আজ- ১৭ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৪ঠা বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বুধবার  রাত ৩:১০

বাসে ধর্ষিত প্রতিবন্ধী নারী পরিবারের হেফাজতে ॥ বাসের সুপারভাইজার গ্রেপ্তার

 

বুলবুল মল্লিক:


টাঙ্গাইলের বঙ্গবন্ধুসেতুর পূর্বপাড়ের বাসস্ট্যান্ডে পরিবহন শ্রমিক কতৃর্ক ধর্ষণের শিকার প্রতিবন্ধী নারী বাসযাত্রী সোমবার(৩ সেপ্টেম্বর) তার স্বজনদের কাছে ফিরে গেছে। সোমবার দুপুরে টাঙ্গাইলের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আশিকুজ্জামান ধর্ষিতা প্রতিবন্ধী নারীটিকে আদালতের নিরাপত্তা হেফাজত থেকে তার ভাইয়ের হেফাজতে দেয়ার আদেশ দেন। এদিকে, সোমবার ভোরে কালিহাতী উপজেলার বেনুকুর্শা গ্রাম থেকে বাসের সুপারভাইজার পলাতক এরশাদকে(৪০) পুলিশ গ্রেপ্তার করে। সুপারভাইজারকে সোমবার দুপুরে ৫দিনের রিমান্ডের আবেদন করে টাঙ্গাইলের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আশিকুজ্জামান আগামিকাল তার রিমান্ড আবেদনের শুনানীর তারিখ ধার্য করেন।
এরআগে স্বজনরা টাঙ্গাইল কারাগারে গিয়ে নিরাপত্তা হেফাজতে তার সঙ্গে দেখা করে তাকে নিজেদের হেফাজতে নেয়ার জন্য আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেন। প্রতিবন্ধী নারীর ভাইয়ের পক্ষে অ্যাডভোকেট শাহিন সিদ্দিকী আদালতে বোনকে ভাইয়ের জিম্মায় দেয়ার জন্য আবেদন করেন।
বোনকে কাছে পেয়ে ভাই-বোন আদালত চত্ত্বরে আবেগাপ্লুত হয়ে ওঠেন। আবেগে উভয়েই কান্নায় ভেঙে পড়েন। ঢাকার একটি হাউজিং কোম্পানিতে নিরাপত্তা প্রহরী ওই নারীর ভাই জানান, তিনি তার বোনকে নিরাপত্তা হেফাজত থেকে নিজেদের হেফাজতে পেয়ে অত্যন্ত খুশি। একই সঙ্গে বোনের ধষর্কদের উপযুক্ত শাস্তির জন্য তিনি আইনি লড়াই চালিয়ে যাবেন। তিনি এ ঘটনায় জড়িতদের ফাঁসি দাবি করেন। এ সময় ওই নারীর বড় ভগ্নিপতিও আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
টাঙ্গাইলের কোর্ট ইন্সপেক্টর মো. আনোয়ারুল ইসলাম জানান, বাদি পক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবন্ধী ওই নারীকে পরিবারের হেফাজতে দেয়ার আদেশ দেন। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আশিকুজ্জামান আবেদনের উপর শুনানীর পর এ আদেশ দেন। এছাড়া আগে গ্রেপ্তারকৃত বাসের হেলপার নামুলের স্বীকারোক্তিমূলক জবানিতে বাসের সুপারভাইজার এরশাদের নাম বেড়িয়ে আসে। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করে ৫দিনের রিমান্ড আবেদন করে। অঅদালত আগামিকাল মঙ্গলবার(৪ সেপ্টেম্বর) রিমান্ড আবেদনের শুনানীর দিন ধার্য করেন।
তাদের নিযুক্ত অ্যাডভোকেট শাহিন সিদ্দিকী জানান, ওই নারীকে তার ভাইয়ের হেফাজতে দেয়ার জন্য রোববারই তারা সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রাখেন। সোমবার টাঙ্গাইলের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আশিকুজ্জামানের আদালতে আবেদন করা হয়। আদালত বসার পর পরই আবেদনের উপর শুনানী শেষে প্রতিবন্ধী নারীটিকে তার ভাইয়ের হেফাততে দেয়ার আদেশ দেন আদালত। পরে প্রতিবন্ধী ওই নারী তার ভাই ও বড় ভগ্নিপতির সাথে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা দেন। সেখানে ২-১দিন রেখে তাকে কুষ্টিয়া গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে বলে তার ভাই জানান।
ওই নারীর ভাই ও বড় ভগ্নিপতি জানান, কোরবানির ঈদের ২০ দিন আগে ওই নারী কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় তার বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। ঈদের আগে থেকেই তিনি বাড়ি চলে যেতে চাচ্ছিলেন। ঈদের পরদিন কাউকে না বলে বোনের বাসা থেকে চলে যান। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও না পেয়ে পরে তার বোন বাদী হয়ে ঢাকার সবুজবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। শনিবার(১ সেপ্টেম্বর) টাঙ্গাইল থেকে পুলিশের বার্তা পেয়ে কুষ্টিয়ার মিরপুর থানার পুলিশ তাদের বাড়িতে গিয়ে খবর দেয়। খবর পেয়ে শনিবার রাতেই তারা বঙ্গবন্ধুসেতু পূর্ব থানায় চলে আসেন। সেখানে ছবি দেখে ওই নারীকে শনাক্ত করেন। পরে রোববার টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে নিরাপত্তা হেফাজতে থাকা ওই নারীর সঙ্গে তারা সাক্ষাত করেন।

বৃহস্পতিবার(৩০ আগস্ট) রাত ১২টার দিকে বঙ্গবন্ধুসেতুর পূর্বপাড়ে টহলরত পুলিশের দল ওই এলাকার নৈশপ্রহরীর মাধ্যমে জানতে পারে, বাসস্ট্যান্ডে একটি বাসের ভেতর নারীর কান্না শোনা যাচ্ছে। এ খবর পেয়ে ওই টহল দল বাসটিতে গিয়ে প্রতিবন্ধী এক নারীকে উদ্ধার করে। এ সময় ওই নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে পুলিশকে জানায়। পরে পুলিশ ওই বাসের চালকের সহকারী (হেলপার) নাজমুলকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরদিন এসআই নুরে আলম বাদি হয়ে বাসের চালক আলম খন্দকার ও আটক নাজমুলকে আসামি করে নারী ও শিশু নিযার্তন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় বাসের চালক আলম খন্দকারের বিরুদ্ধে ওই নারীকে ধর্ষণ এবং সহকারী নাজমুলের বিরুদ্ধে ধর্ষণে সহায়তা করার অভিযোগ আনা হয়।
শুক্রবার সন্ধ্যায় নাজমুলকে ওই মামলায় টাঙ্গাইলের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়। এ সময় নাজমুল ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আশিকুজ্জামান তার জবানবন্দি লিপিবদ্ধ শেষে জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেন। দীর্ঘ জবানবন্দিতে নাজমুল জানান, বৃহস্পতিবার রাত ১০টার পর ওই নারী টাঙ্গাইল নতুন বাস টামির্নাল থেকে বঙ্গবন্ধুসেতুগামী বাসটিতে ওঠেন। পথিমধ্যে বিভিন্ন স্থানে অন্য সব যাত্রী নেমে যায়। সেতুর পূর্বপাড় বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছার পর ওই নারীকে একা পেয়ে বাসের চালক আলম খন্দকার ধর্ষণ করেন। এ সময় নাজমুল বাসের দরজায় দাঁড়িয়ে থেকে পাহারা দেন।
শনিবার ধর্ষণের শিকার ওই নারীকে আদালতে হাজির করে পুলিশ সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানোর আবেদন করে। আদালত তাকে গাজীপুরের পুবাইলে সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানোর আদেশ দিয়েছিলেন।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno