আজ- ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বৃহস্পতিবার  রাত ৩:৩৩

টাঙ্গাইল-৮ :: আ’লীগ-বিএনপির পথের কাঁটা কাদের সিদ্দিকী

 

দৃষ্টি নিউজ:

মুক্তিযুদ্ধের সূতিকাগার হিসেবে খ্যাত টাঙ্গাইল-৮ (সখীপুর-বাসাইল) আসন বরাবরই আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি। এ আসনে দলের বর্তমান এমপি অনুপম শাহজাহান জয়। আগামী নির্বাচনে তাকে হারিয়ে আসনটি পুনরুদ্ধার করতে চায় বিএনপি। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরোত্তমও এ আসনে অন্যতম শক্তিশালী প্রার্থী। তিনি এ আসন থেকে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের টিকিটে এবং ২০০১ সালে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের ব্যানারে নির্বাচিত হয়েছিলেন। বড় কোনো রাজনৈতিক জোটের সঙ্গে গাঁটছড়া না বাঁধলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীর সঙ্গেই তাকে নির্বাচনে লড়তে হবে। সে ক্ষেত্রে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারেন আওয়ামী লীগের অনুপম শাহজাহান জয় ও বিএনপির অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান। প্রধান দুই দলের এ দুই নেতার দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত না হলেও তারাই আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন।
তবে এবার কাদের সিদ্দিকী আওয়ামী লীগের সঙ্গে যাবেন এমন গুঞ্জনে একদিকে কিছুটা উদ্বেগে রয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ কোন্দল মিমাংসা না হওয়ায় হতাশায় ভুগছে বিএনপি।
এ আসনের চারবারের এমপি কৃষিবিদ শওকত মোমেন শাহজাহানের মৃতু্্যর পর উপ-নির্বাচনে তারই ছেলে অনুপম শাহজাহান জয় এমপি নির্বাচিত হন। কিন্তু এবার জয়সহ আওয়ামী লীগের ৯ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী সখীপুর-বাসাইলের পাড়া-মহল্লা চষে বেড়াচ্ছেন। তারা হচ্ছেন- অনুপম শাহজাহান জয়, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম, সখীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শওকত শিকদার, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক ও ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের ভাইস-চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আতাউল মাহমুদ, ছাত্রলীগের কার্যকরী সংসদের সাবেক সদস্য অধ্যক্ষ সাঈদ আজাদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপক আবদুল মালেক মিঞা, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য সরকার আরিফুজ্জামান ফারুক, তাঁত বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী একেএম আসাদুল হক তালুকদার ও ঢাকা মহানগর (উত্তর) যুবলীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম জুয়েল।
এমপি অনুপম শাহজাহান জয় বয়সে তরুণ ও রাজনীতিতে নবীন হলেও দল ও সরকার বিতর্কিত হয় এমন কর্মকান্ড থেকে নিজেকে মুক্ত রেখেছেন। তরুণ সমাজসেবক হিসেবে ইতোমধ্যে তিনি জনগণের মণি কোঠায় জায়গা করে নিয়েছেন। নির্বাচিত হলে সখীপুর-বাসাইলকে মদ, জুয়া, জমি দখল মুক্ত রাখার যে ওয়াদা দিয়েছিলেন গত চার বছরে সে কথা তিনি অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন। তিনি এ উপজেলাবাসীর প্রাণের দাবি সখীপুর থেকে ঢাকায় যাতায়তের সড়কটি পুনঃনির্মাণ করে প্রশংসিত হয়েছেন। সখীপুর উপজেলার প্রধান সড়ক সাগরদীঘি ভায়া সখীপুর টু গোড়াই ২৮ কিলোমিটার সড়কের উন্নয়নসহ সখীপুর-বাসাইলের রাস্তাঘাট, মসজিদ, মন্দির ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ ব্যাপক উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হয়েছে তার মাধ্যমেই। এলাকার সন্তান হিসেবে নিয়মিত প্রত্যেকটি এলাকায় আসা-যাওয়া করছেন। যোগাযোগ রাখছেন বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশে গিয়ে সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডের কথা তুলে ধরছেন। তিনি সখীপুরের ছেলে এবং তার বাবা কৃষিবিদ শওকত মোমেন শাহজাহান এ আসনে চারবার সংসদ সদস্য ছিলেন। বাবার জনপ্রিয়তা ও উন্নয়নের ধারাবাহিকতার কারণে নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষ তাকে এমপি হিসেবে দেখতে চান বলে দাবি করছেন তার কর্মী-সমর্থকরা এবং সেই সঙ্গে তিনিই দলীয় মনোনয়ন পাবেন বলে শতভাগ আশাবাদী দলীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা।
আওয়ামী লীগের আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম। ত্যাগী এ নেতার রয়েছে দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা। রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা বিবেচনা করে এবার তিনিই দলীয় মনোনয়ন বাগিয়ে আনবেন বলে দাবি তার সমর্থকদের।
দীর্ঘদিন ধরে সখীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পরপর দুইবারের উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ শওকত শিকদার দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলেছেন। তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে চলেছেন। মনোনয়ন পেতে তিনি দুই উপজেলাকে সমানভাবে গুরুত্ব দিয়ে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। আগামি নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে শতভাগ আশাবাদী তিনি ও তার অনুসারী দলীয় নেতা-কর্মীরা। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের ভাইস-চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আতাউল মাহমুদ নতুন সখীপুর-বাসাইলের প্রত্যয় নিয়ে গণসংযোগ করছেন। তিনি একজন পরিচ্ছন্ন রাজনীতিক। ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে এ রকম মেধাবী রাজনীতিককেই দল মনোনয়ন দেবেন বলে তার অনুসারীদের দাবি। দলের আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য অধ্যক্ষ সাঈদ আজাদ। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে রয়েছে তার নিবিড় সম্পর্ক। দলীয় মনোনয়নের আশায় দীর্ঘদিন ধরে তিনি মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। জনপ্রিয়তা যাচাই করে মনোনয়ন দিলে তিনিই আওয়ামী লীগের যোগ্য প্রার্থী হবেন বলে মনে করেন তার কর্মী ও সমর্থকরা।
এদিকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা দীর্ঘদিন ধরেই দুই উপজেলার আনাচে-কানাচে সভা-সেমিনার ও গণসংযোগে ব্যস্ত থাকলেও গত ১৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাদের সিদ্দিকী বীরোত্তমের সাক্ষাতের পর তাদের মধ্যে উদ্বেগ ও শঙ্কা বিরাজ করছে। কাদের সিদ্দিকী কি আওয়ামী লীগে ফিরে যাচ্ছেন, নাকি মহাজোটে যোগ দিচ্ছেন- এমন প্রশ্ন ঘূরপাক খাচ্ছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের ঘরে-বাইরে। এ নিয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনার শেষ নেই।
এ ব্যাপারে সখীপুর উপজেলা কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি আতোয়ার রহমান বলেন, ‘আমাদের নেতা বঙ্গবীর সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্তই নেবেন। আমরা সেই সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। তবে এ আসনে নিজ দল থেকে এককভাবে নির্বাচন করারও পূর্ণ প্রস্তুতি রয়েছে আমাদের।’
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের স্থানীয় ও তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন। সখীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কুতুব উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের বেশ কয়েকজন জনপ্রিয় প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। দল যাকেই মনোনয়ন দেবে এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করব।’
বর্তমান সংসদ সদস্য অনুপম শাহজাহান জয় বলেন, ‘আমি বাবার অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পন্ন করে তিল তিল করে সখীপুর-বাসাইল গড়ার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছি। দল ও জনগণের সম্মান অক্ষুন্ন রেখেছি। সাধারণ মানুষ ও দলীয় নেতা-কর্মীরা এলাকায় উন্নয়নের জোয়ার দেখে তাদের ছেলে-সন্তান হিসেবে আমাকেই চায়। আমার বিশ্বাস উন্নয়নের এ ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জনপ্রিয়তা জরিপ করে আমাকেই পুনরায় মনোনয়ন দেবেন।’
এদিকে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে অনেকটা হতাশ স্থানীয় বিএনপি। সখীপুরে গত পৌর নির্বাচন ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন এবং স্থানীয় কমিটির পদ-পদবি নিয়ে ঘরোয়া কোন্দলে বিএনপির অবস্থা জীর্ণশীর্ণ। এ ছাড়াও সম্প্রতি সখীপুর ও বাসাইলের কয়েকজন নেতাকে অব্যাহতি দেয়ার ঘটনায় এ কোন্দল আরও চরম আকার ধারণ করেছে। সখীপুর উপজেলা বিএনপি এখনো দুই ভাগে বিভক্ত। তবে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খানের মনোনয়ন নিশ্চিত বলে মনে করছেন তার কর্মী-সমর্থকরা। তিনি প্রচারণায় সরব। ইতোমধ্যেই এলাকাবাসীর সঙ্গে নিয়মিত কুশল বিনিময় করে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আযম খান ছাড়াও এবার জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন শিল্পবিষয়ক সম্পাদক ও সখীপুর উপজেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শেখ মোহাম্মদ হাবিব দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। তিনি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন করে দ্বিতীয় স্থান করে জনগণের দোরগোড়ায় একটা জায়গা করে নিয়েছেন। তাকে মনোনয়ন দিলে তৃণমূলের ভোটে অতি সহজেই নির্বাচিত হয়ে এ আসনটি রক্ষা হতে পারেন বলে তার কর্মী-সমর্থকরা মনে করেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাবেক আহবায়ক, পেশাজীবী সংগঠনের নেতা কৃষিবিদ শেখ মোহাম্মদ শফি শাওন ব্যানার, পোস্টার ও ফেস্টুন দিয়ে এলাকায় ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছেন। কেন্দ্রেও জোর লবিং এবং সখীপুরের সন্তান থাকায় তিনি মনোনয়ন পেতে পারেন বলে তার সমর্থিত নেতা-কর্মীরা মনে করেন। বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ওবায়দুল হক নাসির দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীদের দাবি, সখীপুর-বাসাইলে বিএনপির নিজস্ব ভোট ব্যাংক রয়েছে। অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু ভোট হলে এবং কোন্দল ভুলে সম্মিলিতভাবে দলীয় প্রার্থীর জন্য কাজ করলে অবশ্যই বিএনপি প্রার্থী বিজয়ী হবেন।
জাতীয় পার্টির (এরশাদ) কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-মহাসচিব কাজী আশরাফ সিদ্দিকী নিজ দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তবে সাধারণ মানুষ ও স্থানীয় নির্বাচন বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ আসনে তিন দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে কারো জন্যই নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া সহজ হবে না। প্রতিযোগিতা করেই পার হতে হবে।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno