আজ- রবিবার | ৯ নভেম্বর, ২০২৫
২৪ কার্তিক, ১৪৩২ | দুপুর ১২:৪৩
৯ নভেম্বর, ২০২৫
২৪ কার্তিক, ১৪৩২
৯ নভেম্বর, ২০২৫, ২৪ কার্তিক, ১৪৩২

খুশির ঈদ এলো দুঃসময়ে

দৃষ্টি নিউজ:

পশ্চিমাকাশে সূর্য ডুবে গেছে। হিসেবে এখন চাঁদরাত। উচ্চারণের ভিন্নতায় যা এখন চাঁনরাত নামেই পরিচিত। অন্য সময় এখন বিপণীবিতানগুলোতে থাকে উপচে পড়া ভিড়। নাড়ির টানে ঘরে ফেরা মানুষগুলো প্রিয়জনের পাশে বসে পবিত্র রমজান মাসের শেষ ইফতার করছেন। আরও অনেকে পথে বসে প্রতীক্ষা করছেন কতক্ষণে মায়ের পা ছুঁয়ে দোয়া নেবেন তার।

রোববার (২৪ মে) এসবের কিছুই হচ্ছে না। সীমিত পরিসরে কিছু বিপণীবিতান খোলা, সেখানে নেই উল্লেখযোগ্য মানুষ। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেকেই বাড়ি ফিরছেন, কিন্তু মনে নেই আনন্দ।

এসবের জন্য দায়ী এক অদৃশ্য শত্রু। করোনা ভাইরাস। কোভিড ১৯। সংক্রামক এই ভাইরাসের জন্য আজ মানুষের ঘরে নেই ঈদের আনন্দ। স্বাধীনতা নেই প্রিয়জনকে ছুঁয়ে দেখার। কর্মহীন কোটি মানুষ। অন্নের সন্ধানে ঘুরছেন আরও কত লাখ মানুষ।

এতসব বেদনার মধ্যে মানবজাতির স্মরণকালের সবচেয়ে বড় বিপর্যয়ের মধ্যে সোমবার (২৫ মে) বাংলাদেশে পালিত হবে পবিত্র ঈদুল ফিতর।

ঈদুল ফিতরের ঠিক আগের দিন রোববার দুপুরে সরকারি বার্তা থেকে খবর এলো, গত ২৪ ঘন্টায় করোনায় আক্রান্ত সর্বোচ্চ ২৮ জনের মৃত্যুর খবর। সুস্থ হওয়ার সংখ্যাও বাড়ছে। কিন্তু নতুন করে শনাক্তের যে খবর আসছে তাতে সুস্থ হওয়ার সংখ্যাটি ‘শঙ্কা’ হয়েই দেখা দিচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, মার্চ থেকে সবকিছু বন্ধ। যেহেতু মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না, সেহেতু দেশ থেকে বের হওয়ার তো প্রশ্নই উঠে না। গেল মাসেই চাকরি থেকে আমাদের সবাইকে বাদ দিয়ে দিছে। এখন মোটর সাইকেল চালায়া ইনকাম করি। কালকে ঈদ। মেয়েটার জন্য একটি জামা কিনবো আজকে। জানি না সে টাকাও হবে কিনা।

শেষ কথাগুলো যখন বলছিলেন তখন গলা তার ভারী। হেলমেটের ফাঁক গলে চোখ মুছে পরবর্তী যাত্রীর অপেক্ষা শুরু করলেন।

পরিচিত এক মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হলো। বললেন, মার্চের ১০ তারিখের পর থেকে আজ মে মাসের ২৪ তারিখ- একটা টাকা আয় নেই। বাসাভাড়াটাও দিতে পারিনি। জানি না সামনের মাসে কি হবে? বউ-পোলাপান নিয়ে ভাত জুটবে কিনা- তারও উত্তর নেই।

বেদনার এমন কত শত গল্প এই নগরজুড়ে। যে নগরে ঈদের আগের দিনে আনন্দের ফল্লুধারা বয়ে যায়, সেখানে সর্বত্র এখন চাপা দীর্ঘশ্বাস।

এসবের মধ্যে জীবনের নিয়মে সোমবার ঈদের অনেক অনুষঙ্গ পালিত হবে। মানুষ একে অপরকে শুভেচ্ছা জানাবেন। ইতিমধ্যেই বাণী এসে যাবে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে।

রোববার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে দেশবাসী ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবারের ঈদের শুরুটাও হবে ভিন্নভাবে। দেশের কোন ঈদগাহে এবার ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। মসজিদে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে ঈদের জামাত করার পরামর্শ দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন ইতোমধ্যেই জানিয়েছে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ঈদের প্রধান জামাত হবে। প্রথম জামাত হবে সকাল সাতটায়। পরের জামাতগুলো হবে সকাল আটটা, নয়টা, দশটা এবং পৌনে ১১টায়। তবে ঈদ জামাতের পর কোলাকুলি করা যাবে না, হাত মেলানো যাবে না।

ঈদে শহরে থেকে যাওয়া মানুষদের আনন্দের জন্য প্রতি বছরই নতুন করে সাজে চিড়িয়াখানা, শিশুপার্কের মতো বিনোদন কেন্দ্রগুলো। যাতে ঈদের দিন থেকে টানা এক সপ্তাহ ভিড় জমান লাখো মানুষ। তবে করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে এবার সব বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ রাখা হয়েছে।

চলে যাক করোনার দিনগুলো- ঈদের দিন এ প্রার্থনাই করবে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। সুস্থ থাকলে, বেঁচে থাকলে সামনের ঈদে ‘বাকির খাতায়’ থাকা আনন্দগুলো আদায় করবেন, সে আশাবাদও থাকবে। তাদের সঙ্গে আমাদেরও সেই প্রত্যাশা।

শেয়ার করুন স্যোশাল মিডিয়াতে

Facebook
Twitter
LinkedIn
X
Print
WhatsApp
Telegram
Skype

সর্বশেষ খবর

এই সম্পর্কিত আরও খবর পড়