আজ- ১৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ মঙ্গলবার  সকাল ৯:৪৫

রক্তঝরা ১৫ আগস্ট :: অশ্রুভেজা জাতীয় শোক দিবস আজ

 

দৃষ্টি নিউজ:

কেঁদেছিল আকাশ, ফুঁপিয়ে ছিল বাতাস। বৃষ্টিতে নয়, ঝড়ে নয়- এ অনুভূতি ছিল পিতা হারানো শোকের। প্রকৃতি কেঁদেছিল; কারণ মানুষ কাঁদতে পারেনি। ঘাতকের উদ্ধত সঙ্গিন তাদের কঁাদতে দেয়নি। তবে ভয়াতর্ বাংলার প্রতিটি ঘর থেকে এসেছিল চাপা দীঘর্শ্বাস। কি নিষ্ঠুর, কি ভয়াল, কি ভয়ঙ্কর- সেই রাত। আজ রক্তঝরা অশ্রুভেজা ১৫ আগস্ট, জাতীয় শোক দিবস। বাঙালি জাতির শোকের দিন। ১৯৭৫ সালের এ দিন ভোরের আলো ফোটার আগেই স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে কিছু বিপথগামী সেনা। বিশ্বরাজনীতির ইতিহাসে জুড়ে দেয় কৃষ্ণদাগ। মানচিত্রের কাঁধে চাপিয়ে দেয় ইতিহাসের সবচেয়ে ভারী লাশের বোঝা।
দেশি-বিদেশি চক্রান্তকারী তথা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী সাম্রাজ্যবাদী শক্তির এদেশীয় দোসরদের চরম বিশ্বাসঘাতকতার কাছে জাতির জনকের বিশ্বাসের দৃঢ় প্রত্যয় ভেঙে পড়েছিল ১৫ আগস্টের সেই নৃশংস কালরাতে। বঙ্গবন্ধু ও তার স্বজনদের রক্তে সেদিন প্লাবিত হয় ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের সেই ঐতিহাসিক বাড়ি। অস্তমিত হয়েছিল জাতীয় গৌরবের প্রতীক সূযের্র মতো অনন্য এক অধ্যায়। ১৫ আগস্ট সুবেহ সাদেকের সময় পবিত্র আজানের ধ্বনিকে বিদীণর্ করে ঘাতকের মেশিনগানের ঝাঁক ঝাঁক গুলি। ঝাঁঝরা হয়ে ওঠে স্বাধীন বাংলার বুক। শহীদ হন স্বাধীন বাংলার স্বপ্নদ্রষ্টা, বাংলার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
চক্রান্তকারী সেনা সদস্যরা সেদিন নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল তার সহধমির্ণী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, তিন ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল ও ১০ বছরের শিশু শেখ রাসেল এবং বঙ্গবন্ধুর দুই পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামালকে। তবে দেশের বাইরে থাকায় সেদিন বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে বতর্মান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা। সেই কালরাতে আরও প্রাণ হারান বঙ্গবন্ধুর কয়েকজন নিকটাত্মীয়। বঙ্গবন্ধুর জীবন বাঁচাতে ছুটে গিয়ে ঘাতকদের হাতে প্রাণ দিয়েছিলেন তার সামরিক সচিব জামিল উদ্দিন আহমেদসহ কয়েকজন নিরাপত্তা কমর্কতার্ ও কমর্চারী।
বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর গোটা বিশ্বে নেমে এসেছিল শোকের ছায়া। হত্যাকারীদের প্রতি ছড়িয়ে পড়েছিল ঘৃণার বিষবাষ্প। পশ্চিম জামাির্নর নেতা নোবেল পুরস্কার বিজয়ী উইলি ব্রানডিট বলেছিলেন, মুজিবকে হত্যার পর বাঙালিদের আর বিশ্বাস করা যায় না। যে বাঙালি শেখ মুজিবকে হত্যা করতে পারে তারা যেকোনো জঘন্য কাজ করতে পারে।
বঙ্গবন্ধুকে নিমর্মভাবে হত্যা করার পর স্বাধীনতাবিরোধীরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় পুনবাির্সত হতে থাকে। তারা এ দেশের ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলতে নানা উদ্যোগ নেয়। শাসকদের রোষানলে বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণও যেন নিষিদ্ধ হয়ে পড়েছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার ঠেকাতে কুখ্যাত ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ জারি করেছিল মোশতাক সরকার। দীঘর্ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসীন হলে ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ বাতিল করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ উন্মুক্ত করা হয়। বিচার শুরু হয় ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাঙালি জাতির ললাটে যে কলঙ্কতিলক পরিয়ে দেয়া হয়েছিল, ৩৫ বছরেরও বেশি সময় পর ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি সেই কলঙ্ক থেকে জাতির মুক্তি ঘটে। বঙ্গবন্ধু হত্যার চূড়ান্ত বিচারের রায় অনুযায়ী ওই দিন মধ্যরাতের পর বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি বরখাস্তকৃত লে. কনের্ল সৈয়দ ফারুক রহমান, লে. কনের্ল (অব.) সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, মেজর (অব.) বজলুল হুদা, লে. কনের্ল (অব.) এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ (ল্যান্সার) এবং লে. কনের্ল (অব.) মুহিউদ্দিন আহমেদকে (আটির্লারি) ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি ফঁাসির দড়িতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ডের রায় কাযর্কর করা হয়। তবে বঙ্গবন্ধুর আরও ছয় খুনি এখনো রয়েছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। এদের মধ্যে চারজনের অবস্থান এখনো শনাক্তই করা যায়নি। বাকি দুজনের অবস্থান বিদেশে শনাক্ত হলেও তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে দন্ড কাযর্কর করার ক্ষেত্রে চলমান আলোচনায় এখনো কোনো সুফল আসেনি।
মুজিব হত্যাকান্ডে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামিরা হলেন- আব্দুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম, এম রাশেদ চৌধুরী, এসএইচএমবি নূর চৌধুরী, আব্দুল মাজেদ ও রিসালদার মোসলেমউদ্দিন। তাদের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিস জারি করা আছে। এদের মধ্যে নূর চৌধুরী কানাডায় এবং এম রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে বলে নিশ্চিত ইন্টারপোলের বাংলাদেশ শাখা ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি)। বাকিরা কোথায় আছে সে বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো ধারণা নেই কারো।
যথাযোগ্য মযার্দায় জাতীয় শোক দিবস পালন করতে রাষ্ট্রীয়ভাবে নানা কমর্সূচি হাতে নেয়া হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে আলাদা বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও নানা কমর্সূটি নেয়া হয়েছে।
আজ বুধবার সরকারি ছুটি। দিবসটি পালন করতে সূযোর্দয়ের সঙ্গে সঙ্গে সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বেসরকারি ভবনসহ বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা অধর্নমিত রাখা হবে। আয়োজন করা হবে আলোচনা সভার।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno