ধনবাড়ীতে অনলাইন ব্যবসার ৩৬ কোটি টাকা নিয়ে প্রতারকচক্র উধাও!

দৃষ্টি নিউজ:

টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে ‘কিউমার্ট অনলাইন মেগাসপ’ নামে অনলাইন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার ব্যবসায়ী ফরিদুল ইসলাম ফরিদ প্রায় ৩৬ কোটি টাকা হাতিয়ে উধাও হওয়ায় ভোক্তভোগীরা পথে বসেছে।
স্থানীয়রা জানায়, কিছু দিন পূর্বে ধনবাড়ীতে ‘কিউমার্ট অনলাইন মেগাসপ’ নামীয় অনলাইন ব্যবসা করার জন্য ধনবাড়ী নিউ মার্কেটের পূর্বপাশে হাকিম ম্যানশনের নিচ তালায় একটি রুম ভাড়া নেন, ধনবাড়ী উপজেলার ১নং বীরতারা ইউনিয়নের কাঠালিয়াবাড়ী গ্রামের মৃত নজর দেওয়ানীর ছোট ছেলে ফরিদুল ইসলাম ফরিদ। তারা এজেন্ট প্যাসিফিক গ্রুপ নামে জমজমাট বাণিজ্য করছিল। ‘কিউমার্ট অনলাইন মেগাসপ’ ধনবাড়ী পৌরসভার ট্রেড লাইসেন্স না নিয়ে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে তাদের নিযুক্ত এজেন্টের মাধ্যমে অল্প সময়েই প্রায় ৩৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে রাতারাতি সটকে পড়েছে। ভোক্তভোগী সরিষাবাড়ী উপজেলার আনোয়ার হোসেন, বেলাল হোসেন, আব্দুর রাজ্জাক, হাফিজুর রহমান; ঘাটাইল উপজেলার সবুজ, কাঠালিয়াবাড়ী গ্রামের ছোবাহানের ছেলে শিহাব, বাজিতপুর গ্রামের রশিদ মন্ডলের ছেলে বাবু সহ অনেকেই জানান, ‘কিউমার্ট অনলাইন মেগাসপ’এর কর্ণধার ফরিদুল ইসলাম ফরিদ। তার সহযোগী বনগ্রাম(হোসনাবাদ) গ্রামের স্বপন ও রিপন। তিনি বিভিন্ন এলাকায় গ্রাহক ধরতে এজেন্ট নিযোগ করেন। এলক্ষে বিভিন্ন গ্রুপের লিডাররা এজেন্ট হন। তারা অতি মুনাফার লোভ দেখিয়ে প্রতিটি গ্রাহক আইডি খুলতে ৯ হাজার ৬০০ থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত গ্রহন করেন। বিভিন্ন প্যাকেজ বিক্রির জন্য নানা ক্যাটাগরির মূল্যও নির্ধারণ করে দেন। ধনবাড়ীতে অফিস খুলে তারা টাঙ্গাইল, জামালপুর, শেরপুর, সিরাজগঞ্জ, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা সহ বিভিন্ন জেলার কয়েক হাজার নারী-পুরুষের কাছ থেকে অনলাইন ব্যবসার নামে আইডি খুলে কোটে কোটি টাকা হাতিয়ে নেন।
ভূক্তভোগীরা জানায়, ধনবাড়ী উপজেলার বীরতারা ইউনিয়নের কাঠালিয়াবাড়ী গ্রামের মৃত নজর দেওয়ানীর ছেলে ফরিদুল ইসলাম ফরিদ ও তার চাচাতো বোন জামাই পাশর্^বর্তী বনগ্রাম(হোসনাবাদ) গ্রামের রিপন কাজী, বনগ্রাম এলাকার স্বপন, জিহাদ সহ আরো কয়েকজন ‘কিউমার্ট অনলাইন মেগাসপ’এর লিডার হয়ে কাজ করেছেন। এখন তারা সবাই গাঢাকা দিয়েছেন। ভূক্তভোগীরা আরো জানায়, তারা ব্যাংক ও এনজিও থেকে চওড়া সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসার জন্য ‘কিউমার্ট অনলাইন মেগাসপ’এর ফরিদের কাছে জমা দিয়েছিলেন। ফরিদ টাকা ফেরত না দিয়ে একই উপজেলার বানিয়াজান দক্ষিণপাড়া গ্রামে শ্বশুর মতিয়ার রহমান মতির বাড়িতে আত্মগোপনে রয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফরিদের বাড়ির কয়েক ব্যক্তি জানায়, ফরিদ প্রথমে কুষ্টিয়ায় সেরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করত। ফরিদ নিজেকে বীরতারা ইউনিয়ন ইসলামী ছাত্র শিবিরের সেক্রেটারী বলে পরিচয় দিয়ে থাকেন। লগ্নিকৃত টাকার বিষয়ে কেউ তার বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করলে ‘দেখে নেয়ার’ হুমকি দেয়।
এ বিষয়ে বক্তব্য নেয়ার জন্য ফরিদের শ্বশুর বাড়িতে গেলে তার স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মালা জানান, তার স্বামী ফরিদ অনলাইন ব্যবসা করত। ওই সময় অনেকের সাথে টাকা লেনদেন করেছে। বর্তমানে ফরিদ পলাতক থাকায় শ্বশুর মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে অনেকের টাকা ফেরত দিয়েছেন, অনেকের টাকা ফেরত দিচ্ছেন। সবার লগ্নিকৃত টাকাই ফেরত দিয়ে দিবেন বলে সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ করেন।
ধনবাড়ী পৌরসভার মেয়র খন্দকার মঞ্জুরুল ইসলাম তপন জানান, ফরিদুল ইসলাম ফরিদ ‘কিউমার্ট অনলাইন মেগাসপ’ নামীয় একটি প্রতিষ্ঠান উপজেলায় অনলাইন ষপের ব্যবসা করেছে। তারা পৌরসভার কোন ট্রেড লাইসেন্স না নিলেও তিনি পরে তা জানতে পেরেছেন। গ্রাহকদের টাকা লেনদেন নিয়ে পৌরসভায় কয়েক দফা সালিশি বৈঠকও হয়েছে। পরে গ্রহকদের লগ্নিকৃত টাকা ফেরদেয়ার মুচলেকা দিয়ে আত্মগোপণে চলে গেছেন।
ধনবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মজিবর রহমান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ধনবাড়ী উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রচার সম্পাদক আরশেদ আলী মিমাংসা করার জন্য মুচলেকা দিয়ে জিহাদ নামে প্রতারক চক্রের এক সদস্যকে ধনবাড়ী পৌর সভায় নিয়ে যান। বিষয়টি নিয়ে ধনবাড়ী পৌরসভায় ভূক্তভোগী সকলের টাকা ফেরত দেয়ার জন্য বীরতারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম(শফি) ও আওয়ামীলীগের প্রচার সম্পাদক আরশেদ আলী সহ স্থানীয় আওয়ামীলীগের কিছু নেতা চেষ্টা করেছিলেন। সালিশি বৈঠকে সকল গ্রাহকদের পাওনা টাকা ফেরত দেয়ার কথা বলে মুচলেকা দিয়ে ফরিদ ও তার সহযোগীরা এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যায়। তবে এ বিষয়ে কোন গ্রাহক থানায় মামলা দায়ের করেনি, অভিযোগ পেলে তারা আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান ওসি।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে