কারণ দর্শানোর নোটিশ
দৃষ্টি নিউজ:
টাঙ্গাইল শহরের বিশ্বাস বেতকা খাদ্য গুদামের এলএসডির সংরক্ষণ ও চলাচল কর্মকর্তা জিয়াউল করিম মোহাম্মদ তারেকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছেন খাদ্য গুদামে কর্মরত কর্মচারীরা। এদিকে কর্মস্থলে উপস্থিত না থেকেও ১০৫টি ভি-ইনভয়েসে অগ্রীম সাক্ষর করে ফেঁসে গেছেন তিনি। এ কারণে গত বৃহস্পতিবার(২৩ জানুয়ারি) আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুরাইয়া খাতুন সাক্ষরিত এক পত্রের মাধ্যমে আগামি তিন কার্যদিবসের (মঙ্গলবার) মধ্যে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
জানা যায়, গত ৯ জানুয়ারি থেকে ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত শহরের বিশ্বাস বেতকা খাদ্য গুদামের এলএসডির সংরক্ষণ ও চলাচল কর্মকর্তা জিয়াউল করিম মোহাম্মদ তারেক কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তিনি কর্মকস্থল ত্যাগ করার সময় নিয়ম বহির্ভূতভাবে ১০৫টি ভি-ইনভয়েসে অগ্রীম সাক্ষর করে যান। এ নিয়ে ঊর্ধ¦তন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শেষে বিষয়টি প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে শো’কজ করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের বীরমুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বাঙ্গালীর ছেলে জিয়াউল করিম মোহাম্মদ তারেকের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত শুরু করে। কিন্তু তৎকালীন খাদ্যমন্ত্রীর সাথে ঘনিষ্টতা থাকায় ২০১৭ সালের ১৮ ডিসেম্বর খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ও মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়ে তৎকালীন দুদক সচিব ডক্টর মো. শামসুল আরেফিন জানিয়ে দেন, ‘জিয়াউল করিম তারেকের বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি’। সে সময় তিনি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
এরপর তাকে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক খাদ্য (নিয়ন্ত্রক দপ্তরের চলাচল ও সংরক্ষণ) সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এরপর আবারও তার বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও চাকুরিবিধি অমান্য করে বিদেশ ভ্রমণের অভিযোগ উঠে। এ অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর খাদ্য অধিদপ্তরের তৎকালীন মহাপরিচালক সারোয়ার মাহমুদ বিভাগীয় মামলা দায়ের করেন। তবে আওয়ামী পরিবারের সন্তান হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে কেউ সাহস দেখায়নি। দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ সরকারের দাপট দেখিয়ে তিনি নামে-বেনামে গড়ে তুলেছেন অঢেল সম্পদ।
এরমধ্যে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের আয়কর রিটার্নে দেখা যায়, মোট ১৫ লাখ ৪০ হাজার টাকার সম্পত্তির তথ্য উল্লেখ করেছেন। এর পাশাপাশি বিএস খতিয়ান নম্বর ১০৩৮৪ ঝিলংজা কক্সবাজার মৌজার ২ দাগের ১০ শতাংশ এবং বিএস খতিয়ান নম্বর ৩২০১ কাকারা চকরিয়া মৌজায় ৪০ শতাংশ জমি রয়েছে জিয়াউলের নিজ নামে।
এছাড়া তার বড় ভাই লক্ষ্যাচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল করিম সেলিমকে চকরিয়ায় ১০ টাকা মূল্যের চাল বিতরনের জন্য ‘ভাই ভাই ট্রেডার্স’ নামে একটি লাইসেন্স করে দেন। তবে পরবর্তীতে ১০ টাকা মূল্যের চাল কালোবাজারে বিক্রির দায়ে সেই লাইসেন্স স্থগিত করা হয়।
বর্তমানে টাঙ্গাইল শহরের বিশ্বাস বেতকা খাদ্য গুদামের এলএসডির সংরক্ষণ ও চলাচল কর্মকর্তা হিসেবে জিয়াউল করিম মোহাম্মদ তারেক দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তার লোকজনদের দিয়ে ডিও হোল্ডার এবং বাইরের বিভিন্ন অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নি¤œমানের চাল ও গম কিনে গুদামে মজুদ করে রাখেন। পরবর্তীতে সেই চাল ও গম বাইরের ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দেন। এ নিয়েও গত বছর ৮ অক্টোবর নি¤œমানের চাল মজুদের বিষয়ে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট এবং ইচ্ছাকৃতভাবে গম ওজনে কম দেখানোর জন্য গত ২৭ আগষ্ট তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
পরবর্তীতে সেই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে মজুদকৃত চাল ও গম নি¤œমানের প্রমাণ পাওয়ার উল্লেখ করা হয়। তারপরও অজ্ঞাত ক্ষমতার দাপটে এখনও তিনি বহাল তবিয়তে রয়েছেন।
শহরের বিশ্বাস বেতকা খাদ্য গুদামে কর্মরত কর্মচারীরা ওই কর্মকর্তার অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিকারে ঊর্ধ¦তন কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ বিষয়ে বিশ্বাস বেতকা খাদ্য গুদামের এলএসডির সংরক্ষণ ও চলাচল কর্মকর্তা জিয়াউল করিম মোহাম্মদ তারেকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেন নি।
টাঙ্গাইল জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ তানভীর হোসেন জানান, ঊর্ধ¦তন কর্তৃপক্ষ টাঙ্গাইল বিশ্বাস বেতকা এলএসডি-১ এর সংরক্ষণ ও চলাচল কর্মকর্তা জিয়াউল করিম মোহাম্মদ তারেককে নানা অভিযোগে শো’কজ করেছেন। আঞ্চকি খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুরাইয়া খাতুন সাক্ষরিত একটি পত্রটি তিনি পেয়েছেন। নিয়মানুয়ায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।