আজ- রবিবার | ১৬ নভেম্বর, ২০২৫
১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ | সন্ধ্যা ৬:৩৯
১৬ নভেম্বর, ২০২৫
১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২
১৬ নভেম্বর, ২০২৫, ১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

দীর্ঘস্থায়ী বন্যার থাবায় টাঙ্গাইলের লেবু চাষিরা সর্বশান্ত

বুলবুল মল্লিক:

দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার, নাগরপুর ও মির্জাপুর উপজেলার লেবু চাষে ধস নেমে এসেছে। ফলে তিনটি উপজেলার পাঁচ শতাধিক লেবু চাষি পথে বসার উপক্রম হয়েছে। কেউ কেউ লেবু চাষ ছেড়ে দিনমজুরি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

জানাগেছে, টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলার মধ্যে ছয়টিতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে লেবু চাষ হয়ে থাকে। এরমধ্যে দেলদুয়ার, নাগরপুর ও মির্জাপুর উপজেলা সমতল ভূমি এবং সখীপুর, ঘাটাইল ও মধুপুর উপজেলা পাহাড়ি এলাকা।

জেলার দেলদুয়ার, মির্জাপুর ও মধুপুর উপজেলায় সর্বাধিক লেবু উৎপাদিত হয়। দেলদুয়ার ও মধুপুর উপজেলায় উৎপাদিত লেবু সরকারি প্রতিষ্ঠান ‘হটেক্স ফাউন্ডেশন’র মাধ্যমে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানী হয়ে থাকে।

টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় মোট দুই হাজার ১৫৭ হেক্টর জমিতে লেবু চাষ হয়। জেলায় এ বছর ৪৩ হাজার মেট্রিক টন লেবু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মনে করে, দীর্ঘস্থায়ী বন্যা ও অতিবৃষ্টির কারণে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হচ্ছেনা। সূত্রমতে, শুধুমাত্র দেলদুয়ার উপজেলায়ই ৪০ হেক্টর লেবু বাগান বিনষ্ট হয়ে গেছে।

সরেজমিনে দেলদুয়ার উপজেলার সদর ইউনিয়ন, লাউহাটী, ফাজিলহাটী; নাগরপুর উপজেলার মোকনা, পাকুটিয়া, মামুদনগর; মির্জাপুরের বানাইল, আনাইতারা, ওয়ার্শী, জামুর্কী ইউনিয়নের লেবু বাগানগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বন্যার পানি দীর্ঘদিন থাকায় লেবুগাছের গোড়ায় পঁচন ধরে বাগান সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়ে গেছে। মরে যাওয়া লেবু গাছগুলো বর্তমানে জ্বালানী হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। অধিকাংশ চাষি লেবু বাগান বাদ দিয়ে অন্য ফসল উৎপাদনে যাবেন।

লেবু চাষিদের মতে, সরকারি সহযোগিতা ব্যতিত এ ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া তাদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব।

দেলদুয়ার উপজেলার লাউহাটী ছয়আনী পাড়া গ্রামের লেবু চাষি মো. রেফাজ তালুকদার, ভবানীপুরের মো. কদম আলী, হুমায়ুন কবীর, নাগরপুরের মোকনা ইউনিয়নের কেদারপুরের মো. নাজিম উদ্দিন, মো. আলম মিয়া, মো. ইউসুফ মিয়া সহ অনেকেই জানান, তারা অন্যের জমি তিন বছর মেয়াদী অস্থায়ী বন্দোবস্ত(লিজ) নিয়ে লেবু বাগান করেছিলেন।

লেবু বাগানে দীর্ঘদিন বন্যার পানি জমে থাকায় প্রথমে গাছেরপাতা হলুদ হয়ে ঝড়ে পরেছে। বাধ্য হয়ে তারা গাছের ছোট-বড় সব লেবু তুলে কমদামে বিক্রি করে দিয়েছেন। পরে ধীরে ধীরে গাছগুলোও মরে গেছে। ফলে তারা পুঁজি হারিয়ে সর্বশান্ত হয়েছেন।

লাউহাটী ছয়আনী পাড়া গ্রামের লেবু চাষি হুমায়ুন কবীর জানান, এক সময় তিনি নিঃস্ব ছিলেন। অন্যের লেবু বাগানে দিনমজুরের কাজ করতেন। ধীরে ধীরে টাকা জমিয়ে ১০ বছর আগে তিনি ১.২০ একর ভূমি বন্দোবস্ত(লিজ) নিয়ে লেবু বাগান করেছিলেন।

ওই লেবু বাগানের আয় দিয়ে তিনি পরিবারের খরচ মিটিয়ে দুই ছেলেকে পড়ালেখা করাচ্ছেন। তার বড় ছেলে মো. আল-আমিন এইচএসসি পরীক্ষার্থী, অপর ছেলে মিজানুর রহমান ৭ম শ্রেণির ছাত্র। বন্যায় তার লেবু বাগান পুরোপুরি ধংস হয়ে গেছে।

ফলে ছেলেদের পড়ালেখা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তিনি বর্তমানে এলাকায় দিনমজুরি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

স্থানীয় পুটিয়াজানী বাজার, লাউহাটী বাজার, ফাজিলহাটী বাজার, কেদারপুর বাজারের পাইকারী লেবু ব্যবসায়ী মিনহাজ মিয়া, মো. রাশেদুল আলম, মো. আয়নাল খান সহ অনেকেই জানান, বন্যার পানি আসার সময় বাগান মালিকদের কাছ থেকে তারা কমদামে লেবু কিনে ঢাকা, বরিশাল, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ সহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করেছেন।

বন্যায় বাগান ধংস হওয়ায় বর্তমানে লেবু পাওয়া যাচ্ছেনা। ফলে বাজারে দাম বেড়েছে। আগে যে বস্তা লেবু দুই হাজার টাকায় কিনতেন তা এখন পাঁচ হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে, তারপরও লেবু পাওয়া যাচ্ছেনা।

টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের(খামারবাড়ি) উপ-পরিচালক মো. আহসানুল বাশার জানান, লেবুকে এখনও কৃষি বিভাগ ফসল হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। সেজন্য লেবু খাতে কৃষি মন্ত্রাণালয়ের কোন বরাদ্দ বরাদ্দ নেই।

তিনি জানান, লেবুর চারা রোপণ থেকে ফল উৎপাদন পর্যন্ত সাধারণত তিন বছর সময় লাগে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কমপক্ষে এক বছর সময় লাগতে পারে।

তিনি আরও জানান, এবারের দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত লেবু চাষিদের মাঝে চারা বিতরণের লিখিত প্রস্তাবনা তিনি ঊর্ধতন কর্তপক্ষের কাছে পাঠিয়েছেন।

শেয়ার করুন স্যোশাল মিডিয়াতে

Facebook
Twitter
LinkedIn
X
Print
WhatsApp
Telegram
Skype

সর্বশেষ খবর

এই সম্পর্কিত আরও খবর পড়