আজ- ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শুক্রবার  রাত ৮:৩৪

প্রথম টেস্টে আজ মুখোমুখি বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা

 

ক্রীড়া ডেস্ক:

মুশফিকুর রহিম

‘বড় চ্যালেঞ্জ’- দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশের এবারের সফরের আবহসংগীত। এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে টাইগাররাই, সৃষ্টি করেছে সাম্প্রতিক সময়ে মাঠে তাদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স। ঘরের মাঠে ইংল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়ার মতো দ্বৈত্য বধ করেছে তারা। শ্রীলংকায় গিয়ে হারিয়েছে লংকানদের। এই সাফল্যগুলো অবশ্য সহায়ক কন্ডিশনে। দক্ষিণ আফ্রিকার কন্ডিশন সেখানে পুরোপুরি বিপরীত। মুশফিকুর রহিমের দলের সামনে চ্যালেঞ্জটা আসলে ওই কন্ডিশনে ভালো করার। সেই চ্যালেঞ্জ নিয়েই আজ পচেফস্ট্রুমের শেনওয়েস পার্কে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজের প্রথমটিতে মাঠে নামছে টাইগাররা।
সাদা পোশাক আর লাল বলের ক্রিকেটে দক্ষিণ আফ্রিকা প্রতিষ্ঠিত শক্তি। দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটে তাদের পারফরম্যান্স চোখে পড়ার মতোই, ঘরের মাঠে সেটা আরও বেশি। এর পেছনে বড় ভূমিকা আছে তাদের কন্ডিশনের। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বেশ উঁচুতে আফ্রিকার দেশটির অবস্থান। হুট করে সেখানে গিয়ে মানিয়ে নেয়া কঠিন। আজ যেখানে প্রথম টেস্ট শুরু হচ্ছে, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সেই পচেফস্ট্রুমের উচ্চতা এক হাজার ৩৪১ মিটার। এমন উচ্চতায় ভালো খেলা যেকোনো দলের জন্যই কঠিন। টাইগারদের জন্য সেটা আরও কঠিন হওয়ারই কথা। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ঢাকার উচ্চতা ৪ মিটার; অত উঁচুতে খেলার অভিজ্ঞতা তেমন একটা নেই টাইগার ক্রিকেটারদের।
কন্ডিশন টাইগারদের বড় প্রতিপক্ষ, প্রতিপক্ষ সেখানকার উইকেটও। যেখানে গতি আর বাউন্সের সামনে তটস্থ থাকেন ব্যাটসম্যানরা। শিবিরে ভালো মানের পেসার না থাকলে প্রোটিয়াদের মাটিতে ভালো করা কঠিন, টেস্ট ক্রিকেটে সেটা আরও বেশি। টাইগার শিবিরে মুস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদ, রুবেল হোসেন, শফিউল ইসলামরা আছেন; তবে বিরুদ্ধ কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে তারা নিজেদের কতটা মেলে ধরতে পারবেন, সেটা নিয়ে সংশয় থাকছেই। একটা বিষয়ে কোনো সংশয় নেই, দক্ষিণ আফ্রিকার বাউন্সি উইকেটে মরকেল-রাবাদারা গতির ঝড় তুলবেন। সাফল্য পেতে টাইগার ব্যাটসম্যানদের সেই ঝড় সামলাতে হবে। তারা সেটা পারবেন তো?
অতীত কিন্তু পক্ষে কথা বলছে না। ঘরের মাঠে দুই দলের সবশেষ সিরিজে টাইগাররা প্রোটিয়াদের রম্নখে দিলেও সেখানে বড় প্রভাব ছিল বৃষ্টির। এর আগে যতবার মুখোমুখি হয়েছে দুই দল, প্রতিবারই জয়ী দলের নাম দক্ষিণ আফ্রিকা। সবমিলে তাদের বিপক্ষে ১০টি টেস্ট খেলে ৮টিতেই হেরেছে বাংলাদেশ। আগের দুই সফরে দক্ষিণ আফ্রিকায় ৪টি টেস্ট খেলে প্রতিটিতেই টাইগাররা হরেছে ইনিংস ব্যবধানে, এর একটি আবার এই পচেফস্ট্রুমেই, ২০০২ সালে। সেই বাংলাদেশ আর এই বাংলাদেশ অবশ্য এক নয়। ২০০০ সালে টেস্ট মর্যাদা পাওয়া দলটি তখন অভিজাত ক্রিকেটে হামাগুড়ি দেয়া শিশু। ১৭ পেরোতে যাওয়া এই বাংলাদেশ ক্রিকেটের নতুন শক্তি।
দেশের গন্ডি ছাপিয়ে বিরুদ্ধ কন্ডিশনে নিজেদের এই শক্তিমত্তার জানান দেয়াটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশের। তাছাড়া এই ম্যাচেই নতুন আইন চালু করছে আইসিসি। এই বিষয়টাতে দৃষ্টি রাখার সঙ্গে মাঠের চ্যালেঞ্জ জিততে অনুশীলনে নিয়মিত ঘাম ঝরাচ্ছেন টাইগাররা। ১৬ সেপ্টেম্বর ঢাকা ছেড়ে যাওয়া দলটি দক্ষিণ আফ্রিকায় পৌঁছে খেলেছে অনুশীলন ম্যাচ, সেই ম্যাচে ব্যাটে-বলে ভালোই পারফর্ম করেছে তারা। তবে বেনোনির উইকেট ছিল কিছুটা মন্থর আর নিচু বাউন্সের। তবে পচেফস্ট্রুমের শেনওয়েস পার্কে ভিন্ন কিছুই অপেক্ষা করছে তাদের জন্য। সেখানকার অনুশীলন উইকেটে ব্যাটিং করার সময় যথেষ্টই বেগ পেতে হয়েছে টাইগারদের। অনুশীলনকালে একটি গুড লেন্থের শর্ট বলে তো আঙুলে ব্যথাও পেয়েছেন মাহমুদউলস্নাহ রিয়াদ।
এরপরও অনুশীলন নিয়ে তুষ্ট টাইগাররা। কন্ডিশনের সঙ্গেও কিছুটা সখ্য গড়ে উঠেছে তাদের। উইকেটের চাল-চরিত্রও বুঝে নিয়েছেন তারা। টপঅর্ডার ব্যাটসম্যান ইমরুল কায়েস তাই আগের দিনই বলে দিয়েছেন, কিভাবে ব্যাটিং করতে হবে দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেটে। তার মতে, ব্যাকফুটেই বেশি খেলতে হবে। আর তার সতীর্থরা সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে একাদশ সাজানো নিয়ে বেশ সমস্যাতেই রয়েছে টাইগাররা। একে বিশ্রামের কারণে সাকিব আল হাসান টেস্ট সিরিজে নেই, এরই মধ্যে আবার চোট পেয়েছেন দুই ওপেনার তামিম ইকবাল আর সৌম্য সরকার। দুজনই অবশ্য অনুশীলনে ফিরেছেন। তবে একাদশে দুজনেরই স্থান হবে কিনা, সেটা অনিশ্চিত। অনিশ্চিত প্রস্তুতি ম্যাচে ব্যর্থ হওয়া মাহমুদউল্লাহও।
সাকিব না থাকায় একজন ব্যাটসম্যান বা বোলার বেশি খেলাতে হবে বাংলাদেশকে। এই ভাবনা থেকে মুশফিকুর রহিমের হাতেই কিপিং গ্লাভস তুলে দেয়া হতে পারে। বিষয়টা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে একাদশে তিন পেসার থাকছেন, এটা নিশ্চিতই। মুস্তাফিজের সঙ্গে তাসকিন আর শুভাশিস রায় চৌধুরীর থাকার সম্ভাবনাই বেশি। বিশেষজ্ঞ স্পিনার হিসেবে খেলবেন মেহেদী হাসান মিরাজ। টিম ম্যানেজমেন্ট দুই স্পিনার তত্ত্বে গেলেই কেবল স্থান পাবেন বাঁহাতি তাইজুল ইসলাম। কারণ দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেটে স্পিনারদের খুব ভালো করার সম্ভাবনা কম, যা করার পেসারদেরই করতে হবে। এবার তাই আসল পরীক্ষা হয়ে যাবে দলের পেস বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশেরও। ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি মুস্তাফিজ-তাসকিনদের কতটা শেখাতে পেরেছেন, এবার প্রমাণ হয়ে যাবে তা।
দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং বেশ শক্তিধর। অধিনায়ক ফাফ ডু পেস্নসিস, হাশিম আমলা, কুইন্টন ডি কক, টেম্বা বাভুমারা পরীক্ষিত সৈনিক। প্রোটিয়ারা কিছুটা সমস্যায় তাদের উদ্বোধনী জুটি নিয়ে। সেখানে ডিন এলগার আছেন, তবে তার যোগ্য সঙ্গী খুঁজে পেতে সমস্যায় স্বাগতিকরা। বাংলাদেশের বিপক্ষে এইডেন মার্করামকে দিয়ে চেষ্টা চালাবে তারা। ২০১৪ সালে প্রোটিয়াদের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জেতানো এই ব্যাটসম্যান ঘরোয়া ক্রিকেটে বেশ ছন্দে রয়েছেন। তাকে নিয়ে ভালো শুরুর আশায় এলগারও। দক্ষিণ আফ্রিকার চার দিনের ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটেও একই দলে খেলেন দুজন।
এলগারের মতে, ‘উদ্বোধনী জুটি ভালো না হলে বাকি ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে খুব বেশি কিছু প্রত্যাশা করা ঠিক নয়। ওপেনাররাই পরের ব্যাটসম্যানদের জন্য পথ তৈরি করে দেয়।’

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno