দৃষ্টি নিউজ:
টাঙ্গাইলের ঝিনাই নদীর তীর ভেঙে চলাচলের সড়ক বন্ধ হয়ে গেছে। ভেতরে ফাঁপা সাদা অসাধারণ সুস্বাদু রসগোল্লার জন্য বিলপাড়া বাজারটি জেলার মানুষের কাছে সুপরিচিত। বাজারে বিভিন্ন এলাকার মানুষের যাতায়াতও আশাতীত। নদীতীর ভেঙে যাওয়ার ফলে বাসাইল উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের সবচেয়ে বড় বাজার বিলপাড়ায় যাতায়াতে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে তিন উপজেলার মানুষ।
সরেজমিনে জানা যায়, টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নে ‘বিলপাড়ার মিষ্টি’ খ্যাত বিলপাড়া বাজার। গেল বর্ষায় ঝিনাই নদীর তীর ভেঙে বাজারে যান চলাচলের সড়কের আধা কিলোমিটার এলাকা বন্ধ। নদীতট থেকে ভাঙা সরু সড়কের উচ্চতা প্রায় ৩০ মিটার। দিনের আলোয় পথচারীরা অতি সতর্ক হয়ে হেঁটে চলাচল করতে পারে। সন্ধ্যা নামলেই সড়ক দিয়ে যাতায়াত প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। চলাচল করতে গিয়ে প্রায় প্রতিদিনই পথচারীরা হোঁচট খেয়ে ঝিনাই নদীর গভীর খাদে পড়ে মারাত্মকভাবে আহত হচ্ছে। দিনের আলোয় মোটরসাইকেলের আরোহীরাও নদীর গভীর খাদে পড়ে হাত-পা ভেঙে যাচ্ছে।
স্থানীয়রা জানায়, কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের বিলপাড়ার বাজারের পাশ দিয়ে প্রবাহিত ঝিনাই নদীর তীর বর্ষা মৌসুমে আধা কিলোমিটার ভেঙে চলাচলের সড়ক বন্ধ হয়ে গেছে। নদীতীরের ওই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন মির্জাপুর, বাসাইল ও সখীপুর উপজেলার শ’ শ’ মানুষ যাতায়াত করে থাকে। ওই সড়ক দিয়ে পিকআপভ্যান, মোটরসাইকেল, রিকশাভ্যান, ব্যাটারি ও সিএনজি চালিত অটোরিকশায় মানুষজন চলাচল করতেন।
পিকআপভ্যান ও ভ্যানে কৃষিপণ্য আনা-নেওয়া করা হতো। নদীতীর ভেঙে যানচলাচল ছাড়াও পথচারীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। ঝিনাই নদীর তীর ভেঙে পাশের কৃষিজমির পর বসতবাড়িগুলো ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে।
স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, এলাকার হাবিবুর রহমান হবির নেতৃত্বে স্থানীয় আবুল হোসেন, করিম মেম্বার, বিশু, হাবিবুর রহমানের ছেলে জাহিদ, অহিদুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে নদী থেকে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছে। এলাকাবাসী বাধা দিলে বালু ব্যবসায়ীরা স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে নদী থেকে বালু উত্তোলন করছে বলে জানায়।
ভেঙে যাওয়া নদীতীরের বাসিন্দা মজনু মিয়া স্ত্রী রিনা বেগম জানান, বাংলা ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের কারণে নদীতীর ভাঙতে ভাঙতে সড়ক ভেঙে তাদের জমি দিয়ে যাতায়াতকারীরা পাঁয়েহাটা রাস্তা তৈরি করে ফেলেছে। তাদের বসতবাড়িও ভাঙতে শুরু করেছে। সড়কের পাশে তাদের একটি ঘর ছল। নদীতীর ভেঙে যাওয়ায় সে ঘরটি অন্যত্র সরিয়ে নিতে হয়েছে। বিগত সরকারের সময় নদীভাঙন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড কিছু জিওব্যাগ ফেলেছিল।
তিনি জানান, নদীতীর ভাঙার কারণে তাদের একটি জমির উপর চার বার রাস্তা দেওয়া হয়েছে। আগামি বর্ষায় ভাঙন শুরু হলে তাদের বাড়িঘর নদীগর্ভে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
পাশের আদাবাড়ী চরপাড়া গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আজিজুল হক জানান, ঝিনাই নদীর তীর ভাঙতে ভাঙতে দীর্ঘদিনের প্রশস্ত সড়কটি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ওই সড়ক দিয়ে পথে মির্জাপুর, বাসাইল ও সখীপুরের শ’ শ’ মানুষ পিকআপভ্যান, ব্যাটারি ও সিএনজি চালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল নিয়ে চলাচল করতো। মিষ্টির জন্য বিখ্যাত বিলপাড়া বাজার এই অঞ্চলের একমাত্র বড়বাজার। সবাই এই বাজারে বেচাকেনা করে।
কিন্তু সড়কটি ভেঙে যাওয়ায় ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড(পাউবো) বর্ষা মৌসুমে জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করে। কিন্তু শুকনো মৌসুমে সংস্কর কাজ করলে এবং নদী থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে নদীতীর ভাঙন রোধ করা সম্ভব হবে।
আদাবাড়ী চরপাড়া গ্রামের কৃষক শহিদুর রহমান, সুজন মিয়া, কাজিরাপাড়া গ্রামের আবু বকর সহ অনেকেই জানান, পাকিস্তান আমলে নদীর মাঝ পর্যন্ত কৃষিজমি ছিল। নদীতীর ভাঙতে ভাঙতে স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়িঘর পর্যন্ত চলে এসেছে। সড়ক ভেঙে চলাচলে দুর্ভোগ বেড়েছে। তারা ওই সড়ক দিয়ে প্রায় সব সময় চলাচল করেন। ওই সড়ক দিয়ে তারা বাসাইল হয়ে টাঙ্গাইল শহরে যাতায়াত করেন।
তারা জানায়, ঝিনাই নদীর ভাঙনে তারা বিপর্যস্থ। নদীর পশ্চিম ও দক্ষিণ অংশ ভাঙনে সড়ক সহ পাশের কৃষিজমিও ভেঙে যাচ্ছে। সারা বছরই বিভিন্ন পয়েণ্টে বাংলা ড্রেজার বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে ঝিনাই নদীর ভাঙনের তীব্রতা দিন দিন বাড়ছে। যেটা নদীতঅর ভাঙনে বড় সমস্যা। ওই সড়কটি দ্রুত সংস্কারের দাবি জানান তারা।
মির্জাপুর থেকে বিলপাড়া বাজারে আসা পথচারী খন্দকার ইসমাঈল হোসেন, ছাত্র সিফাত, ব্যবসায়ী রাহুল, আজমত আলী, কৃষক আমজাদ হোসেন সহ অনেকেই জানান, তারা প্রায়ই মোটরসাইকেল ও ব্যাটারি বা সিএনজি চালিত অটোরিকশা নিয়ে মির্জাপুর থেকে বিলপাড়ার নেওয়াজ আলীর মিষ্টি খেতে বিলপাড়া বাজারে আসেন। সড়কটি ভাঙা থাকায় যাতায়াতে তাদের ব্যাপক সমস্যা হচ্ছে।
কাঞ্চনপুর ইউপি চেয়ারম্যান মামুনুর রহমান জানান, নদীতীর ভাঙন ঠেকাতে তারা পাউবো’র মাধ্যমে কয়েকবার জিওব্যাগ ফেলেছেন। তারপরও ভাঙন ঠেকানো যায়নি। শুকনো মৌসুমে নদীতীর সংস্কারে তিনি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের(পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মতিউর রহমান জানান, বাসাইল উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলীর(শাখা কর্মকর্তা) সম্প্রতি বদলী হয়েছেন। তিনি এনডিআর(অনুন্নয়ন রাজস্ব খাত) প্রকল্পের মাধ্যমে কাজ করা যায় কি-না তা খতিয়ে দেখবেন এবং খোঁজ নিয়ে ঝিনাই নদীতীর ভাঙনরোধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।