আজ- ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শুক্রবার  বিকাল ৪:২১

টাঙ্গাইলে নিজ নামে দপ্তরের অ্যাকাউণ্ট খুলে সরকারি অর্থ লোপাট! কাগজপত্র জব্দ

 

দৃষ্টি নিউজ:

অনিয়মের অভিযোগে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো কার্যালয়ের সহকারী পরিচালকের কক্ষ মঙ্গলবার সকালে সিলগালা করা হয়।

টাঙ্গাইলের উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর সহকারী পরিচালক একেএম বজলুর রশীদ তালুকদার কার্যালয়ের যৌথ ব্যাংক অ্যাকাউণ্ট থাকা সত্তে¡ও নিজ নামে পৃথক অ্যাকাউণ্ট খুলে শিখন প্রকল্পের প্রায় কোটি টাকা নয়ছয় করেছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসকের নির্দেশে মঙ্গলবার(১ অক্টোবর) সকালে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রোকনুজ্জামান উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো কার্যালয়ের অনিয়ম সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র জব্দ এবং কার্যালয় সিলগালা করেন। পরে মঙ্গলবার বিকালে কার্যালয়ে অন্যান্য কাজ করার সার্থে সিলগালা খুলে দেয়া হয়।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(শিক্ষা ও আইসিটি) সেলিম আহমদকে আহŸায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

জানা যায়, টাঙ্গাইল জেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর সহকারী পরিচালক হিসেবে কর্মরত একেএম বজলুর রশীদ তালুকদার সিরাজগঞ্জ জেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। অভিযোগে প্রকাশ, একনেক থেকে অনুমোদিত মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্পের(৬৪ জেলা) শিখন কর্মসূচি বাস্তবায়নে ডিপিপি’র নির্দেশনানুযায়ী টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ও জেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর সহকারী পরিচালকের যৌথ সাক্ষরে একটি চলতি হিসাব(চলতি হিসাব নং-৬০০৬১০২০০০৭২৫) টাঙ্গাইলের কোর্ট বিল্ডিং শাখা সোনালী ব্যাংক লিমিটেডে খোলা হয়। ওই যৌথ হিসাব চলমান থাকা সত্তে¡ও সহকারী পরিচালক একেএম বজলুর রশীদ তালুকদার একই শাখায় একই শিরোনামে নিজ সাক্ষরে অন্য একটি চলতি ব্যাংক হিসাব(নং-৬০০৬১০২০০১৪৫৬) খোলেন। এ চলতি হিসাব খুলতে তিনি শশুরবাড়ির ঠিকানা(গ্রাম-ক্ষুদিরামপুর, করটিয়া, টাঙ্গাইল) ব্যবহার করেন। অথচ উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর কার্যালয়ের ঠিকানা হচ্ছে- জেলা প্রাথমিক শিক্ষা ভবন, আকুরটাকুর পাড়া, টাঙ্গাইল। শেষোক্ত হিসাব নম্বরে তিনি শিখন প্রকল্পের ৩০লাখ ১১হাজার ৭৯০ টাকা জমা করেন এবং ৩০লাখ ৯হাজার ৭৯০ টাকা একক সাক্ষরে উত্তোলন করেন।

অপরদিকে, সিরাজগঞ্জ জেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর অতিরিক্ত দায়িত্ব( ২০১৮সালের ১২ ফেব্রæয়ারি থেকে ২০১৯ সালের ২৮ জুলাই পর্যন্ত) পালনকালে তিনি মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্পের(৬৪ জেলা) শিখন কর্মসূচি বাস্তবায়নে নিয়মানুযায়ী সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও জেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর সহকারী পরিচালকের যৌথ সাক্ষরে একটি চলতি হিসাব(নং-৪২১৯২০২০০০৫৪৯) সিরাজগঞ্জের কোর্ট ভবন শাখা সোনালী ব্যাংক লিমিটেডে বিদ্যমান রয়েছে। এতদসত্তে¡ও সহকারী পরিচালক একেএম বজলুর রশীদ তালুকদার সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের সিরাজগঞ্জ প্রধান শাখায় একই শিরোনামে একক সাক্ষরে অন্য একটি চলতি হিসাব(নং-৪২১৫০০২০০১০১৮) খোলেন। ওই হিসাব নম্বরে শিখন প্রকল্পের সব টাকা জমা করা হয়। পরে ওই হিসাব থেকে ৫৮লাখ ৭হাজার ৩০৬টাকা একক সাক্ষরে উত্তোলন করা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, পিপিআর আনুযায়ী ২৫ হাজার টাকার উর্ধে এবং ৫লাখ টাকা পর্যন্ত বছরে ২০লাখ টাকার মধ্যে পণ্য ও সেবা ক্রয়ের ক্ষেত্রে স্পট কোটেশন প্রক্রিয়া অবলম্বন করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু তিনি দুটি উপজেলায় বিধি অমান্য করে এক লাখ ৮৪হাজার ৫০০ টাকা করে মোট তিন লাখ ঊনসত্তুর হাজার টাকার শিক্ষক প্রশিক্ষণের উপকরণ ক্রয় করেছেন। এছাড়া সহকারী পরিচালক কার্যালয়ের কম্পিউটার নিজস্ব বাসভবনে রেখে ব্যবহার করতেন। কোন তথ্য, ফাইলপত্র তার অফিস সহকারীকে জানতে দিতেন না। ফলে অফিস সহকারীকে কর্তৃপক্ষ প্রধান কার্যালয়ে সংযুক্ত করেন।

উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর সহকারী পরিচালক একেএম বজলুর রশীদ তালুকদারের অনিয়মের বিষয়টি ব্যুরোর টাঙ্গাইল জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. হুমায়ুন কবীর সরদারের গোচরীভুত হলে তিনি উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মহাপরিচালকে লিখিতভাবে অবহিত করেন। তিনি জানান, সহকারী পরিচালক একেএম বজলুর রশীদ তালুকদার চলতি বছরের ২৫ জুলাই টাঙ্গাইলে যোগদান করেন। এরপর তিনি অফিসের বেশকিছু গুরুতর বেআইনী কার্যকলাপের তথ্য পান। বিষয়টি তিনি টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ও ব্যুরোর মহাপরিচালককে অবহিত করেন।

টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলামের নির্দেশে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রোকনুজ্জামান মঙ্গলবার সকালে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো কার্যালয়ে গিয়ে সহকারী পরিচালকের অনিয়ম সংক্রান্ত বিভিন্ন কাগজপত্র জব্দ ও কার্যালয়ের সহকারী পরিচালকের কক্ষ সিলগালা করেন।

এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর সহকারী পরিচালক একেএম বজলুর রশীদ তালুকদারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং এটি তার বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্র বলে জানান।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রোকনুজ্জামান জানান, অনিয়মের কাগজপত্র জব্দ করা হয়েছে। কার্যালয়ে অন্যান্য কাজ করার সার্থে পরে সিলগালা খুলে দেয়া হয়। এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(শিক্ষা ও আইসিটি) সেলিম আহমদকে আহŸায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(শিক্ষা ও আইসিটি) সেলিম আহমদ জানান, তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হচ্ছেন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তারেক মশরুর ও শিক্ষা দপ্তরের সূচি রাণী সাহা।

টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলাম জানান, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর সহকারী পরিচালকের অনিয়ম সংক্রান্ত কাগজপত্র জব্দ করা হয়েছে। তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রতিবেদন দাখিল করবে।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno