আজ- ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শনিবার  সকাল ১১:৫৫

মঙ্গলবার ২৩ ব্রিজ খুলে যাবে :: মহাসড়কে ঈদযাত্রায় ভোগান্তি বাড়াবে চার লেনের কাজ

 

দৃষ্টি নিউজ:


বঙ্গবন্ধুসেতু-ঢাকা মহাসড়কে যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ, খানাখন্দ, চারলেনের উন্নীত করণের কাজ ও গতিরোধক আসন্ন ঈদযাত্রায় যাত্রী সাধারণের ভোগন্তির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এদিকে, মঙ্গলবার(১২ জুন) এ মহাসড়কের ২৩টি ব্রিজ যানবাহন চলাচলের জন্য পুরোপুরি খুলে দেয়া হচ্ছে। তারপরও চার লেন প্রকল্পের কাজ চলমান থাকা ও মাত্রাতিরিক্ত গতিরোধকের কারণে এ মহাসড়কে ঈদযাত্রায় তীব্র যানজটের আশঙ্কা রয়েছে। এরমধ্যে টানা বৃষ্টি হলে যানজট সহ চরম ভোগান্তির শিকার হবে চালক ও যাত্রীরা।
গাজীপুরের চন্দ্রা থেকে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ৭০ কিলোমিটার সড়কের বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘ যানজটে প্রতিদিন যাত্রী সাধারণকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির কারণে মহাসড়কের কদিমধল্যা, পাকুল্যা, জামুর্কি, নাটিয়াপাড়া, দেওহাটা, ধেরুয়া, সোহাগপাড়া ও ক্যাডেট কলেজ, করটিয়া, টাঙ্গাইল রাবনা বাইপাস, ঘারিন্দা বাইপাস, রসুলপুর ও এলেঙ্গাসহ অধিকাংশ সড়কের দুই পাশে কাঁচা মাটি ভরাট করায় ও ব্রিজ নির্মাণের ফলে যানজট নিত্যদিনের সঙ্গী হয়েছে। এছাড়া মহাসড়কে উন্নয়ন কাজে ব্যবহৃত রাস্তার ভাঙাচোরা গর্ত ও ছড়িয়ে পড়ে থাকা পাথরের কারণে যাত্রীবাহী বাস ও মালবাহী ট্রাক বিকল হয়ে যানজটের মাত্রা অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছতে পারে। পর্যাপ্ত হাইওয়ে পুলিশ, থানা পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশ না থাকা এবং রেকারের অভাবে দেবে যাওয়া এবং বিকল হওয়া যাত্রীবাহী বাস ও মালবাহী ট্রাক ওঠাতে দেরি হওয়া এ মহাসড়কে যানজটের জন্য বেশি দায়ি। একই সঙ্গে চলছে মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ। এসব বহুবিধ কারণে যানজটের সৃষ্টি হয়ে থাকে। তবে চালক ও যাত্রীসাধারণ বর্তমানে এ মহাসড়কে যানজটের প্রধান কারণ হিসেবে ‘গতিরোধক’কে দায়ি করছেন। শুধু তাই নয়, সড়কের পাশে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা, হাট-বাজারগুলোও মহাসড়কে যানজটের অন্যতম কারণ বলে মনে করেন যাত্রী ও চালকরা। তবে আশার কথা, মঙ্গলবার(১২ জুন) থেকে এ মহাসড়কের ২৩টি ব্রিজ যানচলাচলের জন্য পুরোপুরি খুলে দেয়া হবে বলে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঘোষণা দিরেয়ছেন। রোববার(১০ জুন) দুপুরে গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা-ঢাকা-এলেঙ্গা মহাসড়ক পরিদর্শনকালে সেতুমন্ত্রী বলেন, ঈদ উপলক্ষে মঙ্গলবার(১২জুন) চন্দ্রা থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুসেতু-ঢাকা মহাসড়কে ফোরলেন পুরোপুরি খুলে দেয়া হবে। সেখানে ২৩টি ব্রিজের উপর দিয়ে গাড়ি চলবে। এতে জনসাধারণের ভোগান্তি কমবে।
বাসচালক আবু বকর, শামীম, রাব্বী, মোতালেব সহ অনেকেই জানান, চার লেনের কাজ চলমান থাকায় চন্দ্রা থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে মির্জাপুর, গোড়াই, ঘারিন্দা বাইপাস, কদিমধল্যা, রাবনা বাইপাস, রসুলপুর এলাকায় এসব গর্তের পরিমাণ বেশি। তাছাড়া যেসব স্থানে ব্রিজ নির্মিত হচ্ছে সেখানকার রাস্তা তুলনামূলকভাবে বেশি খারাপ। মহাসড়কের পাশে কিছু এলাকায় হাট-বাজার রয়েছে। এ হাট-বাজারগুলোর জন্য গতি কমিয়ে যানবাহন চলাচল করে থাকে- ফলে যানজট তীব্র আকার ধারণ করে।
তারা জানান, এলেঙ্গা থেকে চন্দ্রা পর্যন্ত যে কয়টি ব্রিজ নতুন নির্মাণ করা হচ্ছে, এসব ব্রিজের আগে-পরে গতিরোধক দেয়া হয়েছে। এছাড়া সড়কে উন্নয়ন কাজ চলায় বিভিন্ন স্থানে গতিরোধক দেয়া হয়েছে। পুরো গতিতে থাকা একটি গাড়ি যখন এই গতিরোধক পাড়ি দেয়, তখন গাড়ির গতি কমিয়ে দিতে হয়। তখনই দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। তারা আরো জানান, এমনিতে চার লেনে কাজ করায় সড়কের অধিকাংশ স্থানে ভালো হয়েছে। আবার কিছু স্থানে সড়ক সরু হয়ে গেছে। এমনিতে মহাসড়কে যে পরিমাণ গাড়ি চলে তাতেই এসব স্থানে প্রায় দিনই যানজট হচ্ছে। ঈদের সময় যানবাহন কয়েকগুণ বেড়ে যায়। তাতে যানজটের শঙ্কাও বেশি থাকে।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, জয়দেবপুর থেকে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পর্যন্ত চলমান চার লেন প্রকল্পে ২৬টি ব্রিজের মধ্যে ২৪টি ব্রিজের কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়া তিনটি ফ্লাইওভারের কাজ ৭০ ভাগ শেষ হয়েছে, নির্মীয়মাণ রয়েছে আরও ১০টি রেল ওভারপাস ও আন্ডারপাস। মোট ৬০টি কালভার্টের মধ্যে ৫২টি কালভার্টের নির্মাণকাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। তবে এগুলোর সংযোগ সড়ক এখনও নির্মাণ করা হয়নি।
গাজীপুরের চন্দ্রা থেকে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ৭০ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান আবদুল মোনেম লি., মীর আক্তার হোসেন লি. ও ডিএনকো দ্রুত গতিতে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করার চেষ্টা করলেও ঈদের আগে পুরোপুরি যান চলাচলের উপযোগী করে তোলা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া ঘন ঘন বৃষ্টির কারণে এ মহাসড়কে উন্নয়ন কাজ অনেকটা ব্যাহত হয়েছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পের প্রায় ৬০ শতাংশের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। তাই এবারের ঈদযাত্রা গত বছরগুলোর তুলনায় অনেকটাই ভোগান্তিহীন হওয়ার আশা করছেন তারা।
এ বিষয়ে সাসেক সংযোগ সড়ক প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক(৩) জিকরুল হাসান জানান, চার লেন প্রকল্পের কাজ চলমান থাকা অবস্থায় আমরা যে ব্রিজগুলো চালু করেছি, তা অস্থায়ীভাবে চালু হয়েছে। ঈদের আগের ১০ দিন ও পরের ১০ দিন এভাবে চলবে। ঈদযাত্রা শেষ হয়ে গেলে এসব ব্রিজের জয়েন্টগুলোতে আবারও কাজ করব। ব্রিজের জোড়াগুলোর কাজ করার কারণে অস্থায়ী গতিরোধক দিতে হয়েছে। এ গতিরোধকগুলো যদি দুই লেনে চলাচলের সময় থাকত তবে হয়তো যানজটের সৃষ্টি হতো। কিন্তু চার লেনে চলাচল হওয়ায় আসন্ন ঈদে খুব একটা সমস্যা হবে না।
তিনি আরও জানান, চন্দ্রা থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। এর মধ্যে ৪০ কিলোমিটার অংশ দুই পাশের মিলিয়ে চার লেন হয়ে গেছে। বাকি ১০ কিলোমিটার অংশে দুই লেনের দুই পাশে অস্থায়ীভাবে আরও ১৪-১৫ মিটার করে সড়ক করে দেয়া হয়েছে। তাছাড়া জেলা পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ সহযোগিতা করছে। এবারের ঈদযাত্রা অনেকটাই ভোগান্তিহীন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আমিনুল এহ্সান জানান, চার লেনে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীদের সঙ্গে জেলা সড়ক বিভাগের কর্মীরাও মহাসড়কের সার্বিক দায়িত্বে থাকবে। বৃষ্টি বা অন্য কোনো কারণে বড় গর্তের সৃষ্টি হলে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে তা চলাচলের ব্যবস্থা করা হবে। এতে এবার উত্তর ও দক্ষিণ বঙ্গের মানুষ ভোগান্তিহীনভাবে মহাসড়ক পাড়ি দেবে।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno