আজ- ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ বৃহস্পতিবার  রাত ১০:৫২

টাঙ্গাইল-৭(মির্জাপুর) :: কোন্দল মাথায় নিয়ে মাঠে আ’লীগ-বিএনপির একাধিক প্রার্থী

 

বুলবুল মল্লিক:

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে টাঙ্গাইল-৭(মির্জাপুর) আসনে দলীয় অভ্যন্তরীণ ব্যাপক কোন্দল নিয়ে শাসক দল আওয়ামীলীগ এবং বিএনপির একাধিক প্রার্থী মাঠে গণসংযোগ করছেন। তবে আ’লীগে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের মাত্রা বেশি থাকায় বিএনপি দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী অনেকটাই ফুরফুরে মেজাজে সভা-সমাবেশে অংশ নিচ্ছেন, করছেন গণসংযোগ।
টাঙ্গাইল-৭ আসনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরাবরই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়ে থাকে। ইতোপূর্বের ১০টি সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী নির্বাচিত হন চার বার এবং বিএনপির মনোনীত প্রার্থী চারবার। একবার জাতীয় পার্টির প্রার্থী ও একবার স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হন। প্রখ্যাত আইনজীবী ও আওয়ামী লীগ নেতা ব্যারিস্টার শওকত আলী তালুকদার (বর্তমানে প্রয়াত) দেশের প্রথম সংসদে এই আসনের এমপি ছিলেন।
২০০৮ সালে এ আসনে আওয়ামীলীগের মো. একাব্বর হোসেন এক লাখ ৩০ হাজার ১৫৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী পান ৮৮ হাজার ৯১৬ ভোট। ২০১৪ সালের নির্বাচনে মো. একাব্বর হোসেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হন।
মির্জাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ মো. একাব্বর হোসেন এই আসনের বর্তমান এমপি। তিনি এ আসনের তিনবারের এমপি। এবারো তিনি দলের মনোনয়ন পাবেন এমনটাই বিশ্বাস করেন তাঁর অনুসারীরা। কারণ হিসেবে কর্মীরা জানান তিনি এলাকার মানুষের সুখ-দুঃখের ভাগিদার থাকতে চেষ্টা করেন। তবে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মীর শরীফ মাহমুদের সাথে দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জড়ানোয় তৃণমূলেও কোন্দলের বিস্তৃতি ঘটেছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বিআরডিবি’র চেয়ারম্যান মীর শরীফ মাহমুদ দলের মনোনয়ন পাওয়ার প্রত্যাশা নিয়ে কাজ করছেন। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ আসনের সাবেক এমসি ও বর্তমানে টাঙ্গাইল জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান খান ফারুকের ছেলে জেলা আওয়ামী যুবলীগের সহ-সভাপতি খান আহমেদ শুভও দলের মনোনয়ন পাওয়ার আশা নিয়ে মাঠে নেমেছেন। বাবার বদৌলতে খান আহমেদ শুভ এলাকায় ইতোমধ্যে বেশ প্রভাব বিস্তার করেছেন। ফলে উপজেলার কোন কোন স্থানে ত্রিমুখী দ্বন্দ্বও দেখা যাচ্ছে। এ আসনে আওয়ামীলীগের অপর প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরি কমিটির সদস্য মেজর(অব.) খন্দকার এ হাফিজ। তিনি ১৯৯৬ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রটোকল অফিসার(এসএসএফ) ছিলেন। ২০০৪ সাল থেকে তিনি আ’লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশায় মাঠে রয়েছেন। নানা সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও দলীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন। সাধ্যমত নেতাকর্মী ও অসহায়দের সহযোগিতাও করছেন। ক্লিন ইমেজের কারণে তিনি দলের তৃণমূলের প্রিয়পাত্র।
একটি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত মির্জাপুর উপজেলা। টাঙ্গাইল-৭(মির্জাপুর) আসনে প্রায় পাঁচ লাখ জনসংখ্যার বসবাস। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এ আসনে আগাম প্রচারণায় নেমে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশিরা নিজেদেরকে নানাভাবে তুলে ধরছেন, কেউ কেউ উন্নয়নের প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছেন। সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ভোটার ও দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ ও উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তৃণমূলের বঞ্চিত নেতাকর্মীদের মূল্য বেড়েছে। অন্যদিকে আ’লীগ ও বিএনপি বড় দু’দলেই একাধিক প্রার্থী থাকায় দু’দলেই চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। দেখা দিয়েছে দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দল। নেতাকর্মীরা বলছেন, দলীয় কোন্দল দেখা দিলেও এক নেতার একক নেতৃত্ব থেকে বঞ্চিত নেতারা মূল্যায়িত হচ্ছেন। দু’দলের মনোনয়ন প্রত্যাশিরা প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন নির্বাচনীয় মাঠে। কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছেও দৌঁড়-ঝাঁপ শুরু করেছেন মনোনয়ন প্রত্যাশিরা। চায়ের দোকান, সেলুন, খাবার হোটেল ও রাজনৈতিক কার্যালয় সহ বিভিন্ন জায়গায় চলছে জল্পনা-কল্পনা। আগামি সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে এমপি পদে কে পাচ্ছেন দলীয় মনোনয়ন?
মির্জাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান এসএম মুজাহিদুল ইসলাম মনির, মো. সিরাজুল ইসলাম এবং সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ ওয়াহিদ ইকবাল বলেন, আওয়ামী লীগের টানা তিনবারের সংসদ সদস্য একাব্বর হোসেন মির্জাপুরের রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মন্দিরের উন্নয়ন কাজ করেছেন। তিনি বর্তমানে শারীরিক ভাবে কিছুটা অসুস্থ্য। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নির্দেশে টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রলীগ মির্জাপুর উপজেলা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দিয়েছেন। উপজেলা ছাত্রলীগ তাদের আচার-আচারণ ও রাজনৈতিক কর্মকান্ড পালনের মধ্য দিয়ে উপজেলায় সুনাম অর্জন করে চলেছেন। তারা উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন ও কলেজ শাখার কমিটিও গঠন করেছেন। উপজেলার বিভিন্ন দলীয় সভা সমাবেশে উপজেলা ছাত্রলীগকে বক্তব্য দেয়ার সুযোগ না দেওয়ায় এবং ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না কারায় এমপি একাব্বর হোসেন ব্যাপক সমালোচিত হয়েছেন।
