বুলবুল মল্লিক:
চলতি বছরের অতিবৃষ্টি ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত টাঙ্গাইলের কৃষকরা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বেশি বেশি শীতকালীন সবজি চাষে ঝুঁঁকছে। প্রায় সব রকমের সবজি সাধারণত স্বল্প সময়ে খাওয়ার উপযোগী হয়। কিছুদিনের মধ্যে তাদের উৎপাদিত সবজি বাজারে উঠবে। শীতকালীন সবজি বিক্রি করে ক্ষতি পুষিয়ে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন এখন কৃষকের চোখে মুখে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবারও জেলায় সবজির বাম্পার ফলনের আশাপ্রকাশ করছে কৃষি বিভাগ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়- যমুনা, ধলেশ্বরী ও লৌহজং নদী বিধৌত এ জেলার ভূমিবিন্যাস উর্বর হওয়ায় জেলার চর-পাহাড়-সমতলে প্রচুর শীতকালীন শাক-সবজি চাষ হয়। টাঙ্গাইলে উৎপাদিত সবজি জেলার চাহিদা পূরণ করে প্রতিবছর রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার চাহিদা পূরণ করে থাকে।
জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর জেলার ১১ হাজার হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সবজির ভালো ফলনের জন্য কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। তবে চলতি বছর বন্যা ও গ্রীস্মের শেষ দিােক অতিবৃষ্টির কারণে সবজি চাষে কিছুটা বিঘ্ন ঘটে। অনেক সবজি ক্ষেতের বীজ ও চারা নষ্ট হয়ে গেছে। এর বিরূপ প্রভাব পড়ে জেলার বাজারগুলোতে। হঠাৎ বাজারে বিভিন্ন ধরনের সবজির দাম বেড়ে যায়। বর্ষা মৌসুম কেটে যাওয়ায় কৃষকরা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বেশি বেশি শীতকালীন সবজি চাষ শুরু করেছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, কৃষকদের মধ্যে কেউ জমি তৈরি করছেন। কেউ জমিতে বীজ বা চারা রোপণ করছেন। কেউ আবার জমিতে গজিয়ে ওঠা সবজির চারার পরিচর্যা করছেন। সব মিলিয়ে কৃষকরা এখন ব্যস্ত সময় পাড় করছেন।
জেলার চরাঞ্চলের খোলা মাঠে ক্ষেতের পর ক্ষেত শীতের সবজি চাষাবাদের দৃশ্য চোখে পড়ে। সবজিক্ষেত নিড়ানো-আগাছা পরিষ্কার ও পানি দিতে ব্যস্ত কৃষক ও কিষাণিরা। অনাগত ফসলের দিকে তাকিয়ে তাদের মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটতে দেখা যায়।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলার গালার চরের কৃষক বাদশা, হাসমত, রানা ইসলাম, আমীর হামজা সহ অনেকেই জানান, অন্য ফসলের চেয়ে প্রতি বছর শীতকালীন সবজি চাষ বাড়ছে। এই অঞ্চলে এক সময় প্রচুর ধান চাষ হতো। এখন আবাদি জমিতে নতুন নতুন বসতি হওয়ায় চাষের জমিগুলো সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। সেই ধান চাষের পরিবর্তে এখন এ এলাকায় সবজির আবাদ হচ্ছে।
হুগড়া ইউনিয়নের বেগুনটাল গ্রামের কৃষক মফিজ উদ্দিন জানান, অন্যান্য ফসলের চেয়ে শীতকালীন সবজি আবাদ করে বেশি লাভবান হওয়া যায়। এ কারণে তিনি প্রতি বছরই সবজি চাষ করেন। শীতকালে বাজারে উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা থাকায় লাভবান হওয়া যায়।
কালিহাতী উপজেলার কৃষক শরিফ আহমেদ, আব্দুল হামিদ, আজিজুর রহমান সহ অনেকেই জানান, তাদের উৎপাদিত সবজি বাজারে ওঠার পরই কমে যাবে সবজির দাম। একই সঙ্গে বাজারে সবজির সঙ্কটও কেটে যাবে। প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও তারা সবজি চাষে লাভবান হওয়ার আশা করছেন।
টাঙ্গাইলের কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের সিনিয়র কর্মকর্তা ফারজানা খান জানান, এ জেলায় সব ধরনের সবজি চাষের সুখ্যাতি রয়েছে। প্রতিবছর জেলায় বিপুল পরিমাণ সবজির আবাদ হয়। এতে জেলার চাহিদা মিটিয়ে এসব সবজি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। এছাড়া উৎপাদিত সবজির দামও ভালো পাওয়া যায়। সেজন্যই এ বছর কৃষকরা শীতকালীন সবজি আবাদে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মো. দুলাল উদ্দিন জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবারও জেলায় সবজির বাম্পার ফলন হবে। এতে বাজারে সবজির সঙ্কট কেটে যাবে- একই সঙ্গে দামও ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে চলে আসবে।