আজ- ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শনিবার  সকাল ৮:৫৬

মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হত্যা মামলার সাক্ষ্য গ্রহন শুরু ॥ পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণ ২০ মার্চ

 

‌দৃষ্টি নিউজ:


টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমদ হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ রোববার(১১ ফেব্রুয়ারি) শুরু হয়েছে। টাঙ্গাইলের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আবুল মনসুর মিয়ার আদালতে মামলার বাদি নাহার আহমদের সাক্ষ্য প্রদানের মধ্য দিয়ে এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহন শুরু হয়। আগামি ২০ মার্চ এ মামলার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করা হয়েছে। এরআগে অসুস্থ্যতার কারণে আমানুর রহমান খান রানা এমপিকে আদালতে হাজির না করায় চার বার এ মামলার সাক্ষ্য গ্রহন পিছানো হয়।
আদালতের পরিদর্শক আনোয়ারুল ইসলাম জানান, আদালতের বিচারক আবুল মনসুর মিয়া সকাল ১১টায় এজলাশে বসেন ও প্রথমেই চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার কার্যক্রম শুরু করেন। রাষ্ট্রপক্ষ মামলার বাদি নাহার আহমদ, ছেলে আহমদ মজিদ সুমন ও মেয়ে ফারজানা আহমদ মিথুনের হাজিরা দাখিল করেন। এদিকে, কেরানিগঞ্জে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে এ হত্যা মামলার প্রধান আসামি টাঙ্গাইল-৩(ঘাটাইল) আসনের সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানাকে সকাল সাড়ে ৯টায় আদালতে হাজির করা হয়।
এ প্রসঙ্গে মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও অতিরিক্ত পিপি মনিরুল ইসলাম খান জানান, রোববার মামলার বাদি নাহার আহমদের সাক্ষ্য নেয়া হয়। তার সাক্ষ্য শেষে বিবাদি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুল বাকী মিয়া বাদিকে জেরা শুরু করেন। জেরা অসমাপ্ত থাকা অবস্থায় আদালত মুলতবি ঘোষণা করা হয়। এ সময় আদালত আগামি ২০ মার্চ এ মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়। ২০ মার্চ সাক্ষ্যগ্রহণের দিনে বাদির অসমাপ্ত জেরা শেষে অন্য সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ ও জেরা করা হবে বলে জানানো হয়।
সাক্ষ্যগ্রহন কালে এ মামলায় কারাগারে আটক আসামি আনিসুল ইসলাম রাজা, মোহাম্মদ আলী ও মো. সমিরকে আদালতে হাজির করা হয় এবং জামিনের থাকা অপর তিন আসামি মাসুদুর রহমান, ফরিদ আহম্মেদ ও নাসির উদ্দিন নুরু আদালতে হাজির হন।
এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট আব্দুল গফুর ও অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহের। অপরদিকে আসামি পক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট আব্দুল বাকী মিয়া, জহিরুল ইসলাম জহিরসহ আরো কয়েকজন।
এদিকে, আদালত চত্তর এলাকায় এমপি রানার সমর্থক ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। রোববার সকালে টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমদ হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য এমপি রানাকে হাজির করার পর এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমদ হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহনের আগেই সাংসদ রানাকে আদালতে হাজির করার পর তার সমর্থকরা আদালত চত্ত্বরে অবস্থান নেয়। এ সময় ফারুক আহমদ হত্যাকান্ডের বিচারের দাবিতে সোচ্চার জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ধীরে ধীরে জমায়েত হতে থাকে। পরে এমপি রানার সমর্থকরা তার মুক্তির দাবিতে স্লোগান দিলে দু’গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এক পর্যায়ে এমপি রানার সমর্থকরা পালিয়ে যায়। পরে আদালত চত্ত্বরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
অপরদিকে, বীরমুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমদ হত্যা মামলার আসামিদের ফাঁসির দাবিতে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা আদালত এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে। জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম-সম্পাদক নাহার আহমদ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক তানভীর হাসানের(ছোট মনি) নেতৃওেত্ব বিক্ষোভ মিছিলটি জেলা সদরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম-সম্পাদক নাহার আহমদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ও টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র জামিলুর রহমান মিরণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক তানভীর হাসান(ছোট মনি), টাঙ্গাইল পৌরসভার প্যানেল মেয়র সাইফুজ্জামান সোহেল, তানভীর হাসান নোমান, জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক মাতিনুজ্জামান খান সুখন প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, টাঙ্গাইল-৩(ঘাটাইল) আসনের এমপি আমানুর রহমান খান রানা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ফিস্টুলা অপারেশনের কারণে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ড. আনম নূরে আজমের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন। অপারেশন জনিত কারণে তিনি ভ্রমণে সাময়িকভাবে অক্ষম হওয়ায় আদালতে হাজির না করায় ইতিপূর্বে নয় বার এ মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানী পিছিয়ে যায়। এরপর গত ৬ সেপ্টেম্বর মামলাটির অভিযোগ গঠন করা হয়। একই সাথে সাক্ষ্যগ্রহণের প্রথম দিন ছিল ১৮ অক্টোবর, দ্বিতীয় দিন ছিল ১ নভেম্বর ও তৃতীয় দিন ছিল ২৭ নভেম্বর। তবে তিনি অসুস্থ্য জনিত কারণে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় এর পরবর্তী দিন ধার্য করা হয় ২২ জানুয়ারি। ওইদনও অনুপস্থিত থাকায় এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহনের জন্য ১১ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করা হয়। ধার্য দিন ১১ ফেব্রুয়ারি এ মামলার বাদির সাক্ষ্যগ্রহনের মধ্য দিয়ে প্রথম সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হলো।
উল্লেখ্য, বিগত ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমদ শহরের কলেজপাড়ায় নিজ বাসার সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। এ ঘটনার তিন দিন পর নিহতের স্ত্রী নাহার আহমদ বাদি হয়ে টাঙ্গাইল মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা দায়ের করেন। পরে মামলাটি জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তরিত হয়। তদন্ত কর্মকর্তা টাঙ্গাইল গোয়েন্দা পুলিশের তৎকালীন এসআই অশোক কুমার সিংহ (পিপিএম) এ হত্যাকান্ডে এমপি রানা ও তার ভাইদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পান।
দীর্ঘদিন তদন্ত শেষে ২০১৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি এমপি আমানুর রহমান খান রানা, তার ভাই সহিদুর রহমান খান মুক্তি, জাহিদুর রহমান খান কাকন, সানিয়াত খান বাপ্পা সহ ১৪জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা টাঙ্গাইল গোয়েন্দা পুলিশের তৎকালীন পরিদর্শক গোলাম মাহফিজুর রহমান। এরপর ১৮ সেপ্টেম্বর এমপি রানা আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাকে জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক। নয় বার তারিখ পেছানোর পর গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর দন্ডবিধির ৩০২/ ১২০/৩৪ ধারায় সংসদ সদস্য রানা ও তার তিন ভাইসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু করেন আদালত। এ মামলার চার আসামিকে গ্রেপ্তার করা হলেও বাকি ১০ আসামি এখনও পলাতক রয়েছে।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno