দৃষ্টি নিউজ:
পবিত্র মাহে রমজানে সূর্যাস্তে আজানের ধ্বনি শুনে পান্তা দিয়ে ইফতার করেন তারা- আবার সেহরিতেও পান্তাভাত খেয়ে সারাদিন রোজা রাখেন। এভাবেই এবারের পুরো রমজান মাস কেটেছে দুই ছেলে সহ চার জনের প্রতিবন্ধী রকিবুল-লিলি পরিবারের। টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার সল্লা চরপাড়া গ্রামে তাদের নিবাস। আগামিকালের ঈদুল ফিতরে সরকারি-বেসরকারি অনুদানের উপরই ভরসা করতে হচ্ছে পরিবারটিকে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত পরিবারটির কথা জানতে পেরে অনেকেই অনুদান-সাহায্য নিয়ে এগিয়ে এসেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কালিহাতী উপজেলার সল্লা চরপাড়া গ্রামের রকিবুল দুই বছর বয়সে অসুস্থ হয়ে পা হারিয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেন। পরের বছর গলায় রাখা গামছায় আগুন লেগে পুড়ে যায় ঘাড় সহ গলার পুরো অংশ। দারিদ্রতার কারণে পর্যাপ্ত চিকিৎসা করতে না পারায় রকিবুল বড় হয়ে এভাবেই কাজ করে সংসার চালাতে থাকেন।
বসে থাকার কাজ ছাড়া অন্য কোনো কাজ করতে না পারায় সব শ্রমিকের দিনমজুরি ৫০০টাকা দেওয়া হলেও প্রতিবন্ধী রকিবুলকে দেওয়া হয় দৈনিক ২০০ টাকা। প্রতিবন্ধী হওয়ায় তাকে অনেকেই কাজে নিতেও চান না। জীবন-জীবিকার তাগিদে এজন্য চুক্তিতে কাজ নিয়ে স্ত্রী-ছেলেকে সাথে নিয়ে দৈনন্দিন কাজ করে থাকেন। দুই ছেলে থাকলেও তারা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হওয়ায় তাদেরকেও অনেকে কাজে নিতে চায়না। অভাবের তারণায় এক-দু’বেলা-আধপেটা খেয়ে অতিকষ্টে দিন কাটাচ্ছে পরিবারটি।
জানা যায়, সল্লা চরপাড়া গ্রামের মসজিদে সূর্যাস্তে আজানের ধ্বনি শুনে রকিবুল ও লিলি বেগম দম্পতি দুই ছেলে নিয়ে পান্তাভাতের সঙ্গে ডালের বড়া দিয়ে ইফতার করেন। সেহরিতেও একই খাবার খেয়ে সারাদিন সিয়াম পালন করেন। পরিবারের চার সদস্যের মধ্যে তিনজনই প্রতিবন্ধী হওয়ায় অভাব তাদের পিছু ছাড়ছেনা। গৃহবধূ লিলি বেগম প্রতিবেশিদের বাড়িতে ঝি-এর কাজ করেন। কখনও কখনও স্বামী রকিবুলের সঙ্গে কাজ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু চারজনের আহার জোটানো কোনোভাইে সম্ভব হয়না।
পঙ্গুত্ববরণকারী পরিবার প্রধান রকিবুল জানান, অসুস্থতার কারণে কাজ করতে না পারায় ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অর্থাভাবে সবার মতো তাদের জীবন-জীবিকা স্বাভাবিক নয়। প্রায় সারা বছর এটা-সেটার সঙ্গে পান্তাভাতই তাদের প্রধানতম খাবার। পুরো রমজান মাস জুরে পান্তাভাই ছিল তাদের সেহরি ও ইফতারির একমাত্র উপকরণ।
তিনি জানান, তাদের পরিবারের অভাবের খবর জানতে পেরে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে অনেকেই তাদের নগদ(অ্যাকাউণ্ট) ০১৯৯৩-৫৯৭৮১৭ নম্বরে অর্থিক সহায়তা করছেন। এছাড়া কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. খায়রুল ইসলাম সরকারের পক্ষ থেকে ৫০ কেজি চাল, চিনি, তেল, লবন, মুড়ি, পেঁয়াজ, রসুন, সেমাই, গুড়োদুধ, বিভিন্ন ধরনের মশলা এবং নগদ পাঁচ হাজার টাকা অনুদান দিয়েছেন। ফলে এবারের ঈদুল ফিতর তাদের ভালোভাবেই কাটবে বলে তিনি আশা করছেন।
রকিবুল জানান, ভিক্ষা নয় পরিশ্রম করে নিজের উপার্জনে জীবন চালাতে চান তিনি। বসে থাকার কাজ ছাড়া যেহেতু অন্য কোনো কাজ তিনি করতে পারেন না। তাই সরকার ও বিত্তবানদের কাছে পরিবারের জন্য একটি দোকান করে দেওয়ার আবেদন জানান তিনি।
কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. খায়রুল ইসলাম জানান, তিনি বিষয়টি জানতে পেরে সরেজমিনে উপস্থিত হয়ে পরিবারটিকে সরকারের পক্ষ থেকে ঈদ উপহার দিয়েছেন। পরে তাকে স্থায়ী কোন একটা কাজের ব্যবস্থা করে দেওয়ার পরিকল্পনা তার রয়েছে।