আজ- ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ শুক্রবার  বিকাল ৩:১১

পৌলী নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলন ॥ সড়ক ও রেলসেতু এবং শহররক্ষা বাঁধ নিয়ে শঙ্কা!

 

দৃষ্টি নিউজ:

বঙ্গবন্ধুসেতু-ঢাকা মহাসড়কে টাঙ্গাইলের পুংলী নদীর পৌলীতে সড়ক ও রেল সেতুর দুই পাশ ও নদীর শহর রক্ষা বাঁধ এলাকায় অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে বর্ষা মৌসুমে বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন স্থায়ী কোন ব্যবস্থা গ্রহন না করে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার মধ্য দিয়ে দায়িত্ব শেষ করায় এ আশঙ্কা আরো তীব্রতর হচ্ছে।
জানাগেছে, টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার পুংলী নদীর ওপর মহাসড়ক ও রেলসেতুর পূর্ব-দক্ষিণ পাশেই টাঙ্গাইল শহর রক্ষা বাঁধের শুরু। পৌলী সেতু থেকে মহেলা, আগবেথৈর, পাছবেথৈর, শালিনা, বার্থা হয়ে করটিয়া পর্যন্ত এ বাঁধের দৈর্ঘ্য। সড়ক ও রেলসেতুর পূর্ব-পশ্চিম এবং শহর রক্ষা বাঁধের পাড় ঘেঁষে গড়ে ওঠেছে বেশ কয়েকটি অবৈধ বালুঘাট। স্থানীয় প্রভাবশালী মো. তোফাজ্জল, মো. হাফিজুর রহমান, খেগু মিয়া, আ. মালেক, মো. জমির উদ্দিন, মো. ফরমান হোসেন, মো. রমজান আলী, মো. নায়েব আলী, মো. হাবেল উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি মহল স্থানীয় লোকজনদের সাথে নিয়ে ৫-৬টি স্পটে বেকু বসিয়ে নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। এসব ঘাট থেকে প্রতিদিন শ’ শ’ বালুভর্তি ট্রাক যাতায়াত করায় শহর রক্ষা বাঁধটি চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। শহর রক্ষা বাঁধটি আশপাশের তিন গ্রামের মানুষের শহরে যাতায়াতের একমাত্র সড়ক। সেতুর উভয় পাশ থেকে বালু উত্তোলন করায় একদিকে সড়ক ও রেলসেতু, অন্যদিকে টাঙ্গাইল শহর রক্ষা বাঁধে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে ভাঙনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বাঁধের পাশের বাসিন্দারা অভিযোগ করে জানান, প্রতিদিন শ’ শ’ ট্রাক আসে আবার বালু ভর্তি করে এ সড়ক দিয়ে নিয়ে যায়। স্থানীয়দের চলাচলের একমাত্র সড়ক ওই বাঁধ। বালু উত্তোলনের সাথে জড়িত এলাকার কতিপয় প্রভাবশালী ও তাদের সন্ত্রাসী বাহিনীর কারণে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায়না। কদাচিৎ কেউ প্রতিবাদ করলে তাদেরকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। ওই সড়কে বালুর ট্রাক চলাচলের কারণে স্থানীয়দের পায়ে হেঁটে যাতায়াত করতে হয়। কোনো মালামাল আনা-নেয়া করা যায় না। তাছাড়া রাতদিন ট্রাক চলাচলের কারণে বাড়িঘর বালিতে নষ্ট হয়, রাতভর শব্দের ফলে ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখা বিঘিœত হয়। জামাকাপড়, রান্না করা খাবার সব উড়ে আসা বালিতে নষ্ট হয়ে যায়।

খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, বিগত ২০০০ সালে কম্পার্টমেণ্টালাইজেশন পাইলট প্রজেক্টের(সিপিপি) আওতায় ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪৭ কিলোমিটার দীর্ঘ টাঙ্গাইল শহর রক্ষা বাঁধটি নির্মাণ করা হয়। টাঙ্গাইল শহর রক্ষা বাঁধ নির্মিত হওয়ার পর বিগত ১৮ বছরে বড় ধরনের কোনো মেরামতের কাজ না হওয়ায় ৪৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এ বাঁধের বিভিন্ন অংশ ইতোমধ্যে দুর্বল হয়ে পড়েছে। প্রতিনিয়ত শহর রক্ষা বাঁধের বিভিন্ন অংশে ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে নানাস্থানে দেবে গেছে। গত বছর বর্ষার সময় রামদেবপুর এলাকার বাসিন্দারা নিজ উদ্যোগে মাটি ফেলে কোনোরকমে বাঁধের রামদেবপুর অংশটিকে রক্ষা করেছিল। এরমধ্যে অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে বাঁধের পূর্বাংশে পৌলী সেতু থেকে মহেলা, আগবেথৈর, পাছবেথৈর, শালিনা, বার্থা হয়ে করটিয়া পর্যন্ত বাঁধের বিভিন্ন অংশ যারপরনাই দুর্বল হয়ে গেছে; বর্ষা মৌসুমে ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বাঁধের পূর্বাংশ ভেঙে গেলে টাঙ্গাইল শহর, গালা, ঘারিন্দা, করটিয়া ইউনিয়নসহ বাসাইল উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকার বাড়িঘর, ফসলি জমি, সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মসজিদ-মাদ্রাসা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
সরেজমিনে স্থানীয় আইয়ুব আলী, আলেয়া বেগম, কাশেম, রেনু বেগম আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ- আমাদের কথা কি কেউ শোনে? এই সড়ক দিয়ে চলাচল করতে পারি না। ধুলি-বালিতে বাড়িঘরে থাকা যায় না। আমরা তো এর প্রতিবাদ করতে পারি না। ভ্রাম্যমান আদালত এসে অভিযান চালায় দু-একদিন বালুঘাট বন্ধ থাকে। তারপর আবার প্রথমে রাতে পরে রাতদিন সমানে বালু উত্তোলন করে। যারা বালুঘাটের ব্যবসা করে তারা খুবই প্রভাবশালী। তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী আছে, আমরা তাদেরকে ভয় পাই। তাদের বিরুদ্ধে কিছু বলার সাহস আমাদের নেই। প্রশাসনের লোকজনই কিছু করতে পারেনা; তাই শত সমস্যা হলেও আমাদেরও করার কিছুই নাই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বালু ঘাটের কয়েক শ্রমিক বলেন, গত বছর মহেলা এলাকায় শহর রক্ষা বাঁধের একটি অংশ ভেঙে গিয়েছিল। এ বছরও ভাঙবে তাতে কোনো সন্দেহ নাই। কিন্তু আমরা তো কাজ করে মজুরি নেই। মালিক যেভাবে কাজ করতে বলেন, আমরা তাই করি। নদীর পাড়ে যাদের জায়গা আছে তাদের জমি লিজ নিয়ে অনেকেই এখানে বালুঘাট বসিয়ে ব্যবসা করছেন। আবার অনেকে নদী থেকে সরাসরি বালু উত্তোলন করছেন।
এদিকে, বঙ্গবন্ধুসেতু-ঢাকা মহাসড়কের পৌলীসেতু ও রেলসেতুর পশ্চিমাংশে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা এনে রীতিমতো মহাসমারোহে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, দিনের অঅলোয় অন্যের লিজ নেয়া জমি থেকে বালু উত্তোলন করলেও রাতের আঁধারে তারা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করেন।
পরিচয় গোপণ করে কয়েকজন বালু ব্যবসায়ী জানান, তারা সরকার দলীয় নেতা ও স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ব্যবসা চালাচ্ছেন। বালু উত্তোলন করতে তাদেরকে ঘাটে ঘাটে টাকা দিতে হয়। এছাড়া বিভিন্ন জাতীয় দিবস ও প্রশাসনের কর্তাদের নির্দেশানুযায়ী তারা নানা সময়ে টাকা দিয়ে সহযোগিতা করে থাকেন।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন রোধে সবাইকে সচেতন হতে হবে। পৌলী নদীর বিষয়টি আমি জানার পর কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছি বিষয়টি দেখার জন্য। টাঙ্গাইল শহর রক্ষা বাঁধের যেন কোনো ক্ষতি না হয় তার জন্য আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno