আজ- ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শনিবার  সকাল ১১:৫৯

টাঙ্গাইল-৬ আসন আ’লীগ ধরে রাখতে চায়, বিএনপির ইচ্ছা পুনরুদ্ধার

 

দৃষ্টি নিউজ:

আগামি একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে টাঙ্গাইল-৬ (নাগরপুর-দেলদুয়ার) আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা কোমর বেধে মাঠে নেমেছেন। সম্ভাব্য প্রার্থীদের পোস্টার, ফেস্টুন ও ব্যানারে ছেয়ে গেছে দুই উপজেলার দর্শনীয় স্থান। আওয়ামীলীগ এ আসনটি ধরে রাখতে সচেষ্ট আর বিএনপি আসনটি পুনরুদ্ধার করতে চায়।
টাঙ্গাইল-৬ আসনটি নাগরপুর ও দেলদুয়ার উপজেলা নিয়ে গঠিত। অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত শুধুমাত্র নাগরপুর উপজেলা নিয়েই টাঙ্গাইল-৬ আসন ছিল। দেলদুয়ার উপজেলা টাঙ্গাইল-৫(সদর) আসনের সাথে যুক্ত ছিল। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদের সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্বাচনী আসন পুনর্বিন্যাস করে দেলদুয়ার উপজেলাকে টাঙ্গাইল-৬ আসনের সাথে যুক্ত করে। দেলদুয়ার উপজেলাকে পুণর্বিন্যাস করে নাগরপুরের সাথে সংযুক্ত করায় দীর্ঘদিন পর আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জয়লাভের সম্ভাবনা দেখা দিলেও দলীয় কোন্দলের কারণে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে পরাজয় বরণ করতে হয়। এ আসনে ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী খন্দকার আব্দুল বাতেন। ১৯৭৩ সালের পর এ আসনে নৌকার প্রার্থীরা বারবার পরাজিত হয়েছেন। ২০০৮ সাল পর্যন্ত প্রতিটি নির্বাচনেই বিএনপি ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী এমপি হয়েছেন। বিগত নির্বাচনগুলোতে বিএনপি প্রার্থী পাঁচবার, আওয়ামী লীগ প্রার্থী দুইবার, জাতীয় পার্টির প্রার্থী দুইবার ও স্বতন্ত্র প্রার্থী একবার নির্বাচিত হন।
স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ব্যারিস্টার শওকত আলী খান জয়লাভ করেন। এরপর এ আসন থেকে জাতীয় পার্টি ও বিএনপির প্রার্থীরা বিজয়ী হন। ১৯৭৯ সালে বিএনপির প্রার্থী নূরমোহাম্মদ খান আওয়ামী লীগ প্রার্থী সেতাব আলী খানকে পরাজিত করে বিজয়ী হন। ১৯৮১ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলে নূর মোহাম্মদ খান বিএনপি ছেড়ে জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেন। ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির নূর মোহাম্মদ খান আওয়ামী লীগের এআর খানকে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৮৮ সালে কোন বড় রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ না নিলেও জাতীয় পার্টি এককভাবে নির্বাচন করে। ওই নির্বাচনে নূর মোহাম্মদ খান বিজয়ী হন। ১৯৯১ সালে বিএনপির আবু তাহের বিজয়ী হন। আওয়ামী লীগের প্রয়াত আব্দুল মান্নান হেরে যান। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের খন্দকার আব্দুল বাতেন বিএনপির অ্যাডভোকেট গৌতম চক্রবর্তীর কাছে পরাজিত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনেও বিএনপি প্রার্থী অ্যাডভোকেট গৌতম চক্রবর্তীর কাছে হেরে যান তিনি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে খন্দকার আব্দুল বাতেন বিজয়ী হন।
দলীয় নেতাকর্মীদের ধারণা, আগামী সংসদ নির্বাচনে অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন না হলে আসনটি হাত ছাড়া হবে আওয়ামী লীগের। এদিকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম দলীয় মনোনয়ন পেতে জোরপ্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি প্রতিনিয়ত দুই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সভা-সমাবেশ করছেন। জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক সভাপতি আহ্সানুল ইসলাম টিটু, দলীয় মনোনয়ন পেতে আগে থেকেই তৎপর রয়েছেন। বর্তমান এমপি খন্দকার আব্দুল বাতেন আগামী নির্বাচনেও দলীয় মনোনয়ন পেতে প্রচারে যুক্ত রয়েছেন। এছাড়াও আওয়ামী লীগ নেতা তারেক শামস খান হিমু , শেখ আব্দুর রহিম ইলিয়াস, টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক ইনসাফ আলী ওসমানী, ব্যবসায়ী সৈয়দ মাহমুদুল ইলা লিলু আগামি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। সম্ভাব্য এসব প্রার্থীরা প্রায় সবাই এলাকার বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সহায়তা ও জনকল্যাণমূলক কাজে শরিক হচ্ছেন।
এদিকে হারানো আসন পূনরুদ্ধারে আগে থেকেই মাঠে নেমেছে বিএনপি। অ্যাডভোকেট গৌতম চক্রবর্তী টানা দুইবার এ আসন থেকে বিজয়ী হন। ২০০১সালে বিজয়ী হয়ে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। এবারও বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে এলাকায় গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন। বিএনপির আরেক হেভিওয়েট প্রার্থী সাবেক মন্ত্রী নূর মোহাম্মদ খানও এ আসনে মনোনয়ন চাইবেন। ইতোমধ্যে তিনি নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ করছেন। এছাড়াও বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পেতে মাঠে রয়েছেন, জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি রবিউল আওয়াল লাভলু, কেন্দ্রীয় জাসাসের নেতা ও জেলা বিএনপির নির্বাহী সদস্য শরিফুল ইসলাম স্বপন, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আরফান আলী মোল্লা ও অ্যাডভোকেট আলী ইমাম তপন, জেলা জিয়া পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ইউসুব আলী, কেন্দ্রীয় কৃষক দলের নির্বাহী সদস্য ড. আমিনুল ইসলাম মঞ্জু, উপজেলা বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট ইকবাল হোসেন খান ও জেলা বিএনপির সদস্য ব্যারিস্টার সাদাত খান।
বিএনপির মধ্যেও রয়েছে দলীয় কোন্দল। কোন্দল নিরসন করতে না পারলে আসনটি পুনরুদ্ধার করা কঠিন হবে বলে মনে করছেন বিএনপি ঘরাণার রাজনৈতিক মহল। এছাড়া জাতীয় পার্টি কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য মামুনুর রহিম সুমন, জাতীয় পার্টি(জেপি) জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. মানিক মিয়া সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে তৎপরতা চালাচ্ছেন।
টাঙ্গাইল-৬(নাগরপুর-দেলদুয়ার) আসনের নাগরপুর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে মোট ভোটার দুই লাখ ২৫ হাজার ২৪১জন। এরমধ্যে পুরুষ এক লাখ ১৬ হাজার ৯৫২জন এবং নারী ভোটার এক লাখ ৮ হাজার ২৮৯জন। দেলদুয়ার উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে মোট ভোটার এক লাখ ৫৯ হাজার ১২৩জন। এরমধ্যে পুরুষ ৭৯ হাজার ৩৭২জন এবং নারী ভোটার ৭৯ হাজার ৭৫১জন।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno