সম্পাদকীয়:
ডেঙ্গুর দাপটে রাজধানীবাসী আতঙ্কের মধ্যে জীবনযাপন করছে। চলতি মাসে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ জুলাই-আগস্ট মাসে যে পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে, তাতে এডিস মশা বাড়তে পারে। এছাড়া বর্ষার মূল মৌসুমের পরে ডেঙ্গুর প্রকোপের নজির এর আগেও রয়েছে।
এখনই মশক নিধনে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া না হলে ডেঙ্গু ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে সবাইকে সতর্ক এবং সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
গত বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন। মৃত্যু হয় ১ হাজার ৭০৫ জনের। গত বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ১৭৬ জন। তবে এই সময় কারোর মৃত্যু হয়নি। চলতি বছর ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৬ হাজার ৩২০ জন, আর মৃত্যু হয়েছে ৫৬ জনের।
কীটতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা জানান, বৃষ্টির কারণে নির্মাণাধীন ভবনের ছাদে, ওয়াসার মিটারের গর্তে জমে থাকা পরিষ্কার পানি, ফুলের টবে জমে থাকা পানি, ফ্রিজের নিচে জমে থাকা পানিতে ডেঙ্গুজ্বরের বাহক এডিস মশার প্রজনন ও বংশ বিস্তার ঘটে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর জুলাই মাস থেকে ডেঙ্গুরোগী ও মৃতের সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। সর্বোচ্চ সংক্রমণ হয়েছিল সেপ্টেম্বরে। দ্বিতীয় সংক্রমণ অক্টোবরে। ২০২২ সালেও ডেঙ্গুর সর্বোচ্চ সংক্রমণ হয় অক্টোবর মাসে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংক্রমণ হয় নভেম্বর মাসে।
২০১৯ সালে দেশে ডেঙ্গুর ভয়াবহ প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে ডেঙ্গু রোগে তখন ১৭৯ জনের মৃত্যু হয়। চিকিৎসকরা বলছেন, যথাযথ নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া অনুসরণ ও জনসচেতনতা সৃষ্টি হলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। এখনো ডেঙ্গুজ্বরের কোনো প্রতিষেধক বের করতে পারেনি সরকার। ডেঙ্গু থেকে রেহাই পেতে হলে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আইইডিসিআরের তথ্য মতে, সাধারণত জুন-জুলাই থেকে শুরু করে অক্টোবর-ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে ডেঙ্গুর বিস্তার থাকে।
সাধারণত মশক নিধন কার্যক্রমের স্থবিরতা, গাইডলাইনের অভাব এবং মানুষের অসচেতনতাই ডেঙ্গুর প্রকোপের জন্য দায়ী। হঠাৎ থেমে থেমে স্বল্পমেয়াদি বৃষ্টিতে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার লার্ভা খুব বেশি মাত্রায় প্রজনন সক্ষমতা পায়। ফলে এডিস মশার বিস্তারও ঘটে বেশি। এ মশা যত বেশি হবে ডেঙ্গুর হারও তত বাড়বে।
উৎস বন্ধ না করতে পারলে ডেঙ্গুর ঝুঁকি থেকেই যাবে। ডেঙ্গুর প্রকোপ চলাকালে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে বলা হয়েছিল। এরপর দুই সিটি মশক নিয়ন্ত্রণে যেসব কার্যক্রম পরিচালনা করেছে, সেগুলো ছিল কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম। এডিস নিধন এবং এডিসের বংশবিস্তার রোধে জোরদার অভিযান পরিচালনা করবে- এ প্রত্যাশা সবার।