আজ- মঙ্গলবার | ১৪ জানুয়ারি, ২০২৫
৩০ পৌষ, ১৪৩১ | রাত ১:৪৯
১৪ জানুয়ারি, ২০২৫
৩০ পৌষ, ১৪৩১
১৪ জানুয়ারি, ২০২৫, ৩০ পৌষ, ১৪৩১

টাঙ্গাইল কটন মিলস দুই যুগ ধরে বন্ধ!

চুরি হচ্ছে যন্ত্রপাতি ॥ শ্রমিক-কর্মচারীরা বেকার

 

বুলবুল মল্লিক:

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে গোড়াই শিল্পাঞ্চলে অবস্থিত ‘টাঙ্গাইল কটন মিলস’টি দেনার বোঝা মাথায় নিয়ে দুই যুগ ধরে বন্ধ রয়েছে। সরকার টাঙ্গাইল কটন মিলটি পিপিএম পদ্ধতিতে চালু করার উদ্যোগ নিলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় তা আলোর মুখ দেখেনি। ফলে মিলের কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি চুরি ও ভবন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে- বেহাত হয়ে যাচ্ছে মিলের মূল্যবান জমি। মিলের ৩-৪ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

জানা যায়, বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা মহাসড়কের পাশে গোড়াই শিল্পাঞ্চলে অবস্থিত বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস কর্পোরেশনের রাষ্ট্রায়ত্ত একমাত্র সুতা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান টাঙ্গাইল কটন মিলস। ক্রমাগত লোকসানের কারণে ঋণের বোঝা টানতে গিয়ে দীর্ঘ দুই যুগ ধরে বন্ধ থাকার সুযোগে মিলের আশপাশে ও ভেতরের মূল্যবান জমি বেদখল হয়ে যাচ্ছে।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

বিশাল এলাকা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত সুতা উৎপাদনের মিলটি বন্ধ থাকায় মিলে কর্মরত ৩-৪ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী বেকার হয়ে বর্তমানে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। সরকার টাঙ্গাইল কটন মিলটি পাবলিক প্রাইভেট পার্টনার শিপ(পিপিএম) পদ্ধতিতে পুনরায় চালুর উদ্যোগ নিলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় তা প্রায় ভেস্তে যেতে বসেছে।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

মিল সূত্রে জানা যায়, ১৯৬২ সালে ২৬ দশমিক ২৮৫ একর এলাকা নিয়ে টাঙ্গাইল কটন মিলের এক নম্বর ইউনিটি চালু হয়। এটিই ছিল টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই শিল্পাঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত একমাত্র এবং প্রথম সুতা উৎপাদনের মিল। বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে শ্রমিক-কর্মচারীদের কল-কাকলিতে মিল এলাকা মুখরিত হয়ে ওঠে। মিলে সুতা উৎপাদন ভাল হওয়ায় ১৯৭৮ সালে দুই নম্বর ইউনিট চালু করা হয়।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

এ মিলে উচ্চ মান সম্পন্ন(হাই কোয়ালিটি) ৮০, ৬০, ৭০ ও ৪০ কাউন্টের সুতা উৎপাদন হতো। মিলে উৎপাদিত উন্নত মানের সুতা দেশের চাহিদা পুরণের পাশাপাশি বিদেশে রপ্তানি করে সরকার প্রচুর বৈশ্বিক মূদ্রা আয় করে। মিলের দুই ইউনিটে এলাকার ৪ হাজার শ্রমিক-কর্মচারীর বেকারত্বের নিরসন হয়। তারা দিন-রাত পরিশ্রম করে জীবিকা নির্বাহ করার প্রয়াস পায়। বিশাল এলাকা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত টাঙ্গাইল কটন মিলে উৎপাদন ভাল হওয়ায় শ্রমিক-কর্মচারীদের পদচারণায় ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ওই এলাকা মুখরিত হয়ে ওঠে।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

মিলসকে ঘিরে ওই এলাকায় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মাদ্রাসা, একটি ডাকঘর, পল্লী বিদ্যুতের সাব স্টেশনসহ বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে ওঠে। মিলটি বন্ধ হওয়ায় এসব প্রতিষ্ঠান বর্তমানে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। একই সঙ্গে এলাকায় নতুন করে বেকারের সংখ্যা বাড়ছে।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

সরেজমিনে মহাসড়কের পাশে মির্জাপুরের গোড়াই শিল্পাঞ্চলে অবস্থিত টাঙ্গাইল কটন মিলস এলাকায় দেখা যায়- চার দিকে সুনসান নীরবতা। মিলে শ্রমিক-কর্মচারী ও তাদের পরিবার-পরিজনদের কল-কাকলী নেই। মিলটির প্রধান গেইটটি নিস্তব্ধ-স্থবির দাঁড়িয়ে স্মৃতি বহন করছে।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

মিলের সাবেক কর্মচারীদের মধ্যে বাবুল সিকদার ও আব্দুর রহমান সুবাদারসহ অনেকেই অভিযোগ করেন, টাঙ্গাইল কটন মিলসের কিছু অসাধু ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সিবিএ নেতাদের অব্যবস্থাপনা ও অনিয়ম দুর্নীতির কারণে ১৯৮৫-৯০ সালে ক্রমাগত লোকসান দিয়ে ঋণের বোঝা বাড়তে থাকে। কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সিবিএ নেতাদের সিন্ডিকেটের কারণে মিলটি দেনার ভারে জর্জরিত হয়ে পড়ে। ১৯৯৮ সালে প্রথমে মিলের দুই নম্বর ইউনিট বন্ধ হয়ে যায়। বেকার হয়ে পরে প্রায় দুই হাজার শ্রমিক-কর্মচারী। এক নম্বর ইউনিটটি চালু থাকলেও ক্রমাগত লোকসানের কারণে ২০০৮ সালে সেটিও বন্ধ হয়ে যায়।

 

 

 

 

 

 

 

তারা জানায়, মিলের দুইটি ইউনিট পুরোপুরি বন্ধ থাকায় ৩-৪ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী কর্মহীন হয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। বিশাল এলাকা নিয়ে স্থাপিত টাঙ্গাইল কটন মিলসের কয়েকশ’ কোটি টাকার ষন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এবং ভবনগুলোও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এছাড়া মিলের বেশ কিছু স্থায়ী সম্পত্তি স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলে চলে যাচ্ছে।

 

 

 

 

 

 

 

খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, মিলটি দেখভালের জন্য একজন প্রধান নির্বাহীর নেতৃত্বে দৈনিক মজুরী ভিত্তিক ১০-১২ জন কর্মচারী কাজ করে যাচ্ছেন। মিলটি পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের(পিপিএম) মাধ্যমে পুনরায় চালু করা হলে মিলের বেকার শ্রমিক-কর্মচারীদের বেকারত্বের নিরসেনর পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং সরকারও প্রচুর লাভবান হবে বলে মিলের সাবেক কর্মচারীরা বিশ্বাস করেন।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

এ বিষয়ে টাঙ্গাইল কটন মিলসের প্রধান নির্বাহী (মিল ইনচার্জ) মিজানুর রহমান জানান, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিল কর্পোরেশনের প্রথম সুতা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান টাঙ্গাইল কটন মিলস। ক্রমাগত লোকসানের কারণে মিলটি বন্ধ থাকায় এলাকায় বেকার শ্রমিকের সংখ্যা বেড়ে গেছে।

 

 

 

 

 

 

 

 

টাঙ্গাইল কটন মিলসটি পিপিএম পদ্ধতিতে পুনরায় চালুর উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। চালু না হওয়ায় শ’ শ’ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তিও দিন দিন অবৈধ দখলদারের হাতে চলে যাচ্ছে। সরকার পদক্ষেপ গ্রহণ করলে মিলটি পুনরায় চালু করা সম্ভব।

 

 

 

 

শেয়ার করুন স্যোশাল মিডিয়াতে

Facebook
Twitter
LinkedIn
X
Print
WhatsApp
Telegram
Skype

সর্বশেষ খবর

এই সম্পর্কিত আরও খবর পড়