আজ- সোমবার | ১৭ মার্চ, ২০২৫
৩ চৈত্র, ১৪৩১ | বিকাল ৫:৪৯
১৭ মার্চ, ২০২৫
৩ চৈত্র, ১৪৩১
১৭ মার্চ, ২০২৫, ৩ চৈত্র, ১৪৩১

টাঙ্গাইলে ‘ডায়াবেটিক ধান’ চাষে সফল দুই কৃষক

দৃষ্টি নিউজ:

টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার মুশুদ্দি গ্রামে গাজীপুরস্থ বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট(ব্রি) উদ্ভাবিত ‘ডায়াবেটিক’ (ব্রি ধান-১০৫) জাতের ধান প্রথমবার প্রদশর্নী প্লট হিসেবে আবাদ করে সফল হয়েছেন স্থানীয় দুই কৃষক।


তারা হচ্ছেন- ওই গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান ও গোলাম মোস্তফা ভুট্টু। ধান কর্তন উপলক্ষে সম্প্রতি(১৬ মে) ওই উপজেলার মুশুদ্দি ইউনিয়নের মুশুদ্দি বটতলায় মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়। মাঠ দিবসে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের(ব্রি) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।


ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা যায়, দেশে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা আনুপাতিক হারে বাড়ছে- এতে মানুযষের মধ্যে ভাত খাওয়ার প্রবণতা দিন দিন কমছে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের(ব্রি) একদল গবেষক ডায়াবেটিস রোগীদের কথা চিন্তা করে স্বল্প পরিমাণ শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট সম্পন্ন পুষ্টিকর ব্রি ধান-১০৫ উদ্ভাবন করেছে। গবেষকরা তাদের উদ্ভাবিত ব্রি ধান-১০৫ জাতের ধানকে ‘ডায়াবেটিক ধান’ হিসেবে আখ্যায়িত করছেন।

নতুন জাতের এ ধানের আবাদ করে আশানুরূপ ফলন পেয়েছেন ওই দুই কৃষক। ডায়াবেটিস জাতের ধানের বাজার মূল্য বেশি পাওয়া যাবে এবং ভবিষ্যতে এ ধান দেশের কৃষি অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।


কৃষি বিভাগের স্থানীয় কর্মকর্তারা জানান, ব্রি ধান-১০৫ অন্য জাতের ধান গাছের চেয়ে বৈশিষ্ট্যগতভাবে কিছুটা আলাদা। গাছের পাতা সবুজ ও খাড়া এবং পাকা ধানের দানা মাঝারি লম্বা ও চিকন। এটাতে অন্যসব ধানের তুলনায় স্বল্প পরিমাণ শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট সম্পন্ন কিন্তু পুষ্টিকর। চালের শর্করা বা কার্বোহাইড্রেটই ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য ক্ষতিকর। অথচ এ জাতের ধানের চালে স্বল্প পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা থাকায় ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিয়মিত খাবারের উপযোগী। এ জাতের ধানের বীজ কৃষক নিজেই উৎপাদন ও সংরক্ষণ করতে পারবেন।


‘ডায়াবেটিক ধান’ চাষে সফল মুশুদ্দি গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান জানান, তিনি কৃষি অফিসের পরামর্শে ৫০ শতক জমিতে ব্রি ধান- ১০৫(ডায়াবেটিক) প্রদশর্নী প্লট হিসেবে আবাদ করেছেন। এ জাতের ধানে রোগবালাই নেই বললেই চলে। একই খরচে অন্য জাতের চেয়ে এই ধানের ফলনও বেশি। তিনি বিঘাপ্রতি ২৮ মণ (কাঁচা) ফলন পেয়েছেন।


অপর কৃষক একই গ্রামের গোলাম মোস্তাফা ভুট্টু জানান, নতুন এ জাতের ধানের ফলন খুবই ভালো। তিনি গড়ে বিঘাপ্রতি ২৯ মণ (কাঁচাধান) ডায়াবেটিক ধান পেয়েছেন। গাজীপুরের ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) তাদের কাছ থেকে এ ধন সংগ্রহ করবে। ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তারা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত নতুন জাতের এ ধানের মূল্য নির্ধারণ করা হয়নি।


কৃষি কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান জানান, এ অঞ্চল ধান চাষের জন্য খুবই উপযোগী। নতুন জাতের ব্রি ধান-১০৫ (ডায়াবেটিক) কৃষকদের ফসলের মাঠে গিয়ে তারা ধান গাছ পরিদর্শনের পাশাপাশি সার্বিক বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন। তবে পর্যাপ্ত বীজ পেলে স্থানীয় কৃষকদের মাঝে ‘ডায়াবেটিক’ ধানের চাষ ছড়িয়ে দেওয়া যাবে।


গাজীপুরের ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের(ব্রি) মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডক্টর আমেনা খাতুন মাঠ পরিদর্শনে এসে জানান, দেশে ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। ডায়াবেটিস রোগীর কথা চিন্তা করে ব্রি ধান-১০৫ অর্থাৎ ‘ডায়াবেটিক’ ধান উদ্ভাবন করা হয়েছে।

এটা বোরো মৌসুমের একটি কম জিআই সম্পন্ন, রোগবালাই ও পোকামাকড় আক্রমণ রোধক ধান। গড় ফলন হেক্টরে ৭ দশমিক ৬ টন। উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে অনুকূল পরিবেশে হেক্টর প্রতি ৮ দশমিক ৫ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম। এ ধানের জীবনকাল ১৪৮ দিন।


বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ডক্টর মো. শাহজাহান কবীর জানান, দেশে যেন কখনও খাদ্য ঘাটতি দেখা না দেয়- সেজন্য উচ্চ ফলনশীল নতুন নতুন ধানের জাত উদ্ভাবনে গবেষণায় জোর দেওয়া হয়েছে।

এর মধ্যে ব্রি ধান-১০৫ থেকে পাওয়া চালে শর্করা বা কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কম এবং সে কারণেই এটাকে ‘ডায়াবেটিক ধান’ বলা হচ্ছে।

শেয়ার করুন স্যোশাল মিডিয়াতে

Facebook
Twitter
LinkedIn
X
Print
WhatsApp
Telegram
Skype

সর্বশেষ খবর

এই সম্পর্কিত আরও খবর পড়