আজ- ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বৃহস্পতিবার  সকাল ৬:২৭

শোকাবহ জেল হত্যা দিবস আজ

 

দৃষ্টি নিউজ:


আজ ৩ নভেম্বর(শুক্রবার)। কলঙ্কজনক ও শোকাবহ জেলহত্যা দিবস। ১৯৭৫ সালের এই দিন মধ্যরাতে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন (অব.) এম মনসুর আলী এবং এএইচএম কামরুজ্জামানকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
ইতিহাসের এই নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় শুধু বাংলাদেশের মানুষই নয়, স্তম্ভিত হয়েছিল সমগ্র বিশ্ব। কারাগারের নিরাপদ আশ্রয়ে থাকা অবস্থায় বর্বরোচিত এ ধরনের হত্যাকা- পৃথিবীর ইতিহাসেও বিরল ঘটনা বলে বিবেচনা করা হয়। শোকাবহ এ দিনটি নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালন করবে আওয়ামী লীগ।
জেল হত্যার বিষয়ে শহীদ মনসুর আলীর পুত্র ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার হত্যাকান্ড ছিল একই ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতা। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খন্দকার মোশতাক আহমেদের নেতৃত্বে ষড়যন্ত্রকারীরা জাতীয় চার নেতাকে তাদের সরকারে যোগদানের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর এই জাতীয় চার নেতা সেই প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন। এ কারণে তাদের নির্মমভাবে জীবন দিতে হয় বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, ঘাতকরা জানত এই জাতীয় চার নেতা জীবিত থাকলে তারা কোনো দিন পার পাবে না। খুনিরা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেও নিজেদের নিরাপদ ভাবতে পারেনি, সব সময় আতঙ্কে ছিল কখন জনতা ফুঁসে উঠে। তাই বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের শোক মুছতে না মুছতেই ৩রা নভেম্বর জাতির জীবনে আরেকটি কলঙ্কজনক ও জঘন্যতম হত্যাকান্ডে মেতে উঠে খুনিরা। মূলত জাতিকে নেতৃত্ব শূন্য করাই ছিল খুনিদের লক্ষ্য।
নাসিম বলেন, নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বঙ্গবন্ধু ছিলেন পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি। কিন্তু যুদ্ধরত জাতি নেতৃত্বশূন্য ছিল না। যে চার মহান নেতা সেই সময়ে বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতির শূন্যস্থান পূরণ করে রেখেছিলেন অত্যন্ত সফলভাবে তারা হলেন- সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী এবং এএইচএম কামরুজ্জামান। বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন তারা বঙ্গবন্ধুর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। তারা ছিলেন বঙ্গবন্ধুর আজীবন সহচর।
ইতিহাস সূত্রে জানা যায়, হত্যাকান্ডের পরদিন তৎকালীন পুলিশের ডিআইজি প্রিজন মো. আবদুল আউয়াল লালবাগ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ১৯৭৫ সালের ৫ নভেম্বর লালবাগ থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত ওসি এবিএম ফজলুল করিমকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়। ওই বছরের ২১ নভেম্বর মামলার তদন্তভার সিআইডিকে দেয়া হয়। ওই সময় সুপ্রিমকোর্টের তিন বিচারপতির সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ফলে মামলার তদন্ত সিআইডি আর করতে পারেনি। পরে ১৯৭৬ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবারও তদন্তের জন্য অনুমতি চেয়ে চিঠি দেয়া হয়। কিন্তু তদন্তের বদলে মামলাটি ঝুলে থাকে প্রায় ২১ বছর। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর মামলার তদন্ত কার্যক্রম শুরু করা হয়। সে সময় এই মামলায় লে. কর্নেল (অব.) সৈয়দ ফারুক হোসেন, লে. কর্নেল (অব.) সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান এবং মেজর (অব.) মো. খায়রুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা হয়।
১৯৯৮ সালের ১৫ অক্টোবর ২০ জনকে আসামি করে মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দেয়া হয়। ৬ বছর শুনানি শেষে ২০০৪ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. মতিউর রহমান এই মামলার রায় ঘোষণা করেন। এতে ৩ জনকে ফাঁসি এবং ১২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়। এছাড়া অভিযুক্ত ৪ রাজনীতিবিদ কেএম ওবায়দুর রহমান, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, নুরুল ইসলাম মঞ্জুর, তাহের উদ্দিন ঠাকুর এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা মেজর (অব.) খায়রুজ্জামান বেকসুর খালাস পান।
পরে ২০০৮ সালের ২৮ আগস্ট হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ নিম্ন আদালতের রায়ে মৃতু্্যদন্ডপ্রাপ্ত ২ আসামি দফাদার মারফত আলী শাহ এবং দফাদার আবুল হাশেম মৃধাসহ যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত লে. কর্নেল (বরখাস্তকৃত) সৈয়দ ফারুক রহমান, লে. কর্নেল (অব্যাহতিপ্রাপ্ত) সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, মেজর (অব্যাহতিপ্রাপ্ত) বজলুল হুদা এবং মেজর (অব.) একেএম মহিউদ্দিন আহমদকে খালাস দেন। তবে রিসালদার মোসলেমউদ্দিন খানের মৃতু্্যদন্ড বহাল রাখা হয়। একই সঙ্গে পলাতক অপর ৮ আসামি অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল খন্দকার আবদুর রশিদ, মেজর শরিফুল হক ডালিম, লে. কর্নেল নূর চৌধুরী, লে. কর্নেল রাশেদ চৌধুরী, মেজর আহমদ শারফুল হোসেন, ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদ, ক্যাপ্টেন মো. কিসমত হাশেম, ক্যাপ্টেন নাজমুল হোসেন আনসারের যাবজ্জীবন কারাদন্ড বহাল রাখে হাইকোর্ট। ২০০৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল দায়ের করা হয়। উচ্চ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ায় আপিলের অনুমতি পাওয়ার পর সর্বোচ্চ আদালতে শুনানি শেষে ২০১৩ সালের ৩০ এপ্রিল চূড়ান্ত রায় ঘোষিত হয়। রায়ে জেলহত্যা মামলার পলাতক আসামি দফাদার মারফত আলী শাহ ও আবুল হাশেম মৃধার বিরুদ্ধে হত্যাকান্ডের ষড়যন্ত্রের বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় নিম্ন আদালতের মৃতু্্যদন্ডের রায় বহাল রাখে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno