আজ- ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ বৃহস্পতিবার  রাত ৯:৩০

নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন লতিফ সিদ্দিকী ॥ এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া

 

দৃষ্টি নিউজ:


টাঙ্গাইল-৪ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। সাবেক এই ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য পদ হারিয়ে সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন দশম সংসদ থেকে। নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর খবর এলাকায় পৌঁছলে সাধারণের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।
আওয়ামীলীগের সাবেক এ প্রেসিডিয়াম মেম্বার এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতীক বরাদ্দও পেয়েছেন। তাই তিনি সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিলেও ব্যালটে তার নাম ও প্রতীক(ট্রাক) ছাপানো হবে। আইন অনুযায়ী প্রতীক পাওয়ার পর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর কোনো পথ নেই। রোববার (২৩ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদার সঙ্গে দেখা করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন তিনি।
সিইসির সঙ্গে দেখা করার পর সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আমি আর নির্বাচন করছি না। কারণ মাঠ নির্বাচন করার মতো সমতল নয়। মাঠ এমনই সমতল যে পুলিশের বুটের তলে পড়তে হয়। আর সন্ত্রাসীদের লাঠির আঘাত খেতে হয়। আমার অফিস ভেঙে দিয়েছে। আমার নিরীহ লোকদের প্রতিনিয়ত গ্রেপ্তার করছে। যারা সমর্থক তাদের পুলিশ প্রতিনিয়ত টেলিফোন করে ভয় দেখাচ্ছে। এরপরে ইলেকশন করা যায় নাকি?
তিনি আরও বলেন, ইলেকশনটা তো বাণিজ্য নয়। আমি জীবনে অনেক ইলেকশন করেছি। ১৯৭০ সাল থেকে শুরু করেছি আজ ২০১৮ সাল। এই রকম নির্বাচন আমার এলাকায় আমি জীবনেও দেখিনি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সিইসির সঙ্গে দেখা করেছি। কিছুই চাইনি। আমি কিছু চাওয়ার লোক না। আমি বলে আসলাম, আপনি যে পরিচালনাটা করছেন এই পরিচালনায় আপনি ব্যর্থ। এই পরিচালনায় নির্বাচন হতে পারে না। তাই আমি মাঠ ছেড়ে দাঁড়ালাম।
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন তো আর প্রত্যাহারের সুযোগ নেই। তাই আমি সরে দাঁড়ালাম। আমি নিরীহ মানুষকে হতাহত হওয়ার সুযোগ কেনো করে দেবো? যারা হতাহত হবে তাদের দায় আমাকে নিতে হবে। আমি সেই দায় নেবো না। এটা স্বাধীনতা যুদ্ধ না যে, মুখোমুখি লড়াই করবো। যার সঙ্গে লড়াই করবো সে আমারই কর্মী কিংবা কর্মীর সন্তান। আমি কেন যাবো এই ধরনের হানাহানিতে?
তিনি বলেন, আমি তাকে (সিইসি) বলে দিয়ে আসলাম আপনি স্বীকার করুন আর না করুন, আপনি ব্যর্থ।
কমিশনের পক্ষ থেকে কি বলা হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছুই বলা হয়নি। আমিতো তার কাছে শুনতে চাইনি। আমি বলেছি এক মিনিট আপনার সঙ্গে দেখা করে চিঠি দিয়ে চলে যাবো। তিনি বলেন, ওসির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে।
লতিফ সিদ্দিকী বলেন, বর্তমান এমপি এলাকাকে ত্রাস ও সন্ত্রাসের জনপদে পরিণত করেছে। আমি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। দীর্ঘদিন পুলিশি জুলুমের বিরদ্ধে লড়েছি, কিন্তু পুলিশ এমন উলঙ্গভাবে কোনো প্রার্থীর সমর্থন করে নিরীহ মানুষদের হুমকি দেয়, আমার মিছিল বন্ধ করে সংসদ সদস্যের মিছিলে সহযোগিতা করে এমন দেখেনি। পুলিশের অত্যাচারের পরও আন্দোলন করা যায়, পুলিশ বিপক্ষে অবস্থান নিলে নির্বাচন করা যায় না।
সরে দাঁড়ানোর বিষয়ে একটি লিখিত পত্রও সিইসি বরাবর জমা দেন তিনি। এতে নির্বাচনী পরিস্থিতির অবনতির কারণ দেখিয়ে সরে দাঁড়ানোর কথা বলেন লতিফ সিদ্দিকী।
গত ১৬ ডিসেম্বর কালিহাতীর গোহালিয়াবাড়ি ইউনিয়নের সরাতৈল ও বল্লভবাড়িতে নির্বাচনী প্রচারণার সময় তার গাড়িবহরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কালিহাতী থানার ওসি মীর মোশারফ হোসেনের প্রত্যাহার চেয়ে ওইদিন দুপুর থেকে টাঙ্গাইল ডিসি অফিসের সামনে অবস্থান ধর্মঘটে বসেন লতিফ সিদ্দিকী।
প্রতিকার না পেয়ে পরদিন ১৭ ডিসেম্বর সকাল থেকে অবস্থান ধর্মঘটের সঙ্গে আমরণ অনশন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন লতিফ সিদ্দিকী। পরে অসুস্থ হয়ে পড়লে একইদিন সকালে ডিসি অফিসের সামনে থেকে তাকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করেন তিনি।
লতিফ সিদ্দিকী ১৯৭০ সালে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। এর পর ১৯৭৩, ১৯৯৬, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী এবং ২০১৪ সালে ডাক তার টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী হন।
২০১৪ সালে লন্ডনে একটি অনুষ্ঠানে হজ নিয়ে মন্তব্য করায় মন্ত্রিত্ব পদ হারানোর পর দলীয় পদও হারান টাঙ্গাইলের প্রভাবশালী সিদ্দিকী পরিবারের সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। এরপর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম টাঙ্গাইল-৪ আসনটি শূন্য ঘোষণার জন্য স্পিকারকে চিঠি দেন। সে অনুযায়ী স্পিকার নির্বাচন কমিশনকে বিরোধটি নিষ্পত্তি করতে বললে শুনানির ব্যবস্থা গ্রহণ করে তা নিষ্পত্তি করে ইসি। পরে জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করলে আসনটি শূণ্য ঘোষণা করে সংসদ সচিবালয়।
এদিকে, নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর খবর এলাকায় পৌঁছলে তাঁর কর্মী-সমর্থকরা বিমর্ষ হয়ে পড়ে। নির্বাচনী আসনের বোদ্ধা ভোটাররা মনে করেন, লতিফ সিদ্দিকী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়ে খুনোখুনি থেকে কর্মী-সমর্থকদের রক্ষা করেছেন। কেউ কেউ বলছেন, লতিফ সিদ্দিকী নিজের গাড়িবহরে হামলার প্রতিকার করতে না পেরে মুখ বাঁচাতে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। আবার কেউ বলছেন, নির্বাচনের গতি-প্রকৃতি দেখে তিনি আগ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। এখন হয়তো কর্মী-সমর্থকরা হতাশায় ভূগছে, মারামারি হলে- রক্তপাত হলে আরো বেশি ক্ষতি হতো, আর লতিফ সিদ্দিকী কখনোই এ ধরণের রাজনীতি করেন না।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno