দৃষ্টি নিউজ:
টাঙ্গাইলে নবগঠিত জেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটিতে তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী, হত্যা, অস্ত্র ও অপহরণ মামলার আসামী, অছাত্র, সরকারি চাকরিজীবী, আইনজীবী, বয়স্ক এবং বেশকয়েকজন বিবাহিতরাও স্থান পেয়েছে। এছাড়াও অব্যাহতিপ্রাপ্ত শহর ছাত্রদলের সিনিয়র যগ্ম-সম্পাদক এক নেতাও কমিটিতে ঠাই পেয়েছেন। গত শুক্রবার (১৯ মে) কেন্দ্র থেকে মোস্তাফিজুর রহমান সোহেলকে আহ্বায়ক ও তানভীরুল ইসলাম হিমেলকে যগ্ম-আহ্বায়ক করে ৫১ সদস্যের নতুন আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ছাত্রলীগের এ তালিকা অনুমোদন ও প্রকাশের পর পুরো টাঙ্গাইল জেলার আওয়ামী রাজনীতিতে তোলপাড় শুরু হয়েছে। সেই সাথে চরমভাবে ধিক্কার জানাচ্ছেন সাবেক নেতৃবৃন্দ। তারা অভিযুক্তদের দ্রুত বাদ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
জানা গেছে, জেলা ছাত্রলীগের ৫১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটির বেশিরভাগই নিয়মিত ছাত্র নন। এনিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পদ বঞ্চিতরা। বর্তমান কমিটির আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান সোহেলের বিরুদ্ধে এক শিক্ষককে পেটানোর অভিযোগ রয়েছে। ওই ঘটনায় থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। সরকার বাদি ওই মামলায় তিনি জামিন নিয়ে নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন।
নবগঠিত এই কমিটিতে সদস্য করা হয়েছে আতিকুর রহমান রনি, শাকিল কবির সোহেল এবং নাজিবুল ইসলাম নাসিরকে। প্রথম দুইজনেই পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী। আতিকুর রহমান রনি আন্ডারওয়ার্ল্ডে ‘কোয়ার্টার রনি’ নামে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল গেটে এক ওষুধ ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যাসহ বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। এর আগে কোয়ার্টার রনি টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভান্ডার রক্ষককে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করেন। সে সময় পুলিশ তাকে পিস্তলসহ গ্রেপ্তার করেছিল। বর্তমানে সে কারাগারে রয়েছে।
শাকিল কবির সোহেল অপরাধ জগতে ‘ডন সোহেল’ নামে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে বিগত ২০১৩ সালের ১ এপ্রিল জেলা শ্রমিক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ব্যবসায়ী গোলাম আযমকে গুলি করে হত্যা মামলা এবং অস্ত্রসহ বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। ওই হত্যার ঘটনায় গোয়েন্দা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। হত্যায় ব্যবহৃত পিস্তলটিও উদ্ধার করে পুলিশ। এছাড়া সে বিবাহিত। ওই মামলায় দীর্ঘদিন কারাভোগ করে বর্তমানে সে জামিনে রয়েছে। এছাড়া নাজিবুল ইসলাম নাসির শহরের কচুয়াডাঙ্গার অন্যতম সন্ত্রাসী হিসেবে পুলিশের তালিকায় নাম রয়েছে। বর্তমানে নাসিরের ডান হাত ও পা প্যারালাইজ (পঙ্গু) হয়ে রয়েছে। এছাড়া কমিটিতে স্থান পাওয়া সাজীদ খান, সজিব খানশুর, রিয়াদ হাসান, ইয়ারুফ হোসেন বিবাহিত।
এদিকে, নবগঠিত কমিটির সদস্য পদে স্থান পেয়েছে এসএম জুয়েল রানা। সে টাঙ্গাইল শহর ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম-সম্পাদক ছিলেন। এসএম জুয়েল রানা টাঙ্গাইল পৌরসভার কম্পিউটার অপারেটর পদে (সরকারি) কর্মরত রয়েছেন। সরকারি চাকরি করার কারণে ছাত্রদল থেকে তাকে পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। বর্তমান সরকারকে উৎখাতের বিভিন্ন আন্দোলন, সংগ্রামে এসএম জুয়েল রানা সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। এছাড়া নবগঠিত কমিটিতে সদস্য পদে স্থান পেয়েছে বাবুল মিয়া। তিনি টাঙ্গাইল কোর্টে আইনজীবী পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন।
জেলা ছাত্রলীগ সূত্র জানায়, টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রলীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল বিগত ২০১০ সালে। ওই সম্মেলনে নাজমুল হুদা নবীন সভাপতি এবং ইসতিয়াক আহমেদ রাজিব সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হন। সে সময় জেলা ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণ করতেন এমপি আমানুর রহমান খান রানার ছোট ভাই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পা। বিগত ২০১৪ সালের আগস্টে আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক আহমদ হত্যা মামলায় বাপ্পাসহ তার ভাইদের জড়িত থাকার বিষয়টি পুলিশি তদন্তে বের হয়ে আসে। তখন বাপ্পাসহ তার ভাইয়েরা আত্মগোপন করেন। সে সময় বাপ্পার অনুসারী কিছু ছাত্রলীগ নেতাও আত্মগোপনে যান। বিগত ২০১৫ সালের ২৪ জুন সম্মেলন ছাড়াই ইসতিয়াক আহমেদ রাজিবকে সভাপতি এবং শামীম আল মামুনকে সাধারণ সম্পাদক করে কেন্দ্র থেকে দুই সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়। এই কমিটিকে ‘খান পরিবারের পকেট কমিটি’ আখ্যা দিয়ে খান পরিবার বিরোধীরা আন্দোলন শুরু করেন। তাদের অভিযোগ ছিল, বাপ্পা আত্মগোপনে থেকেও ছাত্রলীগে নিজের আধিপত্য ধরে রাখতে কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রভাবিত করে তার অনুসারীদের দিয়ে কমিটি করিয়ে ছিলেন। বিরোধীদের আন্দোলনের মুখে রাজিব ও শামীমের নেতৃত্বাধীন কমিটির দু’বছরে একদিনও দলীয় কার্যালয়ে আসতে পারেননি এবং কোন কর্মকান্ডে অংশ নিতে পারেনি। সেই সাথে পূর্ণাঙ্গ কমিটিও করতে পারেনি।
এসব বিষয়ে নবগঠিত জেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল জানান, বিতর্কিতদের নাম আমরা দেইনি। কিছু সংসদ সদস্য ও দলীয় নেতাদের কাছ থেকে কিছু নাম নিয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন করেছে। এতে আমাদের কোন হাত নেই।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জোয়াহের ইসলাম জোয়াহের জানান, তারা যে খসড়া কমিটি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে জমা দিয়েছিলেন সেখানে কোন সন্ত্রাসী এবং অছাত্রের নাম দেয়া হয়নি। কুখ্যাত খান পরিবারের পৃষ্ঠপোষকতায় এরা ঢুকে পড়েছে। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।