দৃষ্টি নিউজ:
টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত বিভিন্ন পদের ১৫ জন আউটসোসিং কর্মচারীকে অব্যাহতি দিয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মাছরাঙ্গা সিকিউরিটি সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেড। ওই কর্মচারীরা আউটসোর্সিংয়ে গত ২০২২ সালে নিয়োগ পেয়েছিলেন। তবে ১৫ কর্মচারীর অব্যাহতির বিষয়ে মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ অবগত নয় বলে জানান হাসপাতালের পরিচালক আব্দুল কুদ্দুস।
জানাগেছে, প্রতিষ্ঠানটির নাম ছিল শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর সম্প্রতি নতুন নাম করা হয় ‘টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল’। গত ৩১ ডিসেম্বর টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজে কর্মরত ল্যাব অ্যাটেনডেন্ট, ওয়ার্ড বয়, ইলেকট্রিশিয়ান, বাবুর্চি ও নিরাপত্তা প্রহরী পদের ১৫ জনকে অব্যাহতি দেয় তাদের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মাছরাঙ্গা সিকিউরিটি সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেড।
অব্যাহিত দেওয়া ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে বিভিন্ন পদবির ৯০ জন জনবল সরবরাহ করা হয়। এর মধ্যে ওই ১৫ জন জনবল বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকান্ড ও মিটিং-মিছিলের সঙ্গে জড়িত থাকায় নিয়োগপত্রের ৩নং শর্তাবলী অনুযায়ী অফিস শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে লিপ্ত হওয়ায় তাদের নিয়োগপত্র বাতিল করা হলো।
অব্যাহতি পাওয়া কর্মচারীরা অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নিয়োগ পাওয়ায় চাকরি থেকে তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া তাদের নিয়োগের শর্তানুযায়ী ১৬ হাজার ১৩০ টাকা বেতনের মধ্যে তাদেরকে ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হতো। সর্বশেষ গত পাঁচ মাসে ১২ হাজার টাকা করে তাদের বেতন দেওয়া হয়েছে।
অব্যাহতি প্রাপ্ত কর্মচারীরা জানান, আওয়ামী লীগের নেতাদের মাধ্যমে হাসপাতালে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। সেই সময় নিয়োগ পাওয়া অনেকে এখনও কর্মরত। শুধু এই ১৫ জনকে অব্যাহতির চিঠি দেওয়া হয়েছে। অথচ কেউ কোনো দল বা মিছিল-মিটিং করেননি, কোনো খারাপ রেকর্ডও নেই। পর্যায়ক্রমে নিয়োগ পাওয়া ৯০ জনই চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হবে বলে তারা শুনেছেন। পরে নতুন করে অন্য দলের লোকজন তাদের মতো করে নিয়োগ দেবে।
অব্যাহতি পাওয়া ল্যাব অ্যাটেনডেন্ট পাপিয়া আক্তার জানান, কর্মচারীদের একটি গ্রুপে অব্যাহতির ওই চিঠি দেওয়া হয়েছে। পরে সুপারভাইজার গ্রুপে অব্যাহতি পাওয়া ১৫ জনকে হাসপাতালে আসতে নিষেধ করা হয়। আওয়ামী লীগের সময় নিয়োগ পাওয়ায় নাকি অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। কোনো কারণ ছাড়াই এমন চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। কোম্পানি থেকেও কিছু বলা হয়নি। অব্যাহতির চিঠিটা আদৌ সঠিক কি না তারা জানেন না। অব্যাহতি পাওয়া অনেকেই এখনও হাসপাতালে ডিউটি করছেন।
ওয়ার্ড বয় মেরিনা জানান, ছয় মাসের বেতন বকেয়া ছিল। কোম্পানি পাঁচ মাসের বেতন পরিশোধ করেছে। প্রথমে ১০ হাজার টাকা করে বেতন দিতো, কিন্তু অব্যাহতি দেওয়ার আগে দুই হাজার টাকা বাড়িয়ে ১২ হাজার টাকা করে বেতন দিয়েছে। অথচ শর্তানুযায়ী বেতন দেওয়ার কথা ছিল ১৬ হাজার ১৩০ টাকা করে।
টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সুপার ভাইজার আল আমিন জানান, অব্যাহতি পাওয়া কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ৫ আগস্টের আগে মিছিল-মিটিং করা, চাকরির কথা বলে মানুষের কাছ থেকে টাকা নেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। যে কারণে প্রতিষ্ঠান তাদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়েছে।
টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মাছরাঙ্গা সিকিউরিটি সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেডের ম্যানেজার মো. জিলান জানান, অব্যাহতি পাওয়া কর্মচারীরা আওয়ামী লীগের সময় রাজনৈতিক মিছিল-মিটিং করেছেন। সুপারভাইজারের দেওয়া অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. আব্দুল কুদ্দুস জানান, চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়টি তারা জানেন না। এই বিষয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো চিঠি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হয়নি।