তাদের মতে, ক্লিন ইমেজের কারণে জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য মেজর(অব.) এ হাফিজ এলাকায় ব্যাপক জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। তিনি নির্বাচনী এলাকার বঞ্চিত আ’লীগ কর্মী ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। বিভিন্ন সমাজিক অনুষ্ঠান এবং দলীয় কর্মকান্ডে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়ে নিজের অবস্থান বেশ মজবুত করার প্রয়াস পেয়েছেন।
উপজেলা আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ ওয়াহিদ ইকবাল বলেন, সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে টাঙ্গাইল জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য ফজলুর রহমান খান ফারুকের ছেলে জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি জেলা চেম্বার অব কমার্সের সাধারণ সম্পাদক খান আহমেদ শুভ ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মীর শরীফ মাহমুদও উপজেলার বিভিন্ন ওয়ার্ডে উঠান বৈঠক করে নিজের প্রার্থীতা জানান দিচ্ছেন, সরকারের নানা কর্মকান্ডের ফিরিস্তি তুলে ধরছেন।
কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ও সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী ’৯৬ এর ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনসহ চারবার দলীয় মনোনয়ন পেয়ে ২০০১ ও ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কাছে বিপুল ভোটে পরাজিত হন। এক নেতার একক রাজনীতির কারণে দলের অনেক ত্যাগী নেতাকর্মী রাজনীতি থেকে দূরে সরে যান। বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য সাইদ সোহরাব উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়নে সভা সমাবেশ ও কর্মী সভার মাধ্যমে প্রচারণা চালিয়ে বিএনপির হারানো আসন পুনরুদ্ধারের মিশন নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।
পৌর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক মো. তাজুল ইসলাম শিকদার, উপজেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর মৃধা, পৌর বিএনপির সহ-সভাপতি মোবারক হোসেন, যুগ্ম-সম্পাদক শামীম আল মামুন বলেন, মির্জাপুর আসনটি বিএনপির ঘাটি হিসেবে পরিচিতি রয়েছে। প্রার্থী বাছাইয়ের কারণে এ আসনটি বিএনপিকে হাতছাড়া করতে হচ্ছে বার বার। ’৯৬-এর জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী নয়, এখানে ধানের শীষ জয়লাভ করেছিল। পরবর্তীতে আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকীর কারণে এ আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে চলে যায়। আগামি নির্বাচনে তারা বার বার পরাজিত প্রার্থীকে নয়- নতুন প্রার্থী চান। একক নেতৃত্বের কারণে বিএনপির ত্যাগী নেতাকর্মীরা রাজনীতি থেকে দূরে সরে গিয়েছিলেন। সাইদ সোহরাব রাজনীতিতে আসায় ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন বেড়েছে বলে তারা জানান।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, মির্জাপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও বর্তমান এমপি আলহাজ মো. একাব্বর হোসেনের সাথে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মীর শরীফ মাহমুদের দ্বন্দ্ব দীর্ঘ দিনের। মীর শরীফ মাহমুদের বড় ভাই মীর এনায়েত হোসেন মিন্টু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। ফলে ভাগবাটোয়ারা নিয়ে এমপি-উপজেলা চেয়ারম্যানের দ্বন্দ্বও প্রকাশ্যে। দলীয় প্রভাব ও নানা চাওয়া-পাওয়া নিয়ে তৈরি হওয়া কোন্দল চরম পর্যায়ে পৌঁচেছে।
বিএনপি থেকে এবারের নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা সাবেক এমপি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকীর। তিনি এই আসনে বিএনপির টিকিটে দুইবার এমপি নির্বাচিত হন। প্রতিবারই তিনি এমপি হিসেবে এলাকায় মানুষের পাশে থেকেছেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা সাইদুর রহমান সাইদ সোহরাব এলাকার বিএনপি নেতাদের কাছে অত্যন্ত প্রিয় ব্যক্তিত্ব। এছাড়াও বিশিষ্ট শিল্পপতি একেএম আজাদ স্বাধীন ও ইঞ্জিনিয়ার মৃধা মো. নজরুল ইসলাম দলের মনোনয়ন পাওয়ার আশায় কাজ করে যাচ্ছেন।
জাতীয় পার্টি (এরশাদ) থেকে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম জহির, মোহাম্মদ ইব্রাহীম শেখ ও নুরুল ইসলাম নুরু মনোনয়ন প্রত্যাশি। জাতীয় পার্টি (জেপি) থেকে মনোনয়ন চাচ্ছেন নাজমুল ইসলাম, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ থেকে দলের মির্জাপুর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আরমান হোসেন তালুকদার তাপস, খেলাফত মজলিস থেকে মাওলানা মজিবুর রহমান, জাসদ (ইনু) থেকে গোলাম নওজব পাওয়ার চৌধুরী।
জাতীয় সংসদের ১৩৬ তথা টাঙ্গাইল-৭(মির্জাপুর) আসনে মোট ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ১৬ হাজার ৭১৩জন। এরমধ্যে পুরুষ এক লাখ ৫৬ হাজার ৮৫৫জন এবং নারী ভোটার এক লাখ ৫৯ হাজার ৮৫৮জন।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno