আজ- ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শুক্রবার  সকাল ৬:১৬

বঙ্গবন্ধুসেতু-ঢাকা মহাসড়কে যানজট নেই ॥ স্বস্তিতে ঘরে ফিরছে মানুষ

 

বুলবুল মল্লিক:

বঙ্গবন্ধুসেতু-ঢাকা মহাসড়কের দুইটি ফ্লাইওভার ও চারটি আন্ডারপাস যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া ও মহাসড়ক আইপি ক্যামেরার আওতায় আনার ফলে আসন্ন ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন হওয়ার আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। বঙ্গবন্ধুসেতু-ঢাকা মহাসড়কে বর্তমানে কোন যানজট নেই। এক প্রকার নির্বিঘ্নেই বাড়ি ফিরছে ঘরমুখো মানুষ। সোমবার(৩ জুন) বিকালে মহাসড়ক পরিদর্শন করে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলাম ও পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় এমন অভিমত ব্যক্ত করেন।
এ মহাসড়ক দিয়ে উত্তরাঞ্চলের ১৬টি জেলাসহ দেশের ২৬টি জেলার ৯০টি রুটের কয়েক হাজার যানবাহন প্রতিনিয়ত চলাচল করে থাকে। ফলে ব্যস্ততম এ মহাসড়কটিতে ঈদেরসময় মহাযানজটের সৃষ্টি হতো। বিশেষ করে মির্জাপুর অংশের গোড়াই, ধেরুয়া রেলক্রসিং, মির্জাপুর, ধল্যা, জামুর্কি এসব এলাকাসহ মহাসড়কের গাজীপুরের চন্দ্রা থেকে টাঙ্গাইলের বঙ্গবন্ধুসেতুর পূর্বপাড় পর্যন্ত প্রায় ৭০ কিলোমিটার এলাকায় হামেশাই যানজট লেগে থাকত।
এজন্য বিগত ২০১৩ সালে দুইলেনের এই মহাসড়কটি চারলেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পহাতে নেয় সরকার। এরপর ভূমি অধিগ্রহণ ও অন্যান্য প্রক্রিয়া শেষে ২০১৬ সালে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়। যেটি চলতি বছর ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি নাগাদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে এই প্রকল্পের সাথে নতুন করে ২৯টি নতুন ব্রিজ, চারটি ফ্লাইওভার ও ১৪টি আন্ডারপাস সংযুক্ত হওয়ায় নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। সাসেক প্রকল্পের আওতায় বঙ্গবন্ধুসেতু-ঢাকা মহাসড়কের গাজীপুরের ভোগড়া বাইপাস মোড় থেকে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরণের কাজ চলছে। পাশাপাশি সড়কের দুই পাশে ধীরগতির যান চলাচলের জন্য পৃথক সার্ভিসলেন তৈরির কাজও চলছে।
গত ২৫ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দুইটি ফ্লাইওভার ও চারটি আন্ডারপাস উন্মুক্ত করে দেন। একই সাথে জেলা পুলিশের তত্ত্বাবধানে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন আইপি ক্যামেরার আওতায় আনা হচ্ছে। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে মহাসড়কে সুষ্ঠুভাবে যানজট নিয়ন্ত্রণ, যাত্রীদের নিরাপত্তা বিধানসহ সকল প্রকার সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতাগুলো অনায়াসে কমিয়ে আনা যাবে বলে মনে করছে টাঙ্গাইল জেলা পুলিশ। এই কাজটির পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করছেন টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায়।
ঈদ যাত্রায় যানজটমুক্ত বঙ্গবন্ধুসেতু-ঢাকা মহাসড়ক দিয়ে স্বস্তিতে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছে ঘরমুখো মানুষ। ঈদের আগেই মহাসড়কের চারলেন প্রকল্পের প্রায় ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়ে যাওয়ায় স্বস্তিতে গন্তব্যে যাচ্ছে যাত্রীরা। বিশেষ করে মহাসড়কের মির্জাপুর অংশ অনেকটা ফাঁকা থাকায় দ্রুতগতিতে যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে।

ঈদ যাত্রায় মহাসড়কে যানজট নিরসনের লক্ষ্যে ও যাত্রী হয়রানি বন্ধে বঙ্গবন্ধুসেতু-ঢাকা মহাসড়কে প্রায় ৭০ কিলোমিটার এলাকায় টাঙ্গাইল জেলা পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। এবারের ঈদ উপলক্ষে মহাসড়কে সাত শতাধিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও তিনটি কন্ট্রোল রুম, দুইটি ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন ও ১৬টি বাঁশকুল দেয়া হয়েছে- যাতে তিন চাকার কোন যানবাহন মহাসড়কে উঠতে না পারে।
ঘরমুখো মানুষ ঈদ পালন শেষে যেন পুণরায় কর্মস্থলে স্বাচ্ছন্দে ফিরতে পারে সে লক্ষ্যে মহাড়কের মোট ১০৫ কিলোমিটার এলাকা পাঁচটি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। এছাড়াও ঈদ যাত্রা নিরাপদ করতে প্রতিটি সেক্টরে একজন করে অ্যাডিশনাল এসপি, এএসপি, ইন্সপেক্টরসহ বিভিন্ন পদ মর্যাদার সদস্যরা নিয়োজিত রয়েছে। তাদের সাথে দায়িত্ব পালন করছেন কয়েকশ’ আনসার সদস্য।
মহাসড়কের পাঁচটি সেক্টরে যাত্রীদের ঈদ যাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় পাঁচটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাঁচটি কমিটিতে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সাংবাদিক, সড়ক বিভাগের কর্মকর্তা, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বার ও গ্রাম পুলিশকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে।
সরেজমিনে মির্জাপুর অংশের গোড়াই, সোহাগপাড়া, ধেরুয়া, দেওহাটা, মির্জাপুর বাইপাস, ধল্যা, পাকুল্যা, জামুর্কি, ঘারিন্দা বাইপাস, রাবনা বাইপাস, রসুলপুর, পৌলী পয়েন্টে গিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক দেখা গেছে। বিশেষ করে ধেরুয়া রেলক্রসিং এলাকায় উড়াল সেতু এবং দেওহাটা ও মির্জাপুর বাইপাসে আন্ডারপাস নির্মাণ করায় এসব এলাকা যানজটমুক্ত রয়েছে। তবে মহাসড়কের গোড়াই বাইপাস অংশে চারলেন প্রকল্পের কাজ বাকি থাকায় ওই অংশে যানবাহন কিছুটা ধীরগতিতে চলতে দেখা গেছে। ঈদের আগে যানবাহনের চাপ বাড়লে এই অংশে যানজটের আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া বঙ্গবন্ধুসেতু পূর্বপাড়ের টোলপ্লাজায় ধীরগতিতে টোল আদায়ে অনেক সময় যানজট হয়ে থাকে। মোদ্দাকথা, এবার টোলপ্লাজায় দ্রুতগতিতে টোল আদায়, চারলেন প্রকল্পের কাজ বন্ধ রাখা ও বৃষ্টি না হলে ঈদযাত্রা হবে অনেকটাই স্বস্তিদায়ক।
গোড়াই হাইওয়ে থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ(ওসি) একেএম কাউসার বলেন, গাজীপুর অঞ্চলের আওতায় গোড়াই হাইওয়ে থানা পুলিশের সদস্যরা কালিয়াকৈর রেলক্রসিং ফ্লাইওভার থেকে ধেরুয়া রেলক্রসিং ফ্লাইওভার পর্যন্ত দায়িত্বে নিয়োজিত আছে। আমরা আশা করছি, এবার ঈদ যাত্রায় মহাসড়কে কোনো হয়রানি ছাড়া ও যানজটমুক্তভাবে ঘরমুখো মানুষ ঈদে বাড়ি ফিরতে পারবে।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার(এসপি) সঞ্জিত কুমার রায় জানান, ঘরমুখো মানুষ ঘরে না ফেরা পর্যন্ত আমরা রাস্তায় থাকব। ঈদ যাত্রা শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা মাঠ থেকে ফিরব না। তিনি আরও জানান, যে সমস্ত জায়গায় রাস্তার নির্মাণ কাজ হচ্ছে সে জায়গায় যানজটের সৃষ্টি হতে পারে। এজন্য ওই পয়েন্টগুলোতে অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি, ছিনতাই ও ডাকাতি রোধে কিছু প্রিকেট পার্টি দিয়েছি। এছাড়াও বগুড়ার এসপি স্যার ও বগুড়া হাইওয়ে পুলিশের সঙ্গে আমাদের সভা হয়েছে- যাতে সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইলে কোনো ধরনের যানজট সৃষ্টি না হয়।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno