আজ- মঙ্গলবার | ১৮ মার্চ, ২০২৫
৪ চৈত্র, ১৪৩১ | রাত ১২:১৮
১৮ মার্চ, ২০২৫
৪ চৈত্র, ১৪৩১
১৮ মার্চ, ২০২৫, ৪ চৈত্র, ১৪৩১

গণমানুষের নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত হোক

সম্প্রতি সংবাদপত্রের খবরে প্রকাশ, বিশ্বে প্রতি বছর অনিরাপদ ও ভেজাল খাদ্য খেয়ে ৬০ কোটি লোক অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাদের মধ্যে ৪ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ) আয়োজিত গবেষণার প্রাক-অবহিতকরণ সেমিনারে এসব তথ্য উঠে আসে।

খাদ্যে ভেজাল, খাদ্যে বিষক্রিয়ার বিষয়টি নতুন কিছু নয়। সম্প্রতি এর ব্যাপ্তি যে হারে বাড়ছে- তাতে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষ। দেশি-আন্তর্জাতিক সব গবেষণায় দেশে খাবারের বিষক্রিয়ার বিষয়টি বারবার উঠে আসছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে অভিজাত হোটেল, রেস্টুরেন্ট বা নামিদামি ব্র্যান্ডের পণ্যও এখন নিরাপদ নয়।


জনসচেতনতা ও প্রশাসনিকভাবে সক্রিয় ভূমিকা পালন ব্যতীত ভেজালের দৌরাত্ম্য বন্ধ করা অসম্ভব। বিএফএসএ তথ্য বলছে, দেশে ৭০ ভাগ মৃত্যু হয় অসংক্রামক রোগে। তার মধ্যে ডায়রিয়ার কারণে মৃত্যু রয়েছে ৪ নম্বরে। মাইক্রো ও ন্যানো প্লাস্টিকের ব্যবহারের মাত্রা এমন পর্যায়ে গেছে, তা নদী ও সাগরে ছড়িয়ে পড়ছে। মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

আমাদের গণমানুষের তথা নিম্ন আয়ের মানুষের অন্যতম পছন্দের খাবার পাঙ্গাশ ও তেলাপিয়া মাছে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হচ্ছে। এর মাত্রা এত বেশি যে, শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। খাদ্যে ভেজাল দেয়া কিছু মানুষের চরিত্রগত বদঅভ্যাস। এটা বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি খাদ্যে ভেজালের বিষয়ে মানুষকে সচেতন করা দরকার।


বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁয় ভেজাল বা বাসি খাবার বা পচা খাবার সরবরাহের অভিযোগ অহরহ আমরা শুনে আসছি। এ ব্যাপারে নাগরিকদের সচেতন হতে হবে। ভেজালবিরোধী অভিযান আমরা প্রায় দেখি। কোনোভাবেই যেন এই চক্রকে দমন করা যাচ্ছে না। খাদ্যপণ্যে নকল ও ভেজাল আমাদের দেশের খাদ্য ব্যবসায়ীদের প্রবণতায় পরিণত হয়েছে।

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে ক্ষতিকর রং এবং অস্বাস্থ্যকর উপকরণের ব্যবহার অহরহ ঘটে। এসব খাবার খেয়ে সাধারণ মানুষ নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন এক গবেষণায় বলছে, শুধু ভেজাল খাদ্য গ্রহণের ফলে দেশে প্রতি বছর প্রায় ৩ লাখ লোক ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে।


ডায়াবেটিস আক্রান্তের সংখ্যা দেড় লাখ, কিডনি রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ। এছাড়া গর্ভবতী মায়ের শারীরিক জটিলতাসহ গর্ভজাত বিকলাঙ্গ শিশুর সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ। এই পরিসংখ্যানটি আমাদের ভাবিয়ে না তুলে পারে না। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য মানুষের মৌলিক চাহিদা। এর মধ্যে খাদ্য একটি প্রধান ও অন্যতম মৌলিক চাহিদা।

জীবনধারণের জন্য খাদ্যের কোনো বিকল্প নেই। সুস্বাস্থ্যের জন্য গণমানুষের প্রয়োজন বিশুদ্ধ ও পুষ্টিকর খাদ্য। আর এ বিশুদ্ধ খাদ্যই যদি অখাদ্যে রূপান্তরিত হয়, তা গ্রহণের পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ। ২০১৫ সালে গঠন করা হয়েছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। ভেজালবিরোধী সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি তারা কাজ করছে নিরাপদ খাদ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে।


১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে খাদ্যে ভেজাল দেয়া এবং ভেজাল খাদ্য বিক্রির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়া ১৪ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত তা প্রয়োগ করার কোনো নজির নেই।

আমরা আশা করব- আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। ভেজাল পণ্য ও অসাধু ব্যবসায়ীদের ঠেকাতে অভিযান নিয়মিত থাকলে ভেজালকারীদের দৌরাত্ম্য অনেকাংশে কমে আসবে বলে আশা করা যায়। পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

শেয়ার করুন স্যোশাল মিডিয়াতে

Facebook
Twitter
LinkedIn
X
Print
WhatsApp
Telegram
Skype

সর্বশেষ খবর

এই সম্পর্কিত আরও খবর পড়