দৃষ্টি নিউজ:
বাড়ির উঠানে চারটি খাটিয়া সাজিয়ে রাখা হয়েছে। স্বজনরা অপেক্ষায় আছেন লাশ কখন আসবে। একই পরিবারের চারজনকে হারিয়ে নিহতের স্বজনরা হতবাক। এদিকে বাড়ির ছোট ছেলে ফাহিম সিদ্দিকী(১১) এখনও জানে না তার বাবা, মা, বড় ভাই এবং খালা আর বেঁচে নেই। বুধবার(৮ জানুয়ারি) দিনগত রাত ৩টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভারের ফুলবাড়িয়া পুলিশ টাউনের সামনে চলন্ত অ্যাম্বুলেন্সে পেছন থেকে যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কা দিলে সেটিতে আগুন ধরে যায়। একই সময় পেছন থেকে অপর একটি যাত্রীবাহী বাস সামনের যাত্রীবাহী বাসে ধাক্কা দিলে তিনটি যানবাহনে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় একই পরিবারের চার জন নিহত হয়েছেন। তাদের বাড়ি টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার ভবনদত্ত গ্রামে।
নিহতরা হচ্ছেন- ভবন দত্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এএইচ ফারুক সিদ্দকী, তার স্ত্রী মহসিনা খন্দকার, ছেলে মোহাইমিন সিদ্দিকী ফুয়াদ ও স্ত্রীর বড় বোন সীমা খন্দকার।
সরেজমিনে দেখা যায়, ভবনদত্ত গ্রামের বাড়ির উঠানে চারটি খাটিয়া সাজিয়ে রাখা হয়েছে। নিহতদের লাখ এখনও বাড়িতে এসে পৌঁছেনি। বাড়ির ছোট ছেলে ফাহিম সিদ্দিকী এখনও জানেনা তার স্বজনরা মারা গেছেন। ফুয়াদ ঊঠানে খেলছে আর আনমনে খাটিয়ার দিকে তাকাচ্ছে।
পরিবারের সদস্যরা জানান, বাড়ির বড় ছেলে ফুয়াদ সিদ্দিকী কিছুদিন থেকে অসুস্থ। শরীরে রক্ত কমে গেছে। চিকিৎসার জন্য গত রাতে ছেলে ফুয়াদ সিদ্দিকীসহ পরিবারের চার সদস্য অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। গত রাত ৩টার দিকে সাভারে বাসের সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সের সংঘর্ষ হয়। এতে অ্যাম্বুলেন্সে থাকা একই পরিবারের চারজন নিহত হন।
ঘাটাইল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি আব্দুর রহমান তালুকদার জানান, লাশগুলো এখনও ঢাকায় রয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে বাড়িতে আনার পরে স্থানীয় সামাজিক গোরস্থানে দাফন করা হবে।
নিহত ফারুখ হোসেন সিদ্দিকীর ছোট ভাই মামুন সিদ্দিকী জানান, তারা তিন ভাই এক বোন। বোন সবার বড়। তিনি ইতালি প্রবাসী। বড় ভাই ফারুখ সিদ্দিকী ভবনদত্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তার বড় ছেলে ফুয়াদ সিদ্দিকী স্থানীয় ভবনদত্ত গণ উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
হঠাৎ করেই কিছুদিন থেকে সে অসুস্থ। শরীরে রক্ত কমে যায়। তবে থ্যালাসেমিয়া নয়। ঢাকায় ডাক্তার দেখানোর জন্য গত রাত ১১টার দিকে টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলা থেকে ছেলে ফুয়াদ সিদ্দিকী ও তার বোনকে নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে করে রওনা দেন ঢাকার উদ্দেশে। ঘাটাইল উপজেলার হামিদপুর থেকে অ্যাম্বুলেন্সে ওঠেন ফারুখ সিদ্দিকী।
মামুন সিদ্দিকী জানান, রাতে তার কাছে ফোন করে সবাইকে দোয়া করতে বলেন। এরপর আর কথা হয়নি।
ফারুখ সিদ্দিকীর সহকর্মী মো. রুবেল মিঞা জানান, প্রধান শিক্ষক খুব নীতিবান মানুষ ছিলেন। এমন একজন মানুষের মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। খবর পেয়ে তারা সবাই ওই বাড়িতে এসেছেন। এমন শিক্ষক আর হবে না। তাদের সবসময় আগলে রাখতেন ফারুখ।
নিহত ফারুখ সিদ্দিকীর অপর সহকর্মী তার চাচাতো বোন সোমা সিদ্দিকী জানান, প্রধান শিক্ষক ফারুখ সিদ্দিকীর ছোট ছেলে ফাহিম সিদ্দিকী হোস্টেলে থেকে মাদরাসায় পড়ালেখা করে। সে এখনও জানে না তার বাবা-মা আর ভাই পৃথিবীতে নেই।
দেওপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হেপলু জানান, গত রাতে তিনি ফারুখ সিদ্দিকীকে অ্যাম্বুলেন্সে তুলে দিয়ে বাড়ি ফেরেন। তারা একসঙ্গে চা পান করেছেন। তার ভাষ্য, এলাকায় ফারুখ সিদ্দিকীর মতো ভালো মানুষ আর হবে না। তার মৃত্যুতে কাঁদছে পুরো গ্রামের মানুষ।