আজ- সোমবার | ১৭ মার্চ, ২০২৫
৩ চৈত্র, ১৪৩১ | সন্ধ্যা ৬:১৫
১৭ মার্চ, ২০২৫
৩ চৈত্র, ১৪৩১
১৭ মার্চ, ২০২৫, ৩ চৈত্র, ১৪৩১

গৌরবময় বিজয়ের মাস শুরু

দৃষ্টি নিউজ:

হাজার বছরের ইতিহাস পেছনে ফেলে তিলে তিলে বেড়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চেয়েছে বাঙালি জাতি। অথচ কখনো ডাচ্‌-পর্তুগিজ, কখনো তুর্কি কিংবা মোঘল সাম্রাজ্যবাদী শাসকরা নানা নির্যাতন-নিপীড়নে দমিয়ে রাখতে চেয়েছে তাদের। শোষণের দাবানলে যথেষ্ট পুড়িয়েছে ব্রিটিশরাও। তবে বাংলার ইতিহাসে শোষণ-নির্যাতন ও বৈষম্যের শীর্ষ অধ্যায় রচিত হয়েছে পাকিস্তানিদের হাতে। তারা শুধু বাঙালিদের অধিকার থেকেই বঞ্চিত করেনি, ভাষা-সংস্কৃতি, ঐতিহ্য- এমনকি স্বকীয়তাও বদলে দিতে চেয়েছে।
তবে শৌর্য বীর্যে বলীয়ান এই জাতি সেটা মেনে নিতে পারেনি। অধিকার আদায় ও হাজার বছরের দাসত্ব থেকে মুক্তি পেতে স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন নিয়ে গড়ে তুলেছে অপ্রতিরোধ্য আন্দোলন। যার চূড়ান্ত পরিণতি ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর।
আজ সেই গৌরবময় বিজয়ের মাস শুরু। ১৯৭১ সালের এই মাসে এসে বাংলার মুক্তিকামী সৈনিকরা অনুধাবন করতে পারে, আট মাস আগে শুরু হয়ে চলমান যুদ্ধে জয় তাদের সুনিশ্চিত। তাই আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে সর্বাত্মক ছড়িয়ে পড়ে। বেড়ে যায় গেরিলা হামলা। অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধারা একের পর এক পাকিস্তানি দুর্গ ধ্বংস করে দিতে থাকে। অবশেষে রক্তনদী পেরিয়ে ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ ও দুই লাখ নারীর সম্ভ্রমের বিনিময় অর্জিত হয় মহান স্বাধীনতা। ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করে পালিয়ে যায়। সবুজ জমিনে লাল সূর্যের প্রিয় পতাকা বিজয় ও মুক্তির আনন্দে দেদীপ্যমান হয়ে ওঠে জাতি।
ইতোমধ্যে স্বাধীনতার ৪৬ বছর পার হয়েছে। বছর ঘুরে আবারও এসেছে বিজয়ের মাস। আজ পহেলা ডিসেম্বর। প্রভাতের প্রচ্ছন্ন আভায় ছড়িয়ে পড়বে মুক্তিযুদ্ধ ও বাঙালির বীরত্বগাঁথা আর বিষাদ-বেদনার মহাকাব্য। শোনা যাবে স্বজনহারা বাঙালির আকুল আহ্বান -‘সব ক’টা জানালা খুলে দাও না …ওরা আসবে চুপি চুপি…।
বিজয়ের এই চার দশকের বেশি সময় অনেক কিছুই বদলে গেছে, যোগ হয়েছে অনেক অর্জন। দেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে জেগে উঠেছে দেশপ্রেম, গণতান্ত্রিক চেতনা। যুদ্ধাপরাধীদের গলায় অপকর্মের সর্ব্বোচ্চ ফল ফাঁসির দড়ি ঝুলিয় কলঙ্কমুক্ত হয়েছে জাতি। সেই সঙ্গে এবার স্বাধীনতার তীব্র অনুপ্রেরণা বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের অগ্নিঝরা মুক্তি সংগ্রামের ভাষণ পেয়েছে বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি। তাই এবারের বিজয় উৎসবে থাকবে দ্বিগুন উৎফুল্লতা।
বিশ্ব ঐতিহ্যের দলিল হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানের (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জনসভায় বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ সমগ্র জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার ওই সময়কার অবস্থান ও করণীয় বলে দিয়েছেন, যার পথ ধরে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম। এখন আর এই ভাষণ শুধু বাঙালি জাতির নয়, ‘মেমরি অব দ্য ওয়াল্ড’ স্বীকৃতিতে সারা বিশ্বের স্মৃতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। তাই এবার স্মতি রোমন্থন ও স্মরণ-আলোচনায় বাংলাদেশের বিজয়-উৎসব ছড়িয়ে পড়বে বিশ্বব্যাপী।
ডিসেম্বর আসলেই আমরা আবেগআপ্লুত হয়ে পড়ি। ডিসেম্বর আমাদের বিজয়ের মাস। গর্বের মাস। অহঙ্কারের মাস। ১৯৭১ সালের ১ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী সিলেটের শমসের নগরে আক্রমণ চালিয়ে টেংরাটিলা ও দোয়ারাবাজার শত্রুমুক্ত করে। মুক্তিবাহিনীর অপারেশনের মুখে পাকিস্তানিরা সিলেটের গ্যারা, আলীরগাঁও থেকে ব্যারাক গুটিয়ে নেয়। নিজেদের পরাজয় মেনে নিতে না পেরে ক্ষুব্ধ হয়ে এ সময় রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানের এক মুখপাত্র শেখ মুজিবুর রহমানের চলমান বিচার শেষ হয়নি বলে বিবৃতি দেন। একই দিন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্ধিরা গান্ধী তার পার্লামেন্ট বক্তৃতায় উপমহাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার স্বার্থে বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানি সৈন্য সরানোর জন্য ইয়াহিয়া খানের প্রতি আহ্বান জানান। অন্যদিকে, বাংলাদেশে থেকে জামায়াতে ইসলামের শীর্ষ নেতা গোলাম আযম ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে বৈঠক করে পূর্ব পাকিস্তান থেকে প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়োগের দাবি তোলেন। স্বাধীন বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে দন্ডিত এই নেতা তখন মুক্তিযুদ্ধকে ‘কমিউনিস্টদের অপতৎপরতা’ হিসেবে অভিহিত করে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলেন। বিভিন্ন পক্ষ থেকে এমন রাজনৈতিক সক্রিয়তা ও কূটনৈতিক হিসাব-নিকাশ খাতায় বন্দি রেখেই পাকিস্তান বাংলাদেশের ওপর নিমর্ম হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যেতে চেয়েছে। কিন্তু মুক্তিকামী বাঙালির বীরত্বে বিশ্ব মানচিত্র ফেড়ে জেগে উঠেছে এক অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশ। গেয়ে উঠেছে জয় বাংলা।

শেয়ার করুন স্যোশাল মিডিয়াতে

Facebook
Twitter
LinkedIn
X
Print
WhatsApp
Telegram
Skype

সর্বশেষ খবর

এই সম্পর্কিত আরও খবর পড়