দৃষ্টি নিউজ:
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শুভ বুদ্ধপূর্ণিমা আজ বুধবার(১০ মে)। গৌতম বুদ্ধের শুভ জন্ম, বোধিজ্ঞান ও মহাপরিনির্বাণ লাভ- এই তিন স্মৃতিবিজড়িত বৈশাখী পূর্ণিমা বিশ্বের বৌদ্ধ সমপ্রদায়ের কাছে বুদ্ধপূর্ণিমা নামে পরিচিত। বৌদ্ধরা এ দিনটিকে প্রার্থনা, আনন্দ ও উৎসবের মধ্য দিয়ে পালন করে থাকেন।
বুদ্ধপূর্ণিমার এই দিনে বাংলাদেশের পাশাপাশি বিশ্বের সব বৌদ্ধ নিজ নিজ প্যাগোডায় বুদ্ধপূজাসহ পঞ্চশীল, অষ্টশীল, সূত্রপাঠ, সূত্রশ্রবণ সমবেত প্রার্থনার আয়োজন করে থাকেন।
এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সঙ্ঘের উদ্যোগে রাজধানীর সবুজবাগের ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহার, বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনের উদ্যোগে মেরুল বাড্ডার আন্তর্জাতিক বৌদ্ধবিহারসহ দেশের সব বৌদ্ধবিহারে ধর্মীয় উৎসব পালন করা হবে।
নিজ নিজ প্যাগোডায় ধারাবাহিক কর্মসূচির মধ্যে প্রভাতফেরি, জাতীয় ও ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন, শান্তি শোভাযাত্রা, বুদ্ধপূজা, শীল গ্রহণ সমবেত প্রার্থনা এবং সন্ধ্যায় প্রদীপ পূজা, শীল গ্রহণ সমবেত প্রার্থনা ও ‘বুদ্ধপূর্ণিমার তাৎপর্য’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
বুদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দেশের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সংগঠন ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বুদ্ধপূর্ণিমায় পৃথক পৃথক শুভেচ্ছা বাণী দিয়েছেন।
বুদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষে আজ(বুধবার) সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ বেসরকারি চ্যানেলগুলো বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে। এ ছাড়াও সংবাদপত্রগুলো বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ করবে।
গৌতম বুদ্ধের জীবনী:
উত্তর-পূর্ব ভারতের কপিলাবাস্তু নগরীর রাজা শুদ্ধোধনের পুত্র ছিলেন সিদ্ধার্থ (গৌতম বুদ্ধ)। খ্রিস্টপূর্ব ৫৬৩ অব্দে এক শুভ বৈশাখী পূর্ণিমা তিথিতে লুম্বিনি কাননে (নেপাল) জন্ম নেন সিদ্ধার্থ (গৌতম বুদ্ধ)। তার জন্মের সাত দিন পর তার মা রানী মহামায়া মারা যান। তার জন্মের অব্যবহিতকাল পর কপিল নামক সন্ন্যাসী কপিলাবাস্তু নগরীতে আসেন। তিনি সিদ্ধার্থকে দেখে ভবিষ্যদ্বাণী করেন, সিদ্ধার্থ ভবিষ্যতে হয় চার দিগ্জয়ী রাজা হবেন, নয়তো একজন মহামানব হবেন। মা মারা যাওয়ার পর সৎমা মহাপ্রজাপতি গৌতমী তাকে লালনপালন করেন, তাই তার অপর নাম গৌতম। ছোটবেলা থেকেই সিদ্ধার্থ সব বিষয়ে পারদর্শী ছিলেন। কিন্তু সিদ্ধার্থ সংসারের প্রতি উদাসীন ছিলেন বলে তাকে সংসারি করানোর জন্য ১৬ বছর বয়সে রাজা শুদ্ধোধন যশোধরা মতান্তরে যশোধা বা গোপা দেবী নামের এক সুন্দরী রাজকন্যার সঙ্গে তার বিয়ে দেন। রাহুল নামে তাদের একটি ছেলেসন্তান ভূমিষ্ট হয়। ছেলের সুখের জন্য রাজা শুদ্ধোধন চার ঋতুর জন্য চারটি প্রাসাদ নির্মাণ করে দেন। কিন্তু উঁচু দেয়ালের বাইরের জীবন কেমন, তা জানতে তিনি খুবই ইচ্ছুক ছিলেন। একদিন রথে চড়ে নগরী ঘোরার অনুমতি দেন তার পিতা। নগরীর সব অংশে আনন্দ করার নির্দেশ দেন তিনি, কিন্তু সিদ্ধার্থের মন ভরল না। প্রথম দিন নগরী ঘুরতে গিয়ে একজন বৃদ্ধ ব্যক্তি, দ্বিতীয় দিন একজন অসুস্থ মানুষ, তৃতীয় দিন একজন মৃত ব্যক্তি এবং চতুর্থ দিন একজন সন্ন্যাসী দেখে তিনি সারথি ছন্দককে প্রশ্ন করে জানতে পারেন জগৎ দুঃখময়। তিনি বুঝতে পারেন সংসারের মায়া, রাজ্য, ধনসম্পদ কিছুই স্থায়ী নয়। তাই দুঃখের কারণ খুঁজতে গিয়ে ২৯ বছর বয়সে গৃহত্যাগ করেন। দীর্ঘ ছয় বছর কঠোর সাধনার পর তিনি বুদ্ধগয়া নামক স্থানে একটি বোধিবৃক্ষের নিচে বোধিজ্ঞান লাভ করেন। সবার আগে বুদ্ধ তার ধর্ম প্রচার করেন পঞ্চবর্গীয় শিষ্যের কাছে; তারা হলেন কৌন্ডিন্য, বপ্প, ভদ্দিয়, মহানাম ও অশ্বজিত। এরপর দীর্ঘ ৪৫ বছর বুদ্ধ ভারতের বিভিন্ন স্থানে তার বৌদ্ধ ধর্মের বাণী প্রচার করেন। এবং তার প্রচারিত বাণী ভারত ছাড়াও বিশ্বের অন্যান্য দেশে ও দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে। অবশেষে খ্রিস্টপূর্ব ৪৬৩ অব্দে তিনি কুশীনগর নামক স্থানে ৮০ বছর বয়সে মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন। গৌতম বুদ্ধের প্রচারিত বাণীর মূল অর্থ হলো অহিংসা।