আজ- ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ শুক্রবার  রাত ৩:৪৮

টাঙ্গাইল-৫ আসনে কোন্দল মাথায় নিয়ে প্রার্থীদের দৌঁড়ঝাপ

 

দৃষ্টি নিউজ:


একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে টাঙ্গাইল-৫(সদর) আসনে নির্বাচনকে ঘিরে চলছে সরব রাজনীতি। এ আসনে সব দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা বেশ জোরে শোরে গণসংযোগ চালাচ্ছেন। বড় দুই দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে কুশল বিনিময়, নির্বাচনী এলাকার অলি-গলিতে পোস্টার ও লিফলেট সেঁটে জনগণের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন। কেই সঙ্গে তৃণমূল নেতাদের সমর্থন ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সন্তুষ্ট করতে লবিং করছেন।
জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানাগেছে, প্রথম জাতীয় সংসদ থেকে দশম সংসদ পর্যন্ত কাকতালীয় ভাবে এ আসনে বিজয়ী প্রার্থীর দলই সরকার গঠন করেছে। তবে, পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে মেজর জেনারেল (অব.) মাহমুদুল হাসান জয়লাভ করলেও পরবর্তী সময়ে তিনি বিএনপিতে যোগদান করেন। সে হিসেবে টাঙ্গাইল-৫ সরকার গঠনেরই আসন। ১৯৭৩ সালে প্রথম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী আবদুল মান্নান জয়লাভ করেছিলেন। এরপর যথাক্রমে বিএনপির আবদুর রহমান (১৯৭৯), জাতীয় পার্টির মীর মাজেদুর রহমান (১৯৮৬), জাতীয় পার্টির মেজর জেনারেল (অব.) মাহমুদুল হাসান( ১৯৮৮), পরবর্তীতে বিএনপির মে.জে. (অব.) মাহমুদুল হাসান (১৯৯১), বিএনপির মে.জে. (অব.) মাহমুদুল হাসান(১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি), আওয়ামী লীগের আবদুল মান্নান (১৯৯৬ সালের ১২ জুন), বিএনপির মাহমুদুল হাসান (২০০১), জাতীয় পার্টির আলহাজ আবুল কাশেম (২০০৮) এবং আওয়ামী লীগের আলহাজ ছানোয়ার হোসেন (২০১৪) পর্যায়ক্রমে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
আগামি নির্বাচন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীর মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা সীমাবদ্ধ থাকলেও দু’টি দলেই রয়েছে কোন্দলের সমস্যা। আওয়ামী লীগের কোন্দল গোপণে হলেও বিএনপির এ সমস্যা তীব্র, প্রকট ও প্রকাশ্য। এই সেদিনও আওয়ামী লীগের জেলার রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতেন শহরের আলোচিত ‘খান পরিবার’। খান পরিবারের চার ভাইয়ের জ্যেষ্ঠ আমানুর রহমান খান রানা এমপি বীরমুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমদ হত্যা মামলায় বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। একই মামলায় অপর তিন ভাই যথাক্রমে ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাকন, টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র ও শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সহিদুর রহমান খান মুক্তি ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পা আত্মগোপণে রয়েছেন। চার ভাইকেই জেলার দল ও অঙ্গ সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি সম্মেলনের মধ্য দিয়ে গঠিত হলেও সঙ্গত কারণেই কমিটিতে তাদের স্থান হয়নি। জেলার রাজনীতি থেকে ‘খান পরিবার’ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লেও তাদের অনেক অনুসারী রয়ে গেছে। অপরদিকে, আওয়ামী রাজনীতিতে যোগ হয়েছেন খান পরিবারের বিপক্ষ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ থেকে আসা বর্তমান পৌর মেয়র জামিলুর রহমান মিরন এবং জার্মান প্রবাসী দুই ভাই গোলাম কিবরিয়া(বড় মনি) ও তানভীর হাসান(ছোট মনি)। বড় মনি ও ছোট মনি এক সময় মুরাদ সিদ্দিকীর ঘনিষ্ঠজন ছিলেন। আগামি নির্বাচনে দলের প্রার্থী খান পরিবারের মনমতো না হলে তাদের অনুসারীরা দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করবে অনেকেই এ রকম ধারণা পোষণ করেন। এ আসনের বর্তমান এমপি আলহাজ ছানোয়ার হোসেন। অনেকটা ক্লিন ইমেজের এ এমপি আগামি নির্বাচনেও মনোনয়ন চাইবেন। খান পরিবারের সমর্থক হিসেবে তার ক্লিন ইমেজে প্রলেপ দেয়ার চেষ্টা হলেও তিনি আওয়ামী রাজনীতির মূলধারায় নিজের অবস্থানকে ধরে রাখতে সচেষ্ট রয়েছেন।
বহুদিন থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেয়ার চেষ্টা করছেন সিদ্দিকী পরিবারের অন্যতম সদস্য মুরাদ সিদ্দিকী। এর আগে তিনি এ আসন থেকে পরপর তিনবার জাতীয় সংসদ নির্বাচন করেছেন। প্রতিবারই উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ভোট পেয়েছেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জেলার ৮টি আসনের মধ্যে তিনটিতে নির্বাচন হয়েছিল। তার একটি টাঙ্গাইল-৫(সদর)। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে শত প্রতিকূলতার মধ্যেও মুরাদ সিদ্দিকী প্রায় ৬০ হাজার ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছিলেন। তার আগে নবম নির্বাচনে তিনি ৪০ হাজার ৪৫৬ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছিলেন। মুরাদ সিদ্দিকীর সমর্থকদের ধারণা তার প্রাপ্ত ভোটগুলো আওয়ামী লীগ-বিএনপি-জাপার বাইরের। তাকে যদি আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেয়া হয় তাহলে দলীয় ভোটের সঙ্গে তার ভোট যুক্ত হলে তিনি অনায়াসে এমপি নির্বাচিত হবেন। আওয়ামী লীগ থেকে তিনি এখনো কোনো গ্রিন সিগনাল পাননি, তবে দলীয় মনোনয়ন পেতে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। এছাড়া প্রার্থী হিসেবে পৌর মেয়র জামিলুর রহমান মিরন ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খোরশেদ আলমের নামও শোনা যাচ্ছে। মনোনয়নের ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রাজ্ঞ রাজনীতিক ফজলুর রহমান খান ফারুকের সমর্থন যার প্রতি থাকবে তিনিই লড়বেন এ আসন থেকে- এমনটাই ধারণা আ’লীগ নেতাকর্মীদের। এ কারণে এখনো স্পষ্ট নয়, কে পাচ্ছেন দলীয় মনোনয়ন। আবার আওয়ামীলীগ জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নিলে এ আসনটি মহাজোটের অন্যতম শরিকদল জাতীয়পার্টির প্রার্থীর হবে- এমন আলোচনা প্রকট।
অপরদিকে, জেলা শহরে বিএনপির কোন্দল এতটাই তীব্র ও প্রকট যে আগামি নির্বাচনে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে- এটা স্পষ্ট। এ কোন্দল নবগঠিত জেলা বিএনপির কমিটিকে কেন্দ্র করে তীব্র, প্রকট ও প্রকাশ্য রূপ পায়। সম্প্রতি ঘোষিত কমিটির বিপক্ষে অবস্থান নেয়া বিদ্রোহীদের সঙ্গে প্রায়ই ঘটছে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা। দু’পক্ষই আলাদা হয়ে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালন করছেন। পাল্টাপাল্টি সভাকে কেন্দ্র করে গোলযোগের কারণে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করায় কোন্দল আরো তীব্রতর হয়েছে। ইতোমধ্যে চার বিদ্রোহীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির মূলধারার নেতা-কর্মীদের মতে কমিটিকে নিয়ে সামান্য কোন্দল হলেও আগামি নির্বাচনে প্রার্থীতা নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। আগামি নির্বাচনে বিএনপি থেকে প্রার্থী হবেন মেজর জেনারেল (অব.) মাহমুদুল হাসান। মনোনয়ন চাইবেন, কেন্দ্রীয় জাতীয়তাবাদী যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য খন্দকার আহসান হাবিব, জেলা বিএনপির সভাপতি কৃষিবিদ শামসুল আলম তোফা, জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি ছাইদুল হক ছাদু ও সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল। তবে দলের নেতা-কর্মীরা মনে করেন মাহমুদুল হাসান হেভিওয়েট প্রার্থী, তিনিই মনোনয়ন পাবেন। ইতোপূর্বে এ আসন থেকে তিনি চার বার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। তারা মনে করেন, দলে যতই কোন্দল থাকুক মাহমুদুল হাসানের নিজস্ব ঘরাণার কর্মী-সমর্থকরা বরাবরের মতো এবারো তার পক্ষে কাজ করে তার জয়কে নিশ্চিত করবে।
জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইবেন ক্লিনম্যান হিসেবে পরিচিত আলহাজ আবুল কাশেম, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুস সালাম চাকলাদার ও জেলা জাপার সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আবুল কাশেম মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন। কিন্তু পুরো সময় তিনি সংসদ সদস্য থাকতে পারেননি। ঋণ সংক্রান্ত বিষয়ে দায়ের করা মামলায় তিনি সংসদ সদস্য পদ হারান এবং বিএনপির মে.জে.(অব.) মাহমুদুল হাসানকে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়। জাপা এবার জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করলে এ আসনের দাবিদার হিসেবে জাতীয়পার্টির প্রেসিডিয়াম মেম্বার আবুল কাশেম বা জেলা জাপার সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হকের প্রার্থীতা চাইবে। একক কিংবা পৃথক জোট করলেও এ আসনের মনোনয়ন জাপার হাতে থাকার সম্ভাবনাই বেশি। তবে, জাতীয়পার্টির প্রেসিডিয়াম মেম্বার আবুল কাশেম মনোনয়ন চাইলেও বর্তমানে তিনি মাঠে নেই। জেলা জাপার সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক দিনরাত প্রচারণা চালাচ্ছেন। নতুন মুখ হিসেবে তার প্রচারণায় জাপা’র নেতাকর্মীরা আবার উজ্জীবিত হয়েছে।
এদিকে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নতুনমুখ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী পীরজাদা সৈয়দ শফি উল্লাহ মনির। টাঙ্গাইল সদর উপজেলার বাঘিল ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামের স্বনামধন্য মরহুম ইয়াকুব আলী পীর সাহেবের ছোট ছেলে তিনি। বাবার দরবারের আশেকান ও মুরিদান ছাড়াও অনুদানের কারণে এলাকায় দানবীর হিসেবে সুনাম রয়েছে। ইনডেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান পীরজাদা শফি উল্লাহ মনির টাঙ্গাইল-৫(সদর) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও ভোটের রাজনীতিতে বড় ফ্যাক্টর হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক বোদ্ধারা। শফিউল্লাহ মনিরের অনুসারীদের অধিকাংশই বিএনপি ও আওয়ামীলীগের কর্মী। দল-মত নির্বিশেষে তিনি এলাকায় জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। প্রার্থীতা ঘোষণার দিন তিনি নিজ বাড়িতে ২০ হাজার লোকের খাওয়ার আয়োজন করেন। সেখানে সকল দল-মতের লোকজন অংশ নেন। রাজনৈতিক বোদ্ধারা ধারণা করছেন, পীরজাদা শফি উল্লাহ মনির প্রার্থী হলে আওয়ামীলীগ-বিএনপি ও জাতীয়পার্টির ভোটে ভাগ বসাবেন। সে ক্ষেত্রে অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী মুরাদ সিদ্দিকীর কপালে এবার ‘সিঁকে ছিড়তেও পারে’।
এ আসনে বরাবরের মতো এবারও স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন সৈয়দ খালেদ মোস্তফা। তিনি দীর্ঘদিন থেকে পায়ে হেটে মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট চাইছেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হাওয়ায় ভেসে বেড়াচ্ছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। দলীয় কার্যক্রম থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানও তারা বর্ণাঢ্যভাবে আয়োজন করছেন। অপরদিকে হামলা-মামলায় পর্যুদস্ত বিএনপি এখনো গা ঝাড়া দেয়নি। তবে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের আশায় নীরবে প্রতীক্ষা করছে বিএনপির সমর্থকরা। এদিকে, টাঙ্গাইলের প্রতাপশালী সিদ্দিকী পরিবারের শেষ প্রদীপ মুরাদ সিদ্দিকীর কর্মী-সমর্থকরাও অপেক্ষা করছেন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের।
এ আসনে মোট ভোটার তিন লাখ ৭৪ হাজার ৬৫২ জন। এরমধ্যে নারী ভোটার এক লাখ ৮৮ হাজার ৫০৪ জন ও পুরুষ ভোটার এক লাখ ৮৬ হাজার ১৪৮জন।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno