দৃষ্টি নিউজ:
সকাল সাড়ে ১১টা। জ্বর, ঠান্ডা ও কাঁশি নিয়ে সেখানে সেবা নিতে আসেন ভাটচান্দা গ্রামের ষাটোর্ধ আফজাল হোসেন। কমিউনিটি ক্লিনিকের ফটকে তালা থাকায় সেবা না পেয়ে মন খারাপ করে চলে যান। টাঙ্গাইল সদর উপজেলার গালা ইউনিয়নের ভাটচান্দা মাগুরাটা কমিউনিটি ক্লিনিকের চিত্র এটি।
আফজাল হোসেন জানান, ভাটচান্দা মাগুরাটা কমিউনিটি ক্লিনিকের দায়িত্বপ্রাপ্ত হেলথ প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) মজিদা জাহান মিতু সপ্তাহে তিন দিনও অফিস করেন না। তাই সেবা না পেয়ে তাদের ফিরে যেতে হয়। সরকারের পক্ষ থেকে এখানে বিনামূল্যে সেবা ও ওষুধ দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। কিন্তু সেগুলোর ছিটেফোঁটাও তাদের ভাগ্যে জোটেনা। সময় ও অর্থ ব্যয় করে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল বা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা নিতে হয়।
এক বছরের শিশুর হাতে চুলকানির ওষুধের জন্য এসেছিলেন রাজিয়া বেগম নামে এক গৃহবধূ। তিনিও সেবা না পেয়ে ফিরে যান। তিনি অভিযোগ করেন, ইতোপূর্বে এখানে যতবার চিকিৎসার জন্য এসেছেন- ততবার ১৫ থেকে ২০ টাকা দিয়ে সরকারি ওষুধ নিতে হয়েছে। টাকা না দিলে এখানকার ‘মিতু আপা’ খুব দুর্ব্যবহার করেন। স্থানীয় কলেজ ছাত্র রুবেল মিয়া জানান, এই ক্লিনিক থেকে ২০ভাগ চিকিৎসা সেবা ও ওষুধ পায় না সাধারণ মানুষ।
শুধু আফজাল হোসেন বা রাজিয়া বেগম নয়, এই কমিউনিটি ক্লিনিকের হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার মজিদা জাহান মিতু অনিয়মিত অফিস করায় তিন ওয়ার্ডের ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে, সপ্তাহে শনি থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা হতে ৩টা পর্যন্ত নিয়মিত অফিস করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও সিএইচসিপি হিসেবে মজিদা জাহান মিতু সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিনের বেশি অফিস করেন না। ২০১৬ সালে ভাটচান্দা মাগুরাটা কমিউনিটি ক্লিনিকে তিনি যোগদানের পর থেকে এ অবস্থা চলছে।
এছাড়া যে ২-৩দিন ক্লিনিকে আসেন ১০টার পর অফিসে এসে ১২টার আগেই চলে যান। এতে স্থানীয় সাধারণ ও নি¤œ আয়ের মানুষ টাঙ্গাইল শহরে গিয়ে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হয়। টাকার বিনিময়ে সরকারি ওষুধ বিতরণ ও রোগী এবং রোগীর স্বজনদের সাথে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে মজিদা জাহান মিতুর বিরুদ্ধে।
ভাটচান্দা মাগুরাটা কমিউনিটি ক্লিনিকের হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার মজিদা জাহান মিতু মোবাইল ফোনে জানান, তার ল্যাপটপ নষ্ট হয়েছে। এছাড়া ঊর্ধ্বতন অফিসে মাসিক রিপোর্ট জমা দিতে হবে। তাই তিনি অফিসে আসবেন না। তবে ১৫ মিনিট পর ১২টার দিকে তিনি দ্রুত অফিসে আসেন।
তিনি জানান, প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ জন রোগী এ ক্লিনিকে সেবা নিতে আসেন। যখন ওষুধ বেশি থাকে তখন এ সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
ভাটচান্দা মাগুরাটা কমিউনিটি ক্লিনিক পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ও স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. শওকত হোসেন জানান, তাকে ক্লিনিকে না পেয়ে ফোন করলে তিনি প্রায়ই ফোন রিসিভ করেন না। এই ক্লিনিকের মাধ্যমে তার ইউনিয়নের ৩টি ওয়ার্ডের ২০ হাজারের অধিক মানুষ চিকিৎসা সেবা পাওয়ার কথা। কিন্তু অনেকেই সে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মুহাম্মদ শরিফুল ইসলাম জানান, ভাটচান্দা মাগুরাটা কমিউনিটি ক্লিনিকের হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার মজিদা জাহান মিতুর বিষয়টি তার জানা নেই। তবে খোঁজ নিয়ে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থ গ্রহণ করবেন।