আজ- মঙ্গলবার | ১৪ জানুয়ারি, ২০২৫
৩০ পৌষ, ১৪৩১ | রাত ৩:২২
১৪ জানুয়ারি, ২০২৫
৩০ পৌষ, ১৪৩১
১৪ জানুয়ারি, ২০২৫, ৩০ পৌষ, ১৪৩১

ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস আজ

দৃষ্টি নিউজ:

bongobondhu-2015-06-07
আজ ঐতিহাসিক ৭ জুন, ছয় দফা দিবস। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালের এই দিনে বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফা ঘোষণা করেন। তৎকালীন পূর্ববাংলার জনগণ পাকিস্তানি শোষক গোষ্ঠীর শোষণ থেকে বাঙালির মুক্তির হাতিয়ার হিসেবে ছয় দফাকে গ্রহণ করেছিল।
স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ সৃষ্টিতে ছয় দফার ভূমিকা অপরিসীম। আইয়ুব খানের মার্শাল ল শাসন, ‘৬২-এর শিক্ষানীতিসহ সব অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এবং পূর্ববাংলার জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু এ ঘোষণা-পরবর্তী সময় বাংলার আনাচে-কানাচে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলার সর্বস্তরের জনগণ এ ছয় দফাকে বাঙালির মুক্তির সনদ হিসেবে বেছে নেয়। আইয়ুব খানের পতন, ১৯৬৯-এর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে বঙ্গবন্ধুসহ সব রাজবন্দির মুক্তি আন্দোলনের প্রধান প্রেরণা ছিল এ ছয় দফা।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৯৬৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানে কয়েকটি সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলের সমাবেশে আওয়ামী লীগের পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান প্রদেশের স্বায়ত্তশাসনের জন্য ছয় দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন। তখন তার বয়স মাত্র ৪৬ বছর। তার দলে সে সময়ে অনেক প্রবীণ নেতা ছিলেন। তাজউদ্দীন আহমদের মতো তার কাছাকাছি বয়সের তরুণ-যুবারাও ছিলেন। এ কর্মসূচি প্রদানের পর পাকিস্তানের মুসলিম লীগ ও জামায়াতে ইসলামীর মতো রাজনৈতিক দল এবং সেনাবাহিনী তেড়েফুড়ে আসে। তারা বলতে শুরু করে, এটা হচ্ছে পাকিস্তান ধ্বংসের ষড়যন্ত্র। পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন করার প্রথম ‘বড় পদক্ষেপ’। ভারতের হাত রয়েছে এ কর্মসূচির পেছনে সেটা বলা হতে থাকে আরও জোরেশোরে।
কর্মসূচি প্রদানের পরপরই শেখ মুজিবুর রহমান তরুণ সহকর্মীদের নিয়ে বের হয়ে পড়েন গণসংযোগে। তাদের দমাতে শুরু হয় ব্যাপক গ্রেপ্তার অভিযান। শেখ মুজিবুর রহমানসহ কেন্দ্র ও জেলা পর্যায়ের শত শত আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকে দেশরক্ষা আইনে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ন্যাপ ও কমিউনিস্ট পার্টির অনেক নেতাকেও আটক করা হয়। এর প্রতিবাদে ১৯৬৬ সালের ৭ জুন গোটা পূর্ব পাকিস্তানে হরতাল আহবান করে আওয়ামী লীগ।
ঢাকার তেজগাঁও এবং আশপাশের আদমজী, বাওয়ানি, টঙ্গী প্রভৃতি শ্রমিক এলাকায় হরতালের সমর্থনে দলে দলে শ্রমিকরা পথে নামে। বিভিন্ন স্থানে গুলি হয় এবং সরকারি হিসেবেই মৃতের সংখ্যা ছিল ১০ জন। এদের একজন তেজগাঁওয়ের শ্রমিক মনু মিয়া। সেখানে এখন তার নামে একটি স্কুল চালু রয়েছে। হরতাল পালন এবং হতাহতের খবর যাতে সংবাদপত্রে প্রকাশিত না হয় সেজন্য পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খান কঠোর নির্দেশ জারি করেন।
প্রতিবাদে পরদিন দৈনিক সংবাদ তাদের প্রকাশনাই বন্ধ রাখে। হরতালের আগে ও পরে সরকার দমননীতি বাড়িয়ে দেয়। সর্বত্র রাজনৈতিক এবং ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন নেতাকর্মীদের কারাগারে নিক্ষেপ করা হতে থাকে। প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান হয়তো ভেবেছিলেন সব শান্ত হয়ে গেছে। কিন্তু মাত্র আড়াই বছরের মধ্যেই ঊনসত্তরের জানুয়ারি মাসে দলে দলে মানুষ রাজপথে নেমে আসেন। মুক্ত শেখ মুজিবুর রহমান ‘বঙ্গবন্ধু’ হিসেবে অভিহিত হন। ছয় দফা পরিণত হয় জাতীয় দাবিতে। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু জনগণের কাছে ছয় দফার ভিত্তিতে ম্যান্ডেট লাভ করেন।
পাকিস্তানের শাসকরা তা মানতে অস্বীকার করলে বাঙালিরা স্বাধীনতার দাবি তোলে এবং এক সাগর রক্তের বিনিময়ে তা আদায় করে নেয়। ছয় দফা উত্থাপন ও আদায়ের ব্যাপ্তিকাল সংক্ষিপ্ত, কিন্তু ব্যাপকতায় অসীম।
দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন উপলক্ষে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বিভিন্ন সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

শেয়ার করুন স্যোশাল মিডিয়াতে

Facebook
Twitter
LinkedIn
X
Print
WhatsApp
Telegram
Skype

সর্বশেষ খবর

এই সম্পর্কিত আরও খবর পড়