশ পেয়ে যায়। এ নিয়ে অন্যান্য কাজীদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
প্রতারণার শিকার দরিদ্র ভ্যান চালক লাল মিয়া বলেন, রাসেল মুহুরী নামে এক লোক ৮০হাজার টাকা দেনমোহরে তার বিয়ের কাবিন করে দেয়। পরে তার স্ত্রীর সাথে মনোমালিন্য হওয়ায় মামলা দায়ের করে। মামলায় দেখতে পান তার কাবিনের দেনমোহর ৮০ হাজারের স্থলে লেখা হয়েছে ৮ লাখ টাকা। ওই একই কাবিনের নকলে টাঙ্গাইল পৌসভার ১৬নং ওয়ার্ডের কাজী হিসেবে আব্দুস ছাত্তারের নামযুক্ত সিল রয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে আব্দুস ছাত্তার জানান, লাল মিয়ার বিয়ের রেজিস্ট্রি তিনি করিনি। আবুল হাসনাত রাসেল তার কাছ থেকে বই নিয়ে রেজিস্ট্রি করেছে। তিনি শুধু স্বাক্ষর ও সীল দিয়েছেন। তিনি আরো জানান, ১৬নং ওয়ার্ডের কাজী হিসেবে নিয়োগ পেতে তিনি আদালতে মামলা দায়ের করেছেন, মামলাটি চলমান।
জেলা নিকাহ্ ও তালাক রেজিস্ট্রার আব্দুস সালাম আজাদ জানান, জেলার কাজীদের তালিকা অনুযায়ী টাঙ্গাইল পৌরসভার ১৬নং ওয়ার্ডের কাজী হিসেবে ইউসুফ আলী নিয়োগপ্রাপ্ত। আব্দুস ছাত্তার নামে কোন কাজী জেলার তালিকায় নেই। যদি এরকম থেকে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno