আজ- শুক্রবার | ১৪ নভেম্বর, ২০২৫
২৯ কার্তিক, ১৪৩২ | রাত ১১:৩৩
১৪ নভেম্বর, ২০২৫
২৯ কার্তিক, ১৪৩২
১৪ নভেম্বর, ২০২৫, ২৯ কার্তিক, ১৪৩২

গণপিটুনিতে নিহত মিনু মিয়া টাকার অভাবে উন্নত চিকিৎসা পায়নি

দৃষ্টি নিউজ:

গণপিটুনিতে নিহত মিনু মিয়া

টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত মিনু মিয়া টাকার অভাবে উন্নত চিকিৎসা পায়নি বলে দাবি করেছেন তার স্ত্রী রিনা বেগম। তিনি বলেন, যারা টাকা দিতে চেয়েছিল পরে তারা এগিয়ে আসেনি।

মিনুর স্ত্রী ৬ মাসের গর্ভবতী রিনা বেগম বলেন, গুরুতর অসুস্থ স্বামীকে ঢাকা মেডিকেলে নেয়ার পর আমাদের কোন সিট দেয়া হয়নি। প্রথম তিনদিন তাকে (মিনুকে) নিয়ে সিঁড়িতে থাকতে হয়েছে। আর এই তিনদিনে তার অবস্থা আরো আশঙ্কাজনক হয়ে ওঠে। চিকিৎসকরা ঠিকমত খোঁজ নেয়নি, নার্সরাও সঠিক দেখাশোনা করেনি। মূলত টাকার অভাবেই তার(মিনুর) উন্নত চিকিৎসা করা সম্ভব হয়নি। অনেকেই পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছিল কিন্তু বিপদের মুহূর্তে তারা কেউ এগিয়ে আসেনি।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, সংসারে উপার্জনের একমাত্র ব্যক্তি ছিল আমার স্বামী(মিনু মিয়া)। তার মৃত্যু আমাদেরকে পথে বসিয়েছে। কেউ যদি সহযোগিতা না করে তাহলে সন্তান নিয়ে না খেয়ে থাকা ছাড়া কোন উপায়ও থাকবেনা। তার(মিনুর) হত্যাকারীদের আমি ফাঁসি চাই।

নিহত মিনু মিয়ার বৃদ্ধ বাবা কোরবান আলী জানান, তার চার ছেলে তিন মেয়ে। ছেলে-মেয়েরা সবাই বিয়ে করেছে। মেয়েরা তাদের শশুর বাড়িতে থাকে। তাকে নিয়ে মিনুর চার জনের সংসার। মিনুর ছেলে রাহাত (৭) টেপিবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে পড়ালেখা করে। তার স্ত্রী রিনা বেগম ৬মাসের গর্ভবতী। তার ৩শতাংশ ভিটির উপর চার ভাই গাদাগাদি করে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করে।

এদিকে, মঙ্গলবার(৩০ জুলাই) সকাল ৯টার দিকে ভূঞাপুর উপজেলার টেপিবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে মিনু মিয়ার নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। জানাযা নামাজে ভূঞাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আব্দুল হালিম, পৌর মেয়র মাসুদুল হক মাসুদ, উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম বাবু, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান সাহিনুল ইসলাম তরফদার বাদল, পৌর বিএনপির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম, পৌর কাউন্সিলর খন্দকার জাহিদ হাসান, মো. সোহেল, মো. আনোয়ার হোসেন সহ টেপিবাড়ি ও আশপাশের গ্রামের হাজারো মানুষ অংশ গ্রহণ করে। জানাযা শেষে স্থানীয় সামাজিক গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

এরআগে ময়নাতদন্ত শেষে ঢাকা থেকে সোমবার(২৯ জুলাই) মধ্যরাতে মিনুর মরদেহ গ্রামের বাড়ি ভূঞাপুর উপজেলার টেপিবাড়িতে নিয়ে আসা হয়। মরদেহ আসার খবর পেয়ে মঙ্গলবার ভোর থেকে মিনুর মরদেহ এক নজর দেখতে শ’ শ’ মানুষের ঢল নামে। এ সময় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।
অপরদিকে, ভ্যানচালক মিনু মিয়া(৩০) মৃত্যুর ঘটনায় মঙ্গলবার(৩০ জুলাই) ভোরে উপজেলার সিংগুরিয়া গ্রাম থেকে ওই গ্রামের হানু মন্ডলের ছেলে রুবেল মিয়া ও একই গ্রামের বাদশা মন্ডলের ছেলে শামিম মন্ডলকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তারা সর্ম্পকে চাচাত ভাই।

কালিহাতী থানার এসআই ও মামলার আইও ফারুকুল ইসলাম বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ওই দু’জকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা ঘটনার সাথে জড়িত রয়েছে। এর আগে ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গণপিটুনির ঘটনায় এ নিয়ে মোট ৮জনকে গ্রেপ্তার করা হল।

উল্লেখ্য, গত ২১ জুলাই ভূঞাপুর উপজেলার টেপিবাড়ি গ্রামের কোরবান আলীর ছেলে মিনু মিয়া কালিহাতীর সয়া হাটে মাছ ধরার জাল কিনতে যান। হঠাৎ ‘এক ছেলেকে সিএনজি চালিত অটোরিকশায় তুলে নিয়ে যাচ্ছে’ এমন গুজবে মিনু মিয়াকে এলাকাবাসী গণপিটুনি দেয়। পরে পুলিশ এসে মিনু মিয়াকে উদ্ধার করে প্রথমে কালিহাতী উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। সেখানে মিনুর অবস্থা অবনতি হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। মাথার আঘাত গুরুতর হওয়ায় ওইরাতেই টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ(ঢামেক) হাসপাতালে স্থানান্তর (রেফার্ড) করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৮দিন পর সোমবার(২৯ জুলাই) মিনু মিয়ার মৃত্যু হয়।

শেয়ার করুন স্যোশাল মিডিয়াতে

Facebook
Twitter
LinkedIn
X
Print
WhatsApp
Telegram
Skype

সর্বশেষ খবর

এই সম্পর্কিত আরও খবর পড়