আজ- শনিবার | ২৫ জানুয়ারি, ২০২৫
১১ মাঘ, ১৪৩১ | ভোর ৫:১১
২৫ জানুয়ারি, ২০২৫
১১ মাঘ, ১৪৩১
২৫ জানুয়ারি, ২০২৫, ১১ মাঘ, ১৪৩১

টাঙ্গাইলে নদীতীর ও দুটি বাঁধ ভেঙে ৪০ গ্রাম প্লাবিত

বুলবুল মল্লিক:


টাঙ্গাইলে বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। গত কয়েক দিনের ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে যমুনা নদীর নলীন পয়েন্টে বিপদসীমার ১২৬ ও কালিহাতীর জোকারচর পয়েন্টে ৮৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
অপরদিকে, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ঘারিন্দা ইউনিয়নের নওগাঁ-জসিহাটি ঝিনাই নদীর উপর নির্মিত বাঁধ ভেঙে অন্তত ২০টি গ্রাম নতুন করে বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। নতুন করে বন্যা কবলিত গ্রামগুলোর জন্য ১ লাখ টাকাসহ ৫ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। আগামীকাল বৃহস্পতিবার(১৭ আগস্ট) প্লাবিত গ্রামগুলো সরেজমিন পরিদর্শন করবেন এবং প্রয়োজনে আরো বরাদ্দ বৃদ্ধি করবেন বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক খান মো. নুরুল আমিন।
জানা যায়, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ঘারিন্দা ইউনিয়নের নওগাঁ-জসিহাটি বেড়িবাঁধ ভেঙে নওগাঁ, জসিহাটি, তারটিয়া, তীরঞ্জ, ফুলকী ও ময়থা গ্রামসহ অন্তত তিনটি উপজেলার ২০টি গ্রাম নতুন করে বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। এসব গ্রামের আমন বোরো ধানের চারা বিনষ্টসহ উঠতি সবজির ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এদিকে, কালিহাতী উপজেলার হাতিয়ায় লৌহজং নদী রক্ষা বাঁধ ভেঙে অন্তত ১০টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৭-৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও শতাধিক বসতবাড়ি। পৌলী নদীর তীর ভেঙে বুধবার(১৬ আগস্ট) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে এলেঙ্গা পৌর সভার মহেলা, হিন্নাইপাড়া, চিনামুড়া এবং কালিহাতী উপজেলার সহদেবপুর ইউনিয়নের বানিয়াফৈর, আকুয়া, চামুরিয়া সহ অন্তত ১০টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়ে পড়েছে। পৌলী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে এলেঙ্গা পৌরসভা কার্যালয়, বাজার বাসস্ট্যান্ড সহ পৌরসভার প্রায় প্রতিটি এলাকায় বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে বলে স্বীকার করেছেন পৌর মেয়র মো. শাফি খান। তিনি জানান, পৌরসভার পানি নিস্কাশনের জন্য খোড়া তিন ফুট গর্তের ডেন দিয়ে বুধবার সকালে পৌর শহরে পানি ঢুকে পড়ে। পরে তা বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে যায়।
ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসীদের অভিযোগ, নিম্নমানে নির্মিত হওয়ায় বাঁধটি বুধবার(১৬ আগস্ট) সকালে আকস্মিক ভাঙনের কবলে পড়েছে। এ ভাঙনের ফলে নতুন করে প্লাবিত হয়েছে ২০টি গ্রাম। গ্রামগুলোর ফসলি জমি নষ্ট হওয়াসহ নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে শতাধিক ঘরবাড়ি। বসবাসের ঘরবাড়ি হারিয়ে আশ্রয় নিয়েছে সড়কসহ বিভিন্ন প্রতিবেশীর উচু বাসা বাড়িতে।
এ প্রসঙ্গে টাঙ্গাইল-৫(সদর) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ ছানোয়ার হোসেন জানান, নওগাঁ-জসিহাটি ভাঙন কবলিত বেড়িবাঁধ রক্ষায় রাতে বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা চালানো হয়েছে কিন্তু পানির প্রবাহ বৃদ্ধির কারণে বাঁধটি রক্ষা করা যায়নি। এ বাঁধটি ভাঙনের ফলে এলাকার কত মানুষ এখন পানিবন্দি তা নির্ধারণ করা না গেলেও ইতিমধ্যেই ৮-১০টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্লাবিত হয়েছে ১০-১২টি গ্রাম। একইভাবে টাঙ্গাইল শহর রক্ষা বাঁধটি রয়েছে হুমকির মুখে। চরম সংকটে রয়েছে টাঙ্গাইলের বন্যা কবলিত সাধারণ মানুষ। পানি উন্নয়ন বোর্ডে লোকবল কম থাকলেও ভাঙন ঠেকাতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বাঁধ রক্ষার জন্য বালির বস্তা পেলেও বালি নিয়ে দেখা দিয়েছে চরম সংকট। এর ফলে কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে।
অন্যদিকে, টাঙ্গাইলের জোকারচর-তারাকান্দি বাঁধের উপর নির্মিত তারাকান্দি-ভূঞাপুর-টাঙ্গাইল সড়কের বিভিন্ন স্থানে লিকেজ হয়ে কমপক্ষে ১২ পয়েন্ট দিয়ে চুইয়ে পানি প্রবেশ করছে। সড়কের লিকেজ বন্ধ করতে মঙ্গলবার দুপুর থেকে কাজ করছে টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে যেকোনো সময় সড়কটি ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। টাঙ্গাইল-ভূঞাপুর-তারাকান্দি সড়ক লিকেজ হওয়ায় বুধবার(১৬ আগস্ট) সকাল থেকে ওই সড়কে সকল ভারীযানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ফলে তারাকান্দি থেকে উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণাঞ্চলে সার বহনকারী পরিবহনগুলো বন্ধ রয়েছে।
টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী শাহজাহান সিরাজ জানান, জোকারচর-তারাকান্দি বাঁধের উপর নির্মিত তারাকান্দি-ভূঞাপুর-টাঙ্গাইল সড়কে বিভিন্ন পয়েন্টে লিকেজ দেখা দিয়েছে। অর্জুণা পয়েন্টে লিকেজ বেশি দেখা যাওয়ায় স্থানীয়দের সাথে নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন কাজ করছে। অন্য লিকেজগুলো বন্ধ করতে ওই সড়কের ১০টিরও বেশি পয়েন্টে কাজ চলমান রয়েছে।

শেয়ার করুন স্যোশাল মিডিয়াতে

Facebook
Twitter
LinkedIn
X
Print
WhatsApp
Telegram
Skype

সর্বশেষ খবর

এই সম্পর্কিত আরও খবর পড়