আজ- ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বৃহস্পতিবার  বিকাল ৪:৫৬

মহান স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠক শাজাহান সিরাজ আর নেই

 
শাজাহান সিরাজ

বুলবুল মল্লিক:

মহান স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠক সাবেক মন্ত্রী শাজাহান সিরাজ (৭৭) আর নেই। তিনি মঙ্গলবার(১৪ জুলাই) বিকাল সাড়ে ৩ টায় রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন(ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শাজাহান সিরাজের সহধর্মিনী রাবেয়া সিরাজ।

বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী শাজাহান সিরাজ ১৯৪৩ সালের ১ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আব্দুল গণি মিয়া এবং মাতার নাম রাহিমা খাতুন। বাড়ি টাঙ্গাইলের কালিহাতী পৌরসভার বেতডোবায়।

১৯৬২ সালে হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে শাহজাহান সিরাজ ছাত্র-রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। সে সময় তিনি টাঙ্গাইলের করটিয়া সা’দত কলেজের ছাত্র ছিলেন।

এরপর তিনি ছাত্রলীগের মাধ্যমে ছাত্র-রাজনীতিতে উঠে আসেন। ১৯৬৪-৬৫ এবং ১৯৬৬-৬৭ দুই মেয়াদে তিনি দুইবার করটিয়া সা’দত কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন।

একজন সক্রিয় ছাত্রনেতা হিসেবে তিনি ১১ দফা আন্দোলন এবং ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করেন। এরপর তিনি ১৯৭০-৭২ মেয়াদে অবিভক্ত ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

মহান মুক্তিযুদ্ধের পর সর্বদলীয় সমাজতান্ত্রিক সরকার গঠনের পক্ষে অবস্থান নিয়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) গঠনে ভূমিকা পালন করেন। পরবর্তীতে জাসদের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৬-৭৭ সালে সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় তিনি ‘গণবাহিনী’ গঠন করেন।

জাসদের মনোনয়নে তিন বার(১৯৭৯, ১৯৮৮, ১৯৯১) তিনি জাতীয় সংসদের টাঙ্গাইল-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

প্রাজ্ঞ পার্লমেন্টারিয়ান শাজাহান সিরাজ ১৯৯৫ সালে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপিতে যোগ দেন। তিনি বিএনপির মনোনয়নেও একবার(২০০১) একই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান মনোনীত হন।

বিগত চারদলীয় জোট সরকারে তিনি প্রথমে নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী এবং পরে বন ও পরিবেশ, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বপালন করেন। ১/১১ সময়ে দুর্নীতির দায়ে শাজাহান সিরাজের জেল হয়।

শাহজাহান সিরাজ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। মুক্তিযুদ্ধের সময় যাদের ‘চার খলিফা’ বলা হতো, তিনি ছিলেন তাদেরই একজন।

বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা তৈরির পরিকল্পনাকারীদের মধ্যে তিনি অন্যতম। ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ পল্টন ময়দানে বিশাল এক ছাত্র-জনসভায় বঙ্গবন্ধুর সামনে মহান স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেন শাহজাহান সিরাজ।

শিক্ষানুরাগী হিসেবে কালিহাতী উপজেলা সদরে তিনি ‘কালিহাতী শাজাহান সিরাজ কলেজ’ সহ একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন।

তিনি মৃত্যুকালে স্ত্রী রাবেয়া সিরাজ, এক ছেলে রাজিব সিরাজ শুভ এবং এক মেয়ে ব্যারিস্টার সারওয়াত সিরাজ শুক্লাসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

প্রয়াত শাজাহান সিরাজের স্ত্রী রাবেয়া সিরাজ বলেন, তিনি দীর্ঘদিন যাবত অসুস্থ ছিলেন। বাসায় ও হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলতো। আমি তার বিদেহী আত্মার জন্য কালিহাতীবাসীসহ দেশের সকলের কাছে দোয়া চাই।

রাবেয়া সিরাজ আরো বলেন, ওনার মরদেহ বুধবার(১৫ জুলাই) টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে নেওয়া হবে। এলেঙ্গা ও কালিহাতীতে নামাজে জানাজা শেষে তাকে ঢাকার বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে।

শাজাহান সিরাজের মৃত্যুতে কালিহাতী ও টাঙ্গাইলের সাধারণ মানুষসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ শোক প্রকাশ করেছেন।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno