দৃষ্টি নিউজ:

টাঙ্গাইল শহরের সাবালিয়ায় স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমোদন বিহীন জেলা জামায়াতে ইসলামীর কয়েকজন নেতার মালিকানায় বেসরকারি পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত ‘আমানত স্পেশালাইজড হাসপাতাল’ উদ্বোধনের তোড়জোড় শুরু করা হয়েছে।
জেলায় জামায়াতের রাজনৈতিক ঘাঁটি হিসেবে গড়ে তুলতে তারা ওই হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছেন বলে শহরে কানাঘুষা চলছে। এজন্য জেলা জামায়াতের পক্ষ থেকে নানা কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে।
‘আমানত স্পেশালাইজড হাসপাতাল’- এর মালিকানায় ৩৩ জনের নাম থাকলেও জেলা জামায়াতের দুই শীর্ষ নেতা মূল দায়িত্বে রয়েছেন। তারা হচ্ছেন- হাসপাতালের এমডি আল-মোমিন এবং পরিচালক ইয়াহিয়া খান মারুফ।
তারা দু’জনই জেলা জামায়াতের মজলিসে শুরা সদস্য। এছাড়া তাদের সাথে জামায়াত-শিবিরের বেশ কয়েকজন সাবেক নেতাকর্মীও রয়েছেন।
টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের পূর্ব-দক্ষিণ কোণে শহরের সাবালিয়া মৌজায় এই হাসপাতালের অবস্থান। সেখানে এক আইনজীবীর তিনতলা ভবন ভাড়া নিয়ে হাসপাতালের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
আমানত স্পেশালাইজড হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্বে থাকা জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের মধ্যে নাশকতার অভিযোগে দায়েরকৃত মামলার কয়েকজন আসামিও রয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, এরই মধ্যে তারা কৌশলে টাঙ্গাইল পৌরসভা থেকে হাসপাতালের নামে ট্রেড লাইসেন্স হস্তগত করেছেন। ট্রেড লাইসেন্সধারীর জায়গায় জামায়াত নেতা আল-মোমিনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রায় কোটি টাকা বিনিয়োগের ওই হাসপাতালের মালিকানায় ৩৩ জনের নাম থাকলেও আল-মোমিন কৌশলে নিজের একক নামে ট্রেড লাইসেন্স করে নিয়েছেন- যাতে ভবিষ্যতে অন্য অংশীদারদের বিদায় করে তিনি হাসপাতালটি একক নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বর্তমানে রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়া জামায়ত-শিবিরের নেতাকর্মীরা ওই হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার অযুহাতে শহরের গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গায় স্থায়ীভাবে ঘাঁটি গড়ে তোলার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন।
শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পর টাঙ্গাইল শহরের মধ্যে সাবালিয়া-কোদালিয়া এলাকাটি এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। রাস্তাঘাটের ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হওয়ায় অর্থনৈতিকভাবেও দিনদিন উন্নত হচ্ছে।
এখানে গড়ে উঠছে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এই এলাকায় রয়েছে বেশকয়েকটি জনপ্রিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ কারণে দেশের স্বাধীনতাবিরোধী চক্রটি তাদের ভবিষ্যত কর্মকাণ্ডের জন্য ওই এলাকাটিই বেছে নিয়েছে।
ইতোপূর্বে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা টাঙ্গাইল শহরে পর্যায়ক্রমে কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের নেপথ্য ভূমিকার বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় সেগুলো তারা টিকিয়ে রাখতে পারেননি। অবশেষে আমানত হাসপাতালের মাধ্যমে তারা দলীয় মিশন বাস্তবায়নের অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছেন।
একাধিক সূত্রমতে, হাসপাতালের এমডি আল-মোমিন জামায়াতের রুকন। তিনি জেলা জামায়াতের মজলিসে শুরা সদস্য হওয়ার পাশাপাশি দেলদুয়ার উপজেলা শাখার আমীর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এই হাসপাতালের আরেক কা-ারী ইয়াহিয়া খান মারুফ জেলা জামায়াতের শুরা সদস্য হওয়ার পাশাপাশি মির্জাপুর উপজেলা শাখার আমীর হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন। তিনিও জামায়াতের রুকন এবং তিনি পেশায় একজন শিক্ষক।
সূত্র জানায়, হাসপাতাল সাজানোর জন্য গাজীপুর থেকে পানির দরে পুরাতন একটি হাসপাতালের নিম্নমানের যন্ত্রাংশ ও অন্যান্য সরঞ্জামাদী কিনে আনা হয়েছে।
দীর্ঘদিন অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকা এসব যন্ত্রপাতির মাধ্যমে রোগীদের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ব্যাপক প্রতারণার আশঙ্কা রয়েছে।
সূত্রমতে, জেলা আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে হাসপাতালটি উদ্বোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জেলা আ’লীগের শীর্ষ নেতারা সময় দিতে না পারায় এরই মধ্যে দুইবার হাসপাতালের উদ্বোধনের তারিখ ঠিক করেও আবার পেছানো হয়েছে।
উদ্বোধনী কোন কার্ড ছাপানো না হলেও মোবাইল ফোনে ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথি ও অভ্যাগতদের আমন্ত্রণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আমানত স্পেশালাইজড হাসপাতালের এমডি জামায়াত নেতা আল-মোমিন জানান, হাসপাতালের সব কাজ শেষ করা হয়েছে। উদ্বোধনের তারিখ ঠিক করা হয়নি।
বেসরকারি হাসপাতাল হিসেবে অনুমতির জন্য স্বাস্থ্যবিভাগে আবেদন করা হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন পরিদর্শন করে অনুমতি দিলে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করা হবে।
টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা. আবুল ফজল মো. সাহাবুদ্দিন খান বলেন, আমানত স্পেশালাইজড হাসপাতাল নামে কোন হাসপাতালের অনুমতির জন্য আবেদন করা হয়েছে কিনা তা ফাইল দেখে বলতে হবে।
স্বাস্থ্যবিভাগের অনুমতি ছাড়া হাসপাতাল উদ্বোধন করার কোন সুযোগ নেই বলেও জানান তিনি।