দৃষ্টি নিউজ:

একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় কিশোরগঞ্জের সৈয়দ মো. হুসাইন ও মোহাম্মদ মোসলেম প্রধানের বিরুদ্ধে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। রাষ্ট্র ও আসামি উভয়পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে বুধবার(১৯ এপ্রিল) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এই রায় ঘোষণা করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার বাহিনীর সদস্য হিসেবে হত্যা, গণহত্যা, লুণ্ঠন, অপহরণ ও নির্যাতনের ছয় অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে এ আদেশ দেয়া হয়।
বুধবার বেলা সাড়ে ১০টার দিকে আদালত বসার পর ১১টার কিছুক্ষণ আগে কিশোরগঞ্জের দুই আসামির রায়ের কার্যক্রম শুরু হয়। তিন সদস্যের এ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হক প্রারম্ভিক বক্তব্যে জানান, তারা যে রায় দিতে যাচ্ছেন, তা এসেছে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে। পরে বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম রায়ের সার সংক্ষেপ পড়া শুরু করেন। অপর বিচারপতি মো. সোহরাওয়ারদীও রায়ের দ্বিতীয় অংশ পড়েন। সবশেষে বিচারপতি আনোয়ারুল হক সাজা ঘোষণা করেন।
দুই আসামির মধ্যে মোসলেম প্রধানকে সকালে রায়ের জন্য কারাগার থেকে আদালতে নিয়ে আসা হয়। অপর আসামি হুসাইন পলাতক; তিনি মালয়েশিয়ায় রয়েছেন বলে প্রসিকিউশনের তথ্য। ২০১০ সালের ২৫ মার্চ ট্রাইব্যুনাল গঠনের মধ্য দিয়ে যুদ্ধাপরাধের বহু প্রতীক্ষিত বিচার শুরুর পর এটি ২৮তম রায়।
যুদ্ধাপরাধের ছয় ঘটনায় অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে গত বছরের ৯ মে মোসলেম ও হুসাইনের বিচার শুরু করে ট্রাইব্যুনাল। প্রসিকিউশন ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে গত ৭ মার্চ ট্রাইব্যুনাল মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, আসামি মো. হুসাইন মুক্তিযুদ্ধের আগে ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও যুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টির মতাদর্শ গ্রহণ করেন। ওই সময় নিকলি থানা এলাকায় ‘রাজাকার দারোগা’ হিসেবে পরিচিত হুসাইন কিশোরগঞ্জ মহকুমার বিভিন্ন জায়গায় ব্যক্তিগত ও যৌথভাবে গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেন। তিনি ট্রাইব্যুনালের রায়ে মৃতুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক সৈয়দ মো. হাসান ওরফে হাছেন আলীর ছোটভাই। অপর আসামি মোসলেম প্রধান মুক্তিযুদ্ধের সময় নিকলি ইউনিয়নে রাজাকার কমান্ডার হিসেবে পরিচিত ছিলেন। কিশোরগঞ্জ মহকুমার বিভিন্ন জায়গায় তিনি ব্যক্তিগত ও যৌথভাবে গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেন বলে প্রসিকিউশনের অভিযোগ। মোসলেম পরে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন।
ছয় অভিযোগ:
১. নিকলীর দামপাড়া গ্রাম ও নিকলী থানা ভবন, সদরের মহাশশ্মান এলাকায় একাত্তর সালের অগাস্ট মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হোসাইনের বিরুদ্ধে ছয় নারীকে ধর্ষণ, সুধীর সুত্রধরসহ ৩৫ জনকে হত্যা ও বাদল বর্মনসহ চারজনকে নির্যাতন।
২. নিকলী বাজার ও থানা কম্পাউন্ড এলকায় হোসাইন ও মোসলেমের নেতৃত্বে একাত্তরের ২ সেপ্টম্বর থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত কাশেম আলীসহ চারজনকে আটক ও নির্যাতন।
৩. নিকলীর গুরুই গ্রামের পূর্বপাড়ায় ১৯৭১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৭টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ফুল মিয়াসহ ২৬ জনকে হত্যা এবং ২৫০টি বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ।
৪. নিকলীর নানশ্রী গ্রামে একাত্তর সালের ২১ থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তোফাজ্জল খান জিতুসহ সাতজনকে অপহরণ ও নির্যাতনের অভিযোগ হোসাইনের বিরুদ্ধে।
৫. একাত্তর সালের ১০ অক্টোবর নিকলী সদরের পূর্বগ্রামে মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আব্দুল মালেককে তার নিজ বাড়ি থেকে অপহরণ করে হত্যার অভিযোগ হোসাইন ও মোসলেম প্রধানের বিরুদ্ধে।
৬. ১৯৭১ সালের ২৬ নভেম্বর সন্ধ্যা সাতটা থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা খায়রুল জাহান ও মো. সেলিমকে হত্যা করে তাদের মৃতদেহ রাজাকার হোসাইন কিশোরগঞ্জ পৌরসদর, প্যারাভাঙা ও শোলাকিয়ায় রিকশা দিয়ে ঘুরিয়েছিলেন এবং মুক্তিযোদ্ধা খায়রুল জাহানের মাকে তার ছেলের রক্ত দেখিয়ে বিভৎসতা প্রর্দশন করেছিলেন।